শিরোনাম
◈ গাজীপুরে হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু  ◈ বিশৃঙ্খলার পথ এড়াতে শিশুদের মধ্যে খেলাধুলার আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী ◈ তাপপ্রবাহের কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসও বন্ধ ঘোষণা ◈ সোনার দাম কমেছে ভরিতে ৮৪০ টাকা ◈ ঈদযাত্রায় ৪১৯ দুর্ঘটনায় নিহত ৪৩৮: যাত্রী কল্যাণ সমিতি ◈ অনিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল বন্ধে বিটিআরসিতে তালিকা পাঠানো হচ্ছে: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ◈ পাবনায় হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ জলাবদ্ধতা নিরসনে ৭ কোটি ডলার ঋণ দেবে এডিবি ◈ ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী আরও হিংস্র হয়ে উঠেছে: মির্জা ফখরুল ◈ বেনজীর আহমেদের চ্যালেঞ্জ: কেউ দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে তাকে সেই সম্পত্তি দিয়ে দেবো (ভিডিও)

প্রকাশিত : ১৯ মার্চ, ২০১৯, ০৪:১৫ সকাল
আপডেট : ১৯ মার্চ, ২০১৯, ০৪:১৫ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

প্রাথমিক শিক্ষার মান বাড়াতে হলে শিক্ষাখাতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় নিয়ে আসতে হবে

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন খায়রুল আলম : শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেছেন, মানহীন প্রাথমিক শিক্ষা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকা আমাদের দেশের জন্য চিরস্থায়ী সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা শুধু বিস্তারের দিকে যাচ্ছি, শিক্ষার পরিসর বাড়ানোর দিকে যাচ্ছি, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা বাড়াচ্ছি, কিন্তু শিক্ষার মান বাড়াতে পারছি না।
তিনি বলেন, শিক্ষার মান বাড়াতে না পারার কারণ তিনটি। এ তিনটি সমস্যার সমাধান না হলে, কোনোদিনই শিক্ষার মান বাড়বে না। প্রথম হচ্ছে, একটি রাজনৈতিক সদিচ্ছা। আমাদের শিক্ষাকে সর্বাদিক অগ্রাধিকার দিতে হবে। রাষ্ট্রকে বিশ্বাস করতে হবে যে, শিক্ষা খাতে বিনিয়োগটাই হচ্ছে একমাত্র বিনিয়োগ, যেটা দীর্ঘস্থায়ী। একটি পদ্মা সেতু একশ বছর পর ভেঙে যাবে, বা তাকে বাদ দিয়ে আরেকটি বানাতে হবে। কিন্তু শিক্ষা খাতে যদি আজকে বিনিয়োগ করি একশ বছর পর তা দশগুণ বেড়ে আসবে। এটি একটি সাধারণ চিন্তা। আমাদের সবাই এ কথাটি বলেন কিন্তু সে পরিমাণ সদিচ্ছা কারো মধ্যে আমরা দেখতে পাই না। সবাই অনুধাবন করেন, প্রধানমন্ত্রী থেকে সব শ্রেণির মানুষই শিক্ষাখাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর কথা বলেন, কিন্তু প্রয়োজনীয় কাজটা কেউ করেন না। দ্বিতীয় হচ্ছে, শিক্ষাখাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে এটি যদি আমরা মাথায় রাখি, তাহলে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এখন আমাদের জিডিপির ২.১ শতাংশ শিক্ষাখাতে বিনিয়োগ করি। এটি কোনোক্রমে পর্যাপ্ত নয়। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতে বলে ছিলেন, শিক্ষাখাতে বিনিয়োগ জিডিপির চার শতাংশ হওয়া উচিত। তিনি প্রায় পঁয়তাল্লিশ বছর আগে চার শতাংশের কথা বলে গেছেন আর পঁয়তাল্লিশ বছর পরে এসে আমরা ২.১ শতাংশ বিনিয়োগ করছি। যদি বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে আমরা ধারণ করি তাহলেও তো আমাদের শিক্ষাখাতে জিডিপির চার শতাংশ বিনিয়োগ করা প্রয়োজন। তিনি বেঁচে থাকলে হয়তো এটি আট শতাংশ করতেন। আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিল্ডিং তৈরি করি ২০-২১ কোটি টাকা খরচ করে। আমরা এটি ১০ কোটি টাকা দিয়েও তৈরি করতে পারি। ছয়তালা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না করে তিন তলা প্রতিষ্ঠান করে দুই শিফটে পড়ালে হয়। এটি গ্রামেও করা সম্ভব। বাকি টাকাটি গুণমান কাজে লাগানো যায়। বিনিয়োগ শুধু আমাদের ভৌতকাঠামোতে নয়, তার পাশাপাশি এমন কিছু বিষয়ে বিনিয়োগ করতে হবে যেগুলো এখন একেবারেই আমাদের চিন্তার ভেতরে আসে না। যেমন, খেলার মাঠ। খেলার মাঠ ছাড়া বাচ্চারা বন্ধুত্ব শিখে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খেলার মাঠ না থাকলে তো মাদক আসবেই। কারণ খেলাধুলা করে সময় পার করতে না পারলে তারা অন্য দিকে মনোনিবেশন করবে। রাজনৈতিক সহিংসতা ও উগ্রবাদ আসবেই। খেলার মাঠটি আমাদের মানুষ তৈরি করে। তারপর একটি ক্যান্টিন থাকবে যেখানে সরকারি ভর্তুকিতে শিক্ষার্থীরা খেতে পারবে। তারপর হচ্ছে গ্রন্থাগার। আমাদের বেশিরভাগ স্কুলেই লাইব্রেরি নেই। গবেষণাগার নেই। এগুলো দিতে হবে। আরো বিভিন্ন ক্লাব থাকতে হবে। যেমন আমি শ্রীলংকাতে দেখেছি একটি প্রাইমারি স্কুলে চার, পাঁচটি ক্লাব থাকে। প্রকৃতি দেখার ক্লাব, সাহিত্য, সংগীত, নাচ এমন একশ রকমের ক্লাব থাকতে হবে। সেগুলোতে বিনিয়োগ করতে হবে। তাহলে শিক্ষার্থীরা শিক্ষার পাশাপাশি সংস্কৃতি শিখবে। একজন আরেকজনের প্রতি ভালোবাসা হবে। কম্বোডিয়ার একটি স্কুলে দেখেছি ডিসিপ্লিন ক্লাব আছে। তাদের বিভিন্ন রকমের আদব-কায়দা শেখানো হয়। কীভাবে রাস্তা পারাপার করবে, ফুটপাথে কীভাবে হাঁটতে হবে। লিফটে কীভাবে উঠতে হবে। কোথায় উচ্চ স্বরে কথা বলা যাবে না। হাসপাতালে গেলে যে চুপ করে থাকতে হয়। এমন অনেক রকম নিয়ম তাদের শেখানো হয়। আমাদের বাচ্চারা এগুলো একেবারেই জানে না। আমাদের বাসার ওপর একটি ইংরেজি মিডিয়ামে পড়া ছেলে আছে। তার বাবা-মা দুজনেই ডাক্তার। কিন্তু সারাটি রাত বিভন্ন বিষয় নিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করে। কারণ সে কোনো রকম মূল্যবোধ শেখেনি। শিখবে কোথায়? স্কুলের যে অবস্থা বাসায়ও সেই একই অবস্থা। সারাদিন একা থাকা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। তাই এসব ক্লাব করে শিক্ষার্থীদের মৌলিক বোধ শেখানো যায়। তার পাশাপাশি শিক্ষকদের বেতন ভাতা বাড়াতে হবে। আমরা যদি ভালো শিক্ষক না পাই তাহলে ভালো শিক্ষা আশা করবো কীভাবে? প্রাইমারী স্কুলের বেতনটি যদি এমন করা হতো যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরাও সেখানে পড়াতে আগ্রহী হয়, তাহলে শিক্ষার মান বাড়তো। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুযোগ সুবিধা একটি দুইটি করে একটা সময় ঢেউয়ের মতো ছড়িয়ে দেয়া যেতো। মেধাবী শিক্ষক শিক্ষার্থীদের পড়ালে পরীক্ষা পদ্ধতিও পরিবর্তন হয়ে যেতো। তারা সৃজনশীল চিন্তা করতো। মুখস্ত বিদ্যা ও মুখস্ত পরীক্ষার দরকার থাকতো না। কোচিং বাণিজ্যও কমে যেতো। শিক্ষক প্রয়োজনীয় সকল সুযোগ-সুবিধা তার প্রতিষ্ঠান থেকে পেলে নৈতিকভাবেই কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করে দিতেন। কেউ করতে চাইলে সমাজ এবং দুর্নীতি কমিশনও তাদের বাধা দিতে পারতো। এ দিকগুলো মাথায় রেখে অগ্রসর হলে শিক্ষার মান বাড়বে। শিক্ষার মান বাড়তে হলেই বিনিয়োগ বাড়ানোর বিকল্প নেই। আবার ক্লাস ভিত্তিক শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করলে পরীক্ষা পদ্ধতির প্রয়োজন হয় না। আমেরিকাতে মাত্র ক্লাস টুয়েলভে গিয়ে একটি পরীক্ষা হয়। আর ইংল্যান্ডে হয় দুইটি। একটি ও লেভেল আরেকটি এ লেভেল। আমরা এখন চাইলে দুইটা রাখতে পারি। এক সময় গিয়ে একটি করা যাবে। তারপর টেকনিক্যাল পড়াশোনার প্রতিও নজর দিতে হবে। শুধু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় করে আর বাংলা, দর্শন, ইংরেজি পড়িয়ে কোনো লাভ হবে বলে আমার মনে হয় না। মাতৃভাষা জোর দিয়ে শিখতে হবে, ঠিক আছে। কিন্তু অন্য যে ভাষাগুলো শেখানো হয় তাও ভালোভাবে শেখানো হয় না। মাদ্রসায় আরবি শিখালে এমন ভাবে শিখাতে হবে যেন সে বিদেশে গিয়ে আরবি ভাষায় ভালোভাবে কথা বলতে পারে। ইংরেজি ভাষা এমনভাবে শিখাতে হবে যেন বিদেশে গিয়ে ইংরেজিতে কথা বলতে পারে। বিদেশে একটি হোটেলে আমি দেখেছি বয়ের কাজ করে বাংলাদেশি। সুপারভাইজার পাকিস্তানি, ক্লার্ক শ্রীলংকান আর ম্যানেজার ভারতের। কারণ আমাদের দেশের ছেলেটি ভালোভাবে সে দেশের কথা বলতে পারে না। যার জন্য তাকে বয়ের কাজটি করতে হয়। সে শিক্ষিত ও দক্ষ হলে ভালো পোস্টে কাজ করতে পারতেন। তিন জন বয় যে বেতন পায়, শ্রীলংকান একাই তা পায় আবার ভারতে ম্যানেজার তাদের দশগুণ বেতন পায়। এটি তাদের দোষ নয়। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার দোষ। আমাদের দেশ থেকেও ভারতীয়রা প্রতিবছর পাঁচ বিলিয়ন টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ আমরা সুপার ভাইজার, ম্যানেজার তৈরি করতে পারছি না। আমাদের ইংরেজি জ্ঞান নেই। আমাদের পড়াশোনা মুখস্ত নির্ভর। ভালো জাগায় গেলে আমরা মুখ থুবড়ে পড়ি। মানহীন শিক্ষার কারণেই এমনটি হয়। আমাদের দেশে কোচিং বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য বেশি পরীক্ষা ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। এগুলো থেকে বেরোতে হবে। শস্যের ভূত তাড়াতে হবে। আমাকে দশটি স্কুলের দায়িত্ব দিলে, আমি পাঁচ বছরে বুঝিয়ে দিতে পারবো শিক্ষার মান কীভাবে বাড়ানো সম্ভব হয়। যার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ বিনিয়োগ দিতে হবে। আমরা একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার কথা বলি। কিন্তু একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে যে শিক্ষার প্রয়োজন সেটি দিতে পারছি না। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন নিয়ে আমরা আওয়াজ তুলি। কিন্তু তার অসমাপ্ত কাজগুলো আমরা ঠিক মতো করছি না। বঙ্গবন্ধু যে শিক্ষা নিয়ে ভাবতেন এটি কারো মুখেই শুনতে পাই না। নেপাল, ভারত, পাকিস্তান, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম আমাদের থেকে বেশি বিনিয়োগ করছে শিক্ষা খাতে। আমরা কেন পিছিয়ে থাকবো? তাই শিক্ষার মান বাড়তে বিনিয়োগের বিকল্প নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়