আবু হাসান শাহরিয়ার
কেউ কেউ শতাব্দীতে একজনই আসে। প্রশংসাকৃপণরা তার নামও মুখে আনতে ভরসা পায় না। আমাদের গণমাধ্যমে মুন্নী সাহা সেই একজন। গত শতকের নয়ের দশকের শুরুতে আমরা যখন নাঈমুল ইসলাম খান সম্পাদিত নতুন ধারার দৈনিক ‘আজকের কাগজ’-এ হাজার ডানায় স্বপ্নের ঈগল উড়াচ্ছি, মুন্নী সাহা তখন কাগজটির নবীনতম সংবাদকর্মী। আজ কে না তাকে চেনে? চেনে তার কৃত্যগুণে। তবু, কৃপণতা। এখন সেল্ফিযুগ। কৃপণ আরও কৃপণ হয়েছে। কিছু কুতার্কিক কীর্তিমানদের নিন্দামন্দও করে। ওরা ওটাই শুধু জানে। ওদের মুখে ছাই ছিটিয়ে তখনও কেউ কেউ উচ্চস্বরে বলে, ‘মুন্নী সাহা শতাব্দীতে একজনই আসে’। আমার এমন একবাক্যের সামান্য প্রশংসায় মুন্নীও সবার আদরের মুন্নী হয়ে যায়, যাকে অধুনালুপ্ত ‘আজকের কাগজ’-এ একমনে কাজ করতে দেখেছি আজ থেকে ত্রিশ বছর আগে। বাকিটা ওর প্রতিক্রিয়া পড়েই জেনে নিই; চিনে নিই আজকের মুন্নী সাহাকেও। আমার সামান্য এক বাক্যের প্রতিক্রিয়ায় মুন্নী সাহা লিখেছেন, ‘আবু হাসান শাহরিয়ার ভাই, আপনার মতো এমন করে স্নেহ-মায়া-ভালোবাসায় মোড়ানো প্রশংসার উপহার দেয়ার মানুষগুলোও আজকাল নেই। আমি নিজেকে নষবংংবফ মনে করি। আজকে একটা মিষ্টি অভিজ্ঞতা আপনাকে বলতে ইচ্ছে করছে।
সকালে গিয়েছিলাম ‘প্রয়াস’ স্কুলে। মরভঃবফ পযরষফ দের জন্য স্কুল। আমি ক্যামেরাম্যানদের বলছি, এভাবে ওভাবে শট নাও, আর পেছনে কড়িডোরে বসা মেনকা। ১৩ বছরের কিশোরী। তেমন কোনো কিছু বলতে পারে না। মিটিমিটি হাসে। নিজে নিজে খুব মিহি গলায় গান করে। পাশে ওর মা বসা। সিঙ্গেল মাদার। অটিস্টিক মেয়ে হয়েছে বলে ‘বীরপুরুষ(!)’টি ভেগেছে, তার চিকিৎসক স্ত্রীকে ফেলে রেখে। মেনকা আমাকে দেখছিলো আর কী জানি বিড়বিড় করছিলো। কাছে গিয়ে কান পাতি। ওর মা আর আমি। দুপাশ থেকে দুজনেই। মেনকা গাইছে, আমার কাছে দেশ মানে এক লোকের পাশে অন্যলোক...। আমার একটা অনুষ্ঠান, ‘এই বাংলায়’। সে অনুষ্ঠানের টিউন ওটা। আমাকে দেখে একটি বিশেষ শিশু যখন মনে করে গাইলো, বুঝিয়ে দিলো, তোমাকে চিনেছি, আর কি কিছু প্রাপ্তি বাকি থাকে? মেয়ের এই অভূতপূর্ব অনুভূতির প্রকাশ দেখে, অঝোরে কাঁদলেন মা। আনন্দে...।’ মুন্নী সাহা শতাব্দীতে একজনই আসে। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :