শিরোনাম
◈ চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ১২ ইউনিট ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২২ মার্চ, ২০১৯, ০৪:৫০ সকাল
আপডেট : ২২ মার্চ, ২০১৯, ০৪:৫০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আমি না থাকলে জগতের অস্তিত্ব স্বীকার করবে কে?

‘আমি আছি’। কোথায় আছি? জগতে। আমার অস্তিত্ব স্বীকার করে নিলে জগতের অস্তিত্বও স্বীকার করে নিতে হয়। জগতের অস্তিত্ব স্বীকার করে নিলেও আমার অস্তিত্ব স্বীকার করে নিতে হয়। আমি না থাকলে জগতের অস্তিত্ব স্বীকার করবে কে? জগৎ কি? আমি ছাড়া যা কিছু আছে সবই জগৎ। এখানে ‘আমি’ মানে আপন অস্তিত্বের সেই অংশ যা দেখে, শোনে, চিন্তা করে, অনুভব করে, ইচ্ছা করে। দেখা, শোনা, অনুভব করা, ইচ্ছা করা ইত্যাদির সম্মিলন ও নিরন্তরতাকে যদি চৈতন্য বলা যায়, তবে আমিই সেই চৈতন্য। তাই সত্য, যাতে কোনো সন্দেহ নেই। আমি আছি, এতে কোনো সন্দেহ নেই। অতএব, আমি সত্য। পরম সত্য বলে যদি কিছু থাকে, তবে তা ‘আমি’। এরপর সত্য হলো জগৎ। জগৎ সত্য কেন? আমি সত্য বলেই জগৎ সত্য। জগতের আলো, বাতাস, জল ছাড়া আমি নেই, তাই জগৎ সত্য। জগতের সঙ্গে দেয়া-নেয়াই জীবন। এই দেয়া-নেয়ার মধ্যে যেসব ঘাত-প্রতিঘাত, ভাব-প্রতিভাব, মান-অভিমান উৎপন্ন হয়, তা-ই তো জীবনের গল্প। জগতের সঙ্গে দেয়া-নেয়া শেষ তো জীবন শেষ। জগতের সঙ্গে আমার ততোটুকুই সংযোগ যতোটুকু জীবনের জন্য প্রয়োজন। জগতের সামান্যই আমি জানি। তোমার দেহটি আমি দেখি। তোমার কথা শুনি। এই দেখাশোনার মাধ্যমেই অনুমান করে নেই তোমার ভেতরে কী আছে। তোমার মনের খবর আমি জানি না, জানা সম্ভবও না। নিজের মনের খবরই জানি না। আমি নিজেই কখন কী করে বসি, তা আগে থেকে অনুমান করতে পারি না। তাই তোমার সাথে আমার সম্পর্ক আছে বলা ঠিক হবে না। আমি তোমাকে লাইক দেই, তুমিও আমাকে লাইক দাও। এটুকুই তোমার সাথে আমার সংযোগ। তোমার সঙ্গে আমার এতো দূরত্ব যে, একে বন্ধুত্ব বললে শব্দের প্রতি অবিচার করা হয়। তোমার সঙ্গে আমার সংযোগ মাধ্যম কী? শব্দ। কিছু শব্দ আমার কাছ থেকে তোমার কাছে যায়, কিছু শব্দ তোমার কাছ থেকে আমার কাছে আসে। শব্দগুলোর মধ্যে ঘ্রাণ নেই, স্পর্শ নেই। কিন্তু এই শব্দের পরম্পরা থেকেই আমি বুঝে নেই তোমার চিন্তার পরম্পরা। সঠিকও বুঝি, ভুলও বুঝি।

মাঝে মধ্যে আকাশের ঠিকানায় আমার চৈতন্য ধাক্কা লাগে তোমার চৈতন্যের সঙ্গে। ঐ ধাক্কাতেই মস্তিষ্ক আন্দোলিত হয়, হৃদয় স্পন্দিত হয়। তোমার সঙ্গে বাস্তব সংযোগের ইচ্ছা জাগে। তোমাকে নিয়ে ভাবী। তোমার অস্তিত্ব অনুভব করি। এটি কী সত্য? কেন সত্য নয়? অনুভূতিটি আমার, আমার চৈতন্যে তোমার তরঙ্গ, সত্য হবে না কেন? হোক কল্পনা, কল্পনা কী মিথ্যা? কল্পনা মিথ্যা হলে তো জীবনই মিথ্যা। কল্পনার উপর নির্ভর করলে অনেক সময় ঠকতে হয় বটে, কিন্তু উপায় কী? তোমার ভেতরের খবর জানা তো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমার ভেতরের খবরও তোমার পক্ষে জানা সম্ভব নয়। আমাদের এই জীবনটা আসলে সাংকেতিক জীবন, শব্দের জীবন, কল্পনার জীবন। কল্পনায় আমরা একটি জগৎ রচনা করি এবং বাস করি স্বরচিত জগতে। তুমি যদি ভূতের গল্প রচনা করো, তবে নিজে ভয় পাবে, মানুষকেও ভয় দেখাবে। যদি প্রেমের গল্প রচনা করো, তবে নিজে প্রেমে থাকবে, মানুষকেও প্রেম দেবে। সম্মোহিত ব্যক্তিকে যা দেখতে বলা হয়, সে নাকি তা-ই দেখে। কেউ কেউ সম্মোহিত হয়ে জীবন কাটিয়ে দেয়, কেউ কেউ আত্মসম্মোহনে। আমাকে আফিমখোর বলছো তো! তুমিও কিন্তু তাই। আমি খেয়েছি বৈরাগ্য আফিমÑতুমি সংসার আফিম। সম্মোহনকে যদি আফিম বলতে চাও, তবে সবাই আফিমখোর। মার্ক্সিজম কী আফিম নয়? ঐ আফিম খেয়ে কী কম জীবন ধ্বংস হয়েছে?

তোমার সঙ্গে যেমন আমার তুলনা হয় না, তেমনি আমার সঙ্গেও তোমার তুলনা হয় না। আমার চৈতন্য আমার মধ্যে, তোমার চৈতন্য তোমার মধ্যে। আমি তোমাকে দেখিনি, স্পর্শ করিনি, তোমার ঘ্রাণ পাইনি, স্বাদ পাইনি শুধু শুনেছি তুমি আছো। আমার পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের একটি ইন্দ্রিয়ও সাক্ষী দিচ্ছে না যে, তুমি আছো। সেই তুমিই আবার ভয় দেখাও, তোমার অস্তিত্বে বিশ্বাস না করলে নাকি তুমি কঠিন শাস্তি  দেবে? তুমি নাকি মহাজ্ঞানী? এটি কোনো জ্ঞানের কথা হলো? চোখ দিয়ে দেখলাম আম, স্পর্শ করে বুঝলাম আম, ঘ্রাণ নিয়ে দেখলাম আম, স্বাদ নিয়ে দেখলাম আম এরপর ‘আমে’র সঙ্গে ‘ই’ যুক্ত করে ‘আমি’ বললামÑআম সত্য। সামান্য একটা আমের অস্তিত্ব সম্বন্ধে সাক্ষী দিতে পঞ্চইন্দ্রিয়ের সহমত লাগে, আর তোমার বেলায় শুধু শোনা কথায় হয়ে যায়? তাও সরাসরি তোমার কাছ থেকে শোনা নয়! যে সরাসরি তোমার কথা শুনেছে তার কাছ থেকেও শোনা নয়! হাজারো বছর ধরে চলে আসা লোক মুখে শোনা কথা!

আচ্ছা না হয় সাক্ষী দিলামই যে, তুমি আছো। যে ব্যক্তির কান নেই, চোখ নেই, নাক নেই, জিহ্বা নেই, হাত নেই, ত্বক নেই তার সাক্ষী দিয়ে তুমি করবেটা কী? সত্য হলো এই যে, তোমার অস্তিত্বের প্রমাণ যদি ইন্দ্রিয়ানুভূতির উপর নির্ভর করে দিতে বলো, তবে তোমার পক্ষে প্রমাণ খুবই দুর্বল।

অতএব, সিদ্ধান্ত পরিষ্কারÑযেহেতু তুমি ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নও, বাহ্য জগতে যারা তোমাকে খুঁজে তারা উ™£ান্ত হতে বাধ্য।

রাবেয়া বসরী উঠানে সুঁই খুঁজছে। এক লোক জিজ্ঞেস করলো, ‘সুঁইটি হারিয়েছো কোথায়’? রাবেয়া উত্তর দিলোÑ‘ঘরের ভেতরে’।

সুঁই হারিয়েছি ঘরের ভেতরেÑখুঁজি বাইরের জগতে। উন্মাদনা আর কাকে বলে? ভেতরে কী নেই, আর কী আছে? ভেতরে কান নেই, চোখ নেই, নাক নেইই, জিহ্বা নেই, হাত নেই, ত্বক নেই। চিন্তা আছে, কল্পনা আছে, স্বপ্ন আছে, আবেগ আছে, অনুভূতি আছে। আমার চিন্তা, কল্পনা, স্বপ্ন, আবেগ, অনুভূতি দিয়ে তোমাকে যেভাবে সাজাই, তুমি সেরকমই।

আমি ও জগতের মধ্যে পার্থক্য কোথায়? আমি ও তোমার মধ্যে পার্থক্য কোথায়? জগতের অনুবাদ তো আমিই করে চলেছি নিরন্তর, যেমন করছি তোমার অনুবাদ। আমি তোমার কথা চিন্তা করি, অতএব, তুমি আছো। আমার ভেতরে আছো। আমি তোমাকে অনুভব করি, অতএব, তুমি আছো। আমার ভেতরে আছো। তুমি আমার কল্পনা। তাই তুমি সত্য। তুমি আমার স্বপ্ন। তাই তুমি সত্য। তুমি আমার বানানো চমৎকার একটি গল্প। তাই তুমি সত্য। আমার হাত দিয়ে আমি তোমাকে গড়েছি তাই তুমি সত্য। আমার চিন্তার কেন্দ্রস্থলে তোমার অবস্থান। তাই তুমি সত্য। আমি ভালোবাসি চিন্তা করতে, আমার চিন্তাকে আমি ভালোবাসি। তাই তুমি সত্য। আমি সত্য। তাই তুমি সত্য। আমি সত্য না হলে  তুমি সত্য কোনকালে? ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়