ডেস্ক রিপোর্ট : ন্যায্যমূল্যের চাল-গম বিক্রির কর্মসূচিতে দুর্নীতি কমানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য ‘ফিঙ্গার প্রিন্ট’ প্রথা প্রবর্তন করতে যাচ্ছে সরকার। খোলাবাজার (ওএমএস) কর্মসূচিসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে চাল বা গম কিনলেই আঙ্গুলের ছাপ দিতে হবে। এরপর মূল্য পরিশোধ করলে মিলবে চাল বা গম। সহসাই এ ফিঙ্গার প্রিন্ট প্রথা প্রবর্তন করা হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি চাল বা গম বিক্রিতে ফিঙ্গার প্রিন্ট প্রথা প্রবর্তন করলে দুর্নীতি অনেকখানি কমে যাবে। চাল বিক্রি না করে ভুয়া নাম তালিকাভুক্ত করার দিন শেষ হয়ে যাবে। গত ১৩ই মার্চ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল কর্ম-পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সংক্রান্ত এক সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
ওই সভায় খাদ্য সচিব শাহাবুদ্দিন আহমদ সভাপতিত্ব করেন। এতে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, টেস্ট রিলিফ (টিআর), কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) এবং দরিদ্রদের বিভিন্ন সহায়তা কর্মসূচিতে চাল বা গম দেয়া হয়।
পাশাপাশি ওএমএসসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে ন্যায্যমূল্যে চাল বা আটা বিক্রি করা হয়। সরকারি চালের দাম বাজারমূল্যের চেয়ে কম হওয়ায় অনেক সময় চাল বা গম বিতরণের ক্ষেত্রে অভিযোগ উঠে। ওজনে কম দেয়া ছাড়াও অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন ভুয়া ব্যক্তির নাম ও স্বাক্ষর এন্ট্রি করা হয়। এসব বিষয় সামনে আসার পরই খাদ্য অধিদপ্তর থেকে ফিঙ্গার প্রিন্ট সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়। ওই প্রস্তাবই গ্রহণ করেছে খাদ্য বিভাগ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ন্যায্যমূল্যের চালের সুবিধাভোগীদের জন্য শর্ট টেক্সট মেসেজ (এসএমএস) ব্যবস্থা প্রবর্তন করার চিন্তাভাবনা চলছে।
এর মাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন খাদ্য কর্মসূচি সম্পর্কে সুবিধাভোগীরা জানতে পারবেন। এ ছাড়া ওজনে কম দেয়া ঠেকাতে প্যাকেটজাত আটা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এদিকে টিআর ও কাবিটাসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে দুর্নীতির খবর অনেক পুরনো। অনেক প্রকল্পের বরাদ্দের খবর সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী জানে না। যেসব স্থানে কাজ হয়েছে তা নামমাত্র। নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিটি প্রকল্পের শুরু এবং শেষ প্রান্তে কাজের ধরন, বরাদ্দ ও প্রকল্প কমিটির নাম সংবলিত সাইনবোর্ড থাকার কথা থাকলেও কোথাও এর কোনো চিহ্ন নেই। এ জন্য গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের কর্মসূচি টেস্ট রিলিফ (টিআর) এবং কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) কর্মসূচির বিশেষ বরাদ্দ বাতিল করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এখন থেকে এসব কর্মসূচির অর্থ দিয়ে গৃহহীন পরিবারের জন্য ঘর নির্মাণ করে দেয়া হবে।
যার নাম দেয়া হয়েছে ‘দুর্যোগ সহনীয় ঘর নির্মাণ’। সহসাই এর কার্যক্রম শুরু হবে। মূলত টিআর ও কাবিটা বরাদ্দ নিয়ে নানা সময়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠায় এসব বিশেষ বরাদ্দ বাতিলের চিন্তাভাবনা করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর টিআর খাতে ২০০ কোটি টাকা এবং কাবিটা খাতে একশ’ কোটি টাকা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে বরাদ্দ দেয় অর্থ বিভাগ। তাই এমপিদের বরাবরে টিআর ও কাবিটা বরাদ্দের আদেশ বাতিল হলে ৬৪ জেলায় ৬৪ হাজার ঘর নির্মাণ করে দেবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে এ বছরের জুনের মধ্যে প্রতি জেলায় পাঁচশ’টি অর্থাৎ ৬৪ জেলায় ৩২ হাজার ঘর নির্মাণ করে দেয়া হবে। এরপর ডিসেম্বরের মধ্যে ৬৪ জেলায় আরো ৩২ হাজার সেমিপাকা ঘর নির্মাণ করে দেয়া হবে। সব মিলিয়ে এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ৬৪ জেলায় ৬৪ হাজার ঘর নির্মাণ করে দেয়া হবে। তিন থেকে চারশ’ বর্গফুটের সেমিপাকা প্রতিটি ঘরে দুইটি রুম, একটি বাথরুম ও একটি রান্নাঘর থাকবে। সহসাই সরকারের এ কার্যক্রম শুরু হবে বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র : মানবজমিন।
আপনার মতামত লিখুন :