শিরোনাম
◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২৪ মার্চ, ২০১৯, ০১:২২ রাত
আপডেট : ২৪ মার্চ, ২০১৯, ০১:২২ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

স্টিকারে সরকারি প্রতীক ব্যবহার করে দশ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ

মাহফুজ নান্টু, কুমিল্লা প্রতিনিধি: কুমিল্লা মহানগরীসহ আশেপাশের সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রশাসননের অনুমতি ছাড়াই প্রভিটা ফ্রিডম গ্রুপ লি: নামে একটি বেসরকারী সংস্থা সরকারী প্রতীক ব্যবহৃত স্টিকার দশ টাকা করে বিক্রির মাধ্যমে দশ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে এ বিষয়ে কুমিল্লা জেলা প্রশাসন জেলা প্রাথমিক-মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস কিছুই জানে না বলে জানা যায়। অথচ ২০১৮ সালের ১৫ ডিসেম্বর থেকে সংগঠনটি বিভিন্ন সরকারী দফতরের প্রতীক ব্যবহার করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন প্রতারণা করে আসছে। তবে দীর্ঘ দিন ধরে একটি সংস্থা এমন প্রতারনামূলক কার্যক্রম চালিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিলেও বিষয়টি জানেন না কুমিল্লা জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

কুমিল্লা মহানগরীর বিভিন্ন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে তাদেরকে ফোন করে জানানো হয় “যে মুখে মা-সে সে মুখে মাদক ধুমপান! বাল্য বিয়ে না না না” এমন লেখা সম্বলিত লিফলেট এবং স্টিকার শিক্ষার্থীদের মাঝে বিক্রি করতে। প্রভিটা ফ্রিডম নামের সংস্থাটি একটি মূল প্রতীক তৈরী করে এবং এর নিচে ছোট ছোট করে শিক্ষা মন্ত্রনালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের প্রতীকসহ আরো মোট ছয়টি সরকারী প্রতীক ব্যবহার করে যা অস্পষ্ট।

বাংলাদেশ স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের প্রতীক ব্যবহার করে কথিত সামাজিক সংস্থাটি তাদের কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও এ বিষয়ে কিছুই জানেন না জেলা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন ডা: মজিবুর রহমান জানান, আমরা এ বিষয়ে কিছুই জানি না। কারা কোন স্বার্থে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের লোগো ব্যবহার করে এমন কাজ করছে তা আমাদের কাছে অস্পষ্ট।

প্রতীকটির সাথে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের একটি চিঠি পাওয়া গেছে, যাতে লেখা রয়েছে সংস্থাটিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সার্বিক নিরাপত্তা প্রদানের বিষয়ে নিদের্শনা দেয়া রয়েছে। তবে চিঠির কোথাও কোন অনুমোদন বা সরকারী ভাবে কোন বিজ্ঞপ্তি দেয়া ছিল না কিংবা স্টিকার শুভেচ্ছা মূল্যের বিনিময়ে বিক্রির কথাও উল্লেখ নেই। তবুও প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে এ চিঠি দেখিয়ে স্টিকার ও লিফলেট বিক্রি করে। এ বিষয়ে কুমিল্লা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আনোয়ার হোসেন সিদ্দিকিও একই কথা জানালেন। বিষয়টি সর্ম্পকে তিনিও অবগত নন।

কুমিল্লা মর্ডাণ স্কুলের প্রধান শিক্ষকা মমতাজ বেগম, নবাব ফয়জুন্নেচ্ছো স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা রোখসানা ফেরদৌস মজুমদার, জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা রাশেদা আক্তার, নগরীর বাদুড়তলা স্কুলের ওয়াই ডব্লিউ সি এ স্কুলসহ অন্তত আরো কুড়িজন প্রধান শিক্ষক জানান, গত ফেব্রুয়ারী মাসে উপজেলা অফিস থেকে জানানো হয়, তাদের স্কুলের নামে একটি চিঠি ও বিশেষ কিছু স্টিকার এবং লিফলেট বরাদ্দ করা হয়েছে। এই স্টিকার গুলো যেন স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা এসে নিয়ে যায়।

তবে প্রভিটা ফ্রিডম গ্রুপ নামের কথিত এ সংগঠনের পক্ষে একটি আবেদনপত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠিয়েছে যা আমাদের সময়.কমের হাতে আসে। যেখানে লেখা আছে মানবিক কারণে বিনামূল্যে মাদক বিরোধী লিফলেট বিতরণ, পরে আবার লেখা আছে সৌজন্য মূল্যৈ ১০ টাকা মূল্যের স্টিকার প্রেরণ প্রসঙ্গে। তবে শিক্ষা মন্ত্রনালয় সংগঠনটির নিরাপত্তা দেয়ার চিঠি ইস্যু করেছে স্টিকার বিক্রির জন্য নয়। অথচ ফিড্রম গ্রুফটি এই চিঠি ব্যবহার করে উপজেলা শিক্ষা অফিসকে থেকে হাতিয়ে নেয় দশ লক্ষাধিক টাকা।

এদিকে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর বাবা-মা’রা জানান, জনসচেতনার লক্ষ্যে সরকার বিনামূল্য এমন স্টিকার বিতরণ করে। এখানে টাকা দিয়ে নিতে হবে কেন? অথবা কোন সামাজিক সংগঠন যদি জনস্বার্থে এমন কাজ করে তাহলে তারা বিনামূল্যে করতে পারতো। টাকার বিনিময়ে কেন। আর অনেকে বলেন আপাত দৃষ্টিতে শুধু মাত্র দশ টাকা। কিন্তু এক লাখ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ১০ টাকা করে নিলে কত টাকা হয় একবার ভেবে দেখেন। আর এত টাকা আসলে সংগঠনের নামে কোথায় যাচ্ছে ? সংগঠনটি আদৌ কি সামাজিক কাজ করে এমন প্রশ্ন উঠেছে সর্বত্র।

প্রভিটা ফ্রিডম গ্রুপ লি: গ্রুপের পেইডে কো-অর্ডিনেটর হিসেবে স্বাক্ষর করা ডা:আনোয়ার হোসেন ও সংগঠনের মুঠোফোন নম্বর ০১৯১১১১০২৫৪, ০১৯১১১১০২৬১,০১৯১১১১৮৭৬৫,০১৯১১৭৬২৪৩১,০১৯১১১১০১৬৪ গুলোতে কল করে কাউকে পাওয়া যায় নি। সবগুলো মুঠোফোনই বন্ধ ছিলো।

তবে এ বিষয়টি নিয়ে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো:আবুল ফজল মীর জানান, সামাজিক সচেতনতামূল স্টিকার বিতরণ কিংবা সৌজন্য মূল্যে বিক্রির জন্য কোন সংস্থাকেই অনুমতি দেয়া হয় নি।

তবে বিষয়টি নিয়ে অনেক অভিভাবক বলছেন, হয়তো আপাত দৃষ্টিতে স্টিকারটি ভালোই মনে হচ্ছে, তবে সরকারের অনুমতি ছাড়াই এমন স্টিকার ও লিফলেট বিক্রি করার বিষয়টি নিয়ে কুমিল্লার জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। অভিভাবকরা বলছেন যেখানে সরকার বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার সুযোগ করে দিয়েছে সেখানে সামাজিক সচেতনতার নামে এমন স্টিকার ও লিফলেট বিক্রি করার আসল উদ্দেশ্য কি? কেউ বলছেন এটা হয়তো একটা প্রতারণার ফাঁদ, কেউ বলছেন হতে এটা কোন নিষিদ্ধ গোষ্ঠীর অর্থ সংগ্রহের হাতিয়ার।

তবে কিভাবে উপজেলা অফিস থেকে সরকার অনুমতি ব্যতিত এমন স্টিকার ও লিফলেট কেন কিংবা কারা উপজেলা থেকে স্কুলগুলোতে সরবরাহ করেছে এ বিষয়েও জানেন না জেলা ও উপজেলার শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা। অথচ বিদ্যালয় প্রধানদের কথা উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে নির্দেশ পেয়ে আমরা কথিত বরাদ্দের স্টিকার সংগ্রহ করে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করি। ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্কুল থেকে পাওয়া তথ্য মোতাবেক সংস্থাটি ১০ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

তবে সরকার অনুমতি ব্যতিত স্টিকার এর বিষয়টি সর্ম্পকে আদর্শ সদর উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ইকবাল হাসান জানান, তিনি নিজেও জানেন না কে বা কারা উনার অফিস থেকে স্টিকার ও লিফলেট বিতরণ করেছে। বিষয়টি জানার পর তিনি স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের এমন স্টিকার ও লিফলেট শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ কিংবা বিক্রি বন্ধ করার নির্দেশ দেন।

এ বিষয়টি কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি)’র কাছে এমন কোন প্রিডম সামাজিক সংগঠন সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছয়টি মন্ত্রনালয়ের লোগো ব্যবহার করা হয়েছে যা সম্পূর্ণ রুপে বেআইনী কাজ। বিতরণের আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরাও জানে না বলেও জানা যায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়