শিরোনাম
◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২৫ মার্চ, ২০১৯, ০৪:৩০ সকাল
আপডেট : ২৫ মার্চ, ২০১৯, ০৪:৩০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সড়ক ও পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফেরানোর চ্যালেঞ্জ

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী : বাংলাদেশের সড়ক এবং পরিবহন খাতে দীর্ঘদিনের নানা ধরনের অনিয়ম গেলো কয়েক বছরে এসে মস্তবড় বিস্ফোরণের সৃষ্টি করেছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে দেশে অর্থনৈতিক বিকাশের যে গতিধারা সৃষ্টি হয়েছে তার অনিবার্য প্রভাব পড়েছে সড়ক এবং যানবাহনের ক্ষেত্রে। দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পরিবহন যাতায়াতের কাক্সিক্ষত সুযোগ-সুবিধা খুব দ্রুত সম্প্রসারণ করা মোটেও সহজ কাজ নয়। যদিও সরকার গত দশ বছরে এ খাতে নতুন নতুন সড়ক প্রশস্তকরণে যথেষ্ট উদ্যোগ নিয়েছিলো।

পরিবহন খাতেও ব্যাপক সংখ্যক গাড়ি এসে যুক্ত হয়। কিন্তু দেশে ক্রমবর্ধমান চাহিদার চাইতে রাস্তার প্রশস্তকরণ, নতুন নতুন যানবাহন পরিচালনার ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনীয় লোকবল দক্ষ জনশক্তি এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ ঘটানো খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষত শহরগুলোতে বিকাশমান মধ্যবিত্ত উচ্চবিত্তের চাহিদা মোতাবেক দক্ষ, অভিজ্ঞ, গাড়িচালক সৃষ্টি হয়নি। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে আমাদের দেশে গাড়িচালকের পেশাটি শুরু থেকেই অপেক্ষাকৃত নিরক্ষর কিংবা কম লেখাপড়া জানা মানুষদের বলে বিবেচিত হয়েছে। আবার পরিবহন খাতে নানা ধরনের অব্যবস্থাপনার সুযোগ নিয়ে স্বাধীনতা উত্তরকালে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রভাবে বিভিন্ন ধরনের শ্রমিক ও মালিক গোষ্ঠীর উদ্ভব ঘটেছে।

তাদের নেতৃত্বাধীন নানা ধরনের সংগঠন ও ফেডারেশনের কর্তৃত্ব ক্রিয়াশীল হয়েছে। এর সঙ্গে প্রশাসনের একটি অংশ এদের পৃষ্ঠপোষকতায় যুক্ত ছিলো। ফলে গত ২০-৩০ বছর ধরে বাংলাদেশে পরিবহন খাতকে নিয়ে গোটা সমাজে এক ধরনের বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে। তাদের হাতে সরকার এবং সাধারণ মানুষজন অতীতে জিম্মি হওয়ার অসংখ্য নজির স্থাপিত হয়েছে। পরিবহন খাতে এসব ক্রিয়াশীল স্বার্থবাদী গোষ্ঠী এতোটাই শক্তি অর্জন করেছে যে, সরকার চাইলেও এদের সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। যেকোনো উদ্যোগ নেয়া হলেই হয় মালিক পক্ষ নতুবা শ্রমিক পক্ষ কর্মবিরতি ও ধর্মঘটের আয়োজন করতো। ফলে দেশব্যাপী সাধারণ মানুষের যাতায়াতে অনেক দুর্ভোগ নেমে আসতো। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সকলেই অসহায় হয়ে পড়তো। এর ফলে পরিবহন খাতে অনিয়ম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়।

রাষ্ট্র ও সমাজ পরিবহন খাতের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে। অথচ পরিবহন খাতে প্রয়োজন ছিলো শৃঙ্খলা, নিয়মকানুন ও আইনের বাস্তবায়নের মাধ্যমে দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরি করা। সেটি করা গেলে বাংলাদেশে লাখ লাখ শিক্ষিত তরুণ এ খাতে যুক্ত হতে পারতো। খাতটিও যুগের চাহিদা মোতাবেক বিকশিত ও আধুনিক হওয়ার সুযোগ পেতো। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বাংলাদেশে সরকার ও যাত্রী সাধারণকে জিম্মি করে পরিবহন খাত অবৈধ লাইসেন্স, রোড পারমিটবিহীন চলাচল, নানা নামে নানা ধরনের কোম্পানি গঠন ইত্যাদিকে যতো বেশি অবাধে চলতে দিয়েছে ততো এর ভেতরগত সমস্যা বৃদ্ধি পেয়েছেÑযার প্রতিক্রিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনা লাগামহীনভাবে বেড়ে চলছে। মানুষের নিরাপদ সড়ক যাতায়াতের সুবিধা চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে, সড়ক ব্যবস্থাপনায় ট্রাফিক উদ্যোগ কাজে আসছে না।

মানুষের ক্ষোভ বৃদ্ধি পাচ্ছে, সরকারের উদ্যোগও খুব ধীরগতিতে এগোচ্ছে। কিন্তু সড়কপথে যানবাহন ও যাত্রীর যাতায়াত ব্যাপকভাবে বাড়ার বাস্তবতায় অনিয়মের নৈরাজ্যও নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। তবে সময় বদলেছে। যতো অনিয়ম, নৈরাজ্য আর অব্যবস্থাপনার মধ্যেই পরিবহন খাত এতোদিন ক্রিয়াশীল থাকুক না কেন এখন তাতে আইনবিধি, প্রশিক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন করার কোনো বিকল্প নেই। সরকার কিছুটা রয়েসয়ে হলেও পরিবহন খাতে বিরাজমান অবস্থার পরিবর্তন সাধনে অগ্রসর হচ্ছে। সেখানে থেমে থাকার কোনো অবকাশ নেই। মালিক পক্ষকেও এই পরিবর্তনের ধারায় যুক্ত হতেই হবে। নতুবা তাদের ব্যবসাও অগ্রসর হওয়ার তেমন কোনো বাস্তবতা অবশিষ্ট থাকবে না।

তাদেরও নিয়মে আসতে হবে। দক্ষ, অভিজ্ঞ, চালক, সহকারী এবং আধুনিক চিন্তাধারার ব্যবস্থাপক গোষ্ঠীর সহায়তা নিতেই হবে। সরকারের ট্রাফিক বিভাগকে এখন নানা সমালোচনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। কিন্তু সবকিছু সামলে নিয়ে ট্রাফিক ব্যবস্থারও আধুনিকায়ন ঘটাতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্ব দিতে হবে জনসাধারণকে। যারা রাস্তা পারাপার এবং যানবাহনে চলাচল করেন তাদেরও নিয়ম শৃঙ্খলায় আসতে হবে। এসব কাজগুলো সরকারের জন্য বেশ বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। কিন্তু বর্তমান সরকার আগের মেয়াদগুলোতে অনেক বড় বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছে। এই চ্যালেঞ্জটিও তাদের মোকাবেলা করতেই হবে। বাংলাদেশের উন্নয়ন গতিধারা অব্যাহত রাখার অন্যতম নিয়ামক শক্তি এখন নির্ভর করছে সড়ক ও যানবাহনের গতি সচল রাখার উপর, নিরাপদ রাখার উপর।
লেখক : শিক্ষাবিদ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়