প্রভাষ আমিন : ১. ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন নিয়ে অনেক কলঙ্কজনক ঘটনা ঘটেছে। এই নির্বাচন নিয়ে সবচেয়ে বড় পারসেপশন হলো, আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরে রাখা। অভিনব অভিযোগ সন্দেহ নেই। কারণ এর আগে কখনো এ ধরনের অভিযোগ শোনা যায়নি, এভাবে কেউ ভাবেইনি। তবে আমার বিবেচনায় ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের সবচেয়ে বড় কলঙ্কজনক ঘটনাটি নির্বাচনের আগের রাতে নয়, ঘটেছে নির্বাচনের রাতে, নোয়াখালীর সুবর্ণচরে। নৌকা মার্কায় ভোট না দেয়ার অপরাধে এক গৃহবধূকে তার স্বামী-সন্তানের সামনেই দুর্বৃত্তরা গণধর্ষণ করে। দুর্বৃত্তরা সবাই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ইউপি সদস্য রুহুল আমিনের লোক। এ ঘটনায় দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠলে দলনেতা রুহুল আমিনসহ ধর্ষকদের গ্রেপ্তার করা হয়। কখনো কখনো বাংলাদেশে গ্রেপ্তার মানে অপরাধীকে বাঁচিয়ে দেয়া। তাৎক্ষণিক ক্ষোভ থেকে আড়াল করে রাখা। আলোচনা থেমে গেলে অপরাধী চুপে চাপে জামিনে বেরিয়ে যাবে। বেরিয়ে গিয়ে সে আবার ধর্ষণ করতে পারে, বাদিকে হুমকি দিতে পারে। ঘটনার তিন মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই দেশজুড়ে তোলপাড় তোলা সুবর্ণচরে গণধর্ষণ মামলার মূল হোতা রুহুল আমিন এক বছরের জামিন পেয়ে গেছে। আরো বিস্ময়কর, জামিন দিয়েছেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। নিশ্চয়ই পুলিশ মামলাটি এমনভাবে সাজিয়েছে, যাতে আইনের ফাঁক গলে জামিন পেয়ে যেতে পারে গণধর্ষণ মামলার আসামীও। আমি মাননীয় প্রধান বিচারপতির কাছে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি, আইনের সেই ফাঁক যেন বন্ধ করা হয় এবং রুহুল আমিনের জামিন যেন বাতিল করা হয়।
২. গণধর্ষণ মামলার মূল হোতার জামিন হলেও ভেরিফিকেশনের জন্য বিচারপতির স্ত্রীর কাছে দুই হাজার টাকা ঘুষ চাওয়ার অপরাধে পুলিশের বিশেষ শাখার এএসআই সাদেকুল ইসলামের দুই বছর কারাদ- হয়েছে। টাকার অঙ্ক যাই হোক, বাংলাদেশের আইনে ঘুষ চাওয়া এবং খাওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই সেই পুলিশের কারাদণ্ড হওয়াটা আইনের শাসনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, দুই হাজার টাকা ঘুষ চাইলে যদি দুই বছরের জেল হয়; তাহলে বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষকে কোটি কোটি বছর জেলে থাকতে হবে। পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য এক/দুই হাজার টাকা নেয়াটা এখন প্রায় জায়েজ, সার্ভিস চার্জের মতো হয়ে গেছে। আগেও অনেকবার বলেছি, বাংলাদেশে পুলিশ ভেরিফিকেশনর ব্যবস্থাটা তুলে দেয়া দরকার। কোনো ঝামেলা না থাকলেও আপনাকে টাকা দিতে হবে। ঝামেলা থাকলে টাকার অঙ্ক বাড়বে। যতো ঝামেলা, ততো টাকা। টাকা থাকলে রোহিঙ্গারাও ভেরিফাইড হয়ে যান। বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে গিয়ে নানান অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে রোহিঙ্গারা। বদনাম হয় বাংলাদেশের। আচ্ছা, বিচারপতির স্ত্রীর কাছে ঘুষ চেয়েছে বলে না হয় সাদেকুল ধরা খেয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে ঘুষ চাইলে তিনি কী করবেন?
চুনোপুটি সাদেকুল ইসলামের কারাদণ্ডে আমার আপত্তি নেই। সাথে চাই হাজার কোটি লুটপাট করেও যেসব রাঘব বোয়াল দিব্বি ঘুরে বেড়াচ্ছে,তাদেরকেও যেন ধরা হয়।
লেখক: হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ
আপনার মতামত লিখুন :