মনজুরুল আহসান খান : সবার মধ্যে একটা ধারণা ছিলো ২৪ মার্চের মধ্যেই একটি মীমাংসা হবে। সেই ধারণাটা ইয়াহিয়া খান ও আমাদের নেতাদের পক্ষ থেকে কমবেশি দেওয়া হচ্ছিলো। কিন্তু ২৫ মার্চের বিকেল থেকেই পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়ে যায়। তখন সবার মধ্যে একটা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে যে, ক্যান্টনমেন্ট থেকে পাকিস্তানি বাহিনী হামলা করবে। এই যখন পরিস্থিত তখন আমি হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ছিলাম।
আমাদের সৈনিকরা এসে বললেন যে, ভুট্টো বেরিয়ে গেছে পেছনের দরজা দিয়ে আর ইয়াহিয়া খান গাড়ির লাইট কমিয়ে পার্কি লাইট জ্বালিয়ে এয়াপোর্টের দিকে চলে গেছে। পাকিস্তানি আর্মিদের একটা কন্টিনজেন্ট চোখে পড়েছে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল থেকে, সেখানে বাংলাদেশের পতাকা উড়ছিলো। সেটাকে নামিয়ে পুড়িয়ে ফেলে। ইতোমধ্যেই বেইলী রোডসহ আশপাশের রাস্তাগুলোয় বেরিকেট দেওয়া শুরু হয়েছে। আমি মোটরসাইকেল ব্যবহার করে বেরিকেটের ওপর দিয়ে কোনোরকমে বাসায় পৌঁছালাম।
আমাদের বাসা শান্তিনগর চ্যামেলী বাগে, রাজারবাগ পুলিশ লাইনের পাশে। বাসায় পৌঁছানোর পর আর্টিলারি ফায়ার হতে শুরু হলো রাজারবাগ পুলিশ লাইনে। আর্টিলারি সেল, গুলি এসে আমাদের বাসায় পড়তে লাগলো। ওই রাতেই অনেককে হত্যা করা হলো। অনেকেই সেখান থেকে অস্ত্রসহ পালিয়ে এলো। চ্যামেলীবাগের বিভিন্ন বাসায় আশ্রয় নিলো। আমরা অনেকেই তখন পুলিশের কাছ থেকে রাইফেল নিয়ে পাকিস্তানি আর্মিদের পাল্টা আক্রমণ, গোলাগুলি চালালাম।
সব জেলা থেকে গণহত্যার খবরাখবর পেতে থাকলো। এরপর কারফিউ জারি হলো। কারফিউর পরে আমি এবং আমার ছোট দুই ভাই বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম। মুক্তিযুদ্ধ শুরু করলাম। আমাদের কমিউনিস্ট পার্টি থেকে তখন নির্দেশ দেওয়া হলো, সশস্ত্র যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। সেই মোতাবেক আমরা যুদ্ধে নেমে গেলাম।
পরিচিতি : মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনীতিবিদ
আপনার মতামত লিখুন :