শিরোনাম
◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে

প্রকাশিত : ২৪ মার্চ, ২০১৯, ০৩:১৩ রাত
আপডেট : ২৪ মার্চ, ২০১৯, ০৩:১৩ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বায়ু দূষণে বড় ধরনের স্বাস্থ্যহানির শিকার নগরবাসী ও নাগরিক শিশুরা

ডা. জাকির হোসেন : বেচেঁ থাকার জন্য প্রকৃতির অশেষ দান হলো বায়ু। বাতাসের অক্সিজেন প্রশ্বাসের মাধ্যমে গ্রহন করে প্রতিটি প্রাণি বেঁচে থাকার শক্তি পায়। গ্রামের মানুষরা ক্ষেতে-খামারে তাদের কর্মব্যস্ত সময়ে অন্তত নির্মল বাতাস গ্রহণের সুযোগ পেয়ে থাকেন। শহরের মানুষ গ্রামের মানুষ থেকে এখন অধিক পরিশ্রমী। যানজটের এই শহরে তাকে ভোরে বাসা ছেড়ে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে হয় এবং বাইরের কাজ শেষ করে কমপক্ষে রাত দশটার আগে ঘরে ফেরা কষ্টসাধ্য। কিন্তু রাজধানীর কর্মমুখী এই মানুষটির দিনে-রাতে কখনই মিলছে না একটুখানি নির্মল বায়ু। বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় নির্মল অক্সিজেনের অভাবে সে অল্পতে হারিয়ে ফেলছে জীবনী শক্তি, হারিয়ে ফেলছে সন্তান প্রজননের সক্ষমতা, অল্প বয়সী কর্মজীবী নারীদের বরণ করতে হচ্ছে বন্ধ্যাত্ব।

এতো কিছুর পরের এই নগরে মানুষ জীবন যুদ্ধে লিপ্ত শুধু মাত্র একটুখানি ভালোভাবে বেঁচে থাকার তাগিদে কিংবা প্রিয় সন্তানদের মুখে একমুঠো খাবার তুলে দেয়ার আশায় নতুবা ঘরের প্রিয়তমার মিষ্টিমুখে একটুখানি হাসি ফোটাতে। এই যুদ্ধে জয়ী হতে তার ঢাকার নাগরিক বাধা যেমন যানজট, পরিবহনের অভাব, অতিরিক্ত পরিবহনের বাড়া, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সাথে সে পেরে উঠলেও বায়ু দূষণের হাত থেকে নিজেকে কোনোভাবে রেহাই করতে পারছে না। কিছুদিন আগে ইউরোপের হার্ট জার্নাল প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ধূমপানে যতো মানুষের মৃত্যু হয় তার চেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে দূষিত বায়ু প্রশ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণের ফলে। তবে সবচেয়ে হতাশার কথা হচ্ছে এই দূষণের শিকার হয়ে প্রায় একটি জেনারেশনই দুর্বল স্বাস্থ্য নিয়ে এই শহরে জন্মগ্রহণ করছে এবং বড় হচ্ছে। হ্যাঁ বলছি একটি অনাগত ভবিষ্যতের কথা যে ভবিষ্যতের ধারক ও বাহক হবে এই বিকলাঙ্গ শিশুরা।

অতি সম্প্রতি ঢাকার বায়ু দূষণের মাত্রা এতো বেশি বেড়ে গেছে যে, তা নির্ণয়ের জন্য কোনো যন্ত্রপাতির প্রয়োজন পড়ে না। খানিকক্ষণ রাস্তায় চলাফেরা করার পর পথচারীর দম একেবারে বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে পড়ে। এই সমস্যায় বেশি পড়তে হচ্ছে যেসব কর্মজীবী কিংবা স্কুলগামী শিশুরা ফুসফুসের নানা রোগে আক্রান্ত তাদের। যারা ফুসফুসের বিভিন্ন রোগ যেমন অ্যাজমা, ব্রংকিওলাইটিস, ব্রংকাইটিস ও সিওপিডি ইত্যাদিতে আক্রান্ত তাদের এই দূষণের ফলে আরো বেশি মাত্রায় স্বাস্থ্যহানির শিকার হতে হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে কর্মজীবীর কর্মঘণ্টা, বন্ধ হচ্ছে সংসারের আয় রোজগার, ঘন ঘন অসুস্থ হচ্ছে পরিবারের আদরের মধ্যমণি ছোট শিশুটি, বাড়ছে অসুস্থ শিশুটিকে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ছোটাছুটির হার।

কারণ শিশুদের চিকিৎসা একটি জটিল প্রক্রিয়া। রাজধানীর সকল হাসপাতালে শিশুদের চিকিৎসা প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কিংবা লোকবল কোনোটিই নেই।

অতীতে ঢাকা শহরে মূলত যান্ত্রিক উৎস থেকে সৃষ্টি হওয়া ধোঁয়া ও ধুলা থেকে ধূলিকণা বাতাসে ক্ষুদ্র কণাগুলো ছড়িয়ে পড়ে ঢাকার বাতাস দূষিত হতো। কিন্তু বর্তমানে মূলত ঢাকার চারপাশে গড়ে উঠা ইটভাটা, শিল্পকারখানার ধোঁয়া, যানবাহনের ধোঁয়া এবং সড়ক ও ভবন নির্মাণসামগ্রী থেকে তৈরি ধুলায় এই ধূলিকণাগুলো সৃষ্টি হয়ে বাতাসের সঙ্গে মিশে বাতাসকে মহামারী আকারে দূষিত করছে। প্রায় সমগ্র রাজধানীজুড়েই চলছে অপরিকল্পিত সড়ক উন্নয়ন ও মেরামতের কাজ। সেই সঙ্গে চলছে মেট্রোরেলের কাজ।

এসব উন্নয়নমূলক কাজ করতে গিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো একেবারেই কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করছে না। তারা রাতের বেলা কাজ না করে ভোর থেকে ধীরগতিতে কাজ করে, নির্মাণ সামগ্রীগুলো সবসময় পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখা কিংবা বড় চট দিয়ে ঢেকে রাখার কথা থাকলেও তারা এসব ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। যার খেসারত দিতে হচ্ছে আজকের নগররাসীর এবং আগামীর বিকলাঙ্গ ভবিষ্যতের কর্ণধার বিকলাঙ্গ শিশুদের। লেখক : চিকিৎসক ও কলামিস্ট

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়