শিরোনাম
◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু, মানতে হবে কিছু নির্দেশনা ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ বিশ্ববাজারে সোনার সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ চেক প্রতারণার মামলায় ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিচার শুরু ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ প্রফেসর ইউনূসকে প্রদত্ত "ট্রি অব পিস" প্রধানমন্ত্রীকে প্রদত্ত একই ভাস্করের একই ভাস্কর্য: ইউনূস সেন্টার ◈ নির্বাচনী বন্ড কেবল ভারত নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি: অর্থমন্ত্রীর স্বামী ◈ কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন করে দেশে ফিরলেন ভুটানের রাজা

প্রকাশিত : ১৯ মার্চ, ২০১৯, ০৪:১৩ সকাল
আপডেট : ১৯ মার্চ, ২০১৯, ০৪:১৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ডাকসু নির্বাচনের শিক্ষা

এ জে এম শফিউল আলম ভূঁইয়া : প্রায় তিন দশক পর অনুষ্ঠিত হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন। কুয়েত মৈত্রী হল ও রোকেয়া হলের কিছু ঘটনা বাদ দিলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্যই হয়েছে। তারপর নির্বাচনের ফলাফল ছাত্র রাজনীতিতে একটি দৃষ্টান্তমূলক পরিবর্তন এনেছে। আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে এই পরিবর্তন ও তার পরিণতি নিয়ে।
ভিপি আর সমাজকল্যাণ সম্পাদক ছাড়া ডাকসুর সবকটি পদেই জিতেছে ছাত্রলীগ। দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী দুটি পদে জিতেছে। হল সংসদে ছাত্রলীগ ও স্বতন্ত্র উভয়ই জিতেছে। মেয়েদের হলে তো স্বতন্ত্ররাই বেশি এগিয়ে। বিএনপির ছাত্রদল ও বামজোটের ছাত্র সংগঠনগুলো একটি পদেও জিততে পারেনি। এটা কেন হলো? এটা কিসের ইঙ্গিত? সাংগঠনিক শক্তি দিয়েই সবগুলো হল সংসদে জিতেছে ছাত্রলীগ। যেটা অন্য ছাত্র সংগঠনগুলো পারেনি। ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য কোনো দল পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিতে পারেনি। ছাত্রদল বলতে পারে, গত দশ বছরে তারা ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে রাজনীতি করতে পারেনি। কিন্তু বাম ছাত্র সংগঠনগুলো তো পেরেছে। ছেলেদের হলে ছাত্রলীগের ছাড়া অন্য দলের প্রার্থীরা ছিলো প্রায় অচেনা। নির্বাচনে জিততে এই জানাশোনা বা পরিচিতি খুব গুরুত্বপূর্ণ।
ফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, ছাত্রলীগ জিতেছে তাদের পরিচিতি ও সাংগঠনিক শক্তি দিয়ে। অন্যদিকে বিরোধীরা জিতেছে জনপ্রিয় আন্দোলন যেমন কোটা সংষ্কার আন্দোলনে ভূমিকা রেখে। নুরুল হক ভিপি নির্বাচিত হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় তাকে জেলে যেতে হয়েছে। সে আন্দোলন সফলও হয়েছে। সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বিলুপ্ত হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরেই কোনো সংগঠনের ব্যানার ছাড়াই কোটা সংস্কার আন্দোলন চলে আসছিলো। গত বছরের এপ্রিলে সমস্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী এতে স্বতস্ফুর্তভাবে যোগ দেয়, এই যুক্তিতে যে, কোটার কারণে কম যোগ্যরা সরকারি চাকরি পাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা এটাকে তাদের ভবিষ্যতের রুটি-রুজির সংগ্রাম হিসেবে নেয়। নূরের প্রতি পুলিশ অপেশাদার আচরণ করে এবং ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের কিছু নেতাকর্মীও তাকে মারধর করেছে। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মনে করে যে নূর তাদেরই নেতা আর তাদের স্বার্থ দেখতে গিয়েই নির্যাতিত হয়েছে। এসব সমীকরণেই নূর নেতা হয়ে যায়। যার ধারাবাহিকতায় আজ সে ডাকসুর ভিপি। সমাজ কল্যাণ সম্পাদক পদে জেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতার হোসেনও আমরণ অনশন করেছিলো, ফাঁস হওয়া প্রশ্নে নেয়া ‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষা বাতিল এবং পুনরায় পরীক্ষার দাবিতে।
নূর ও আখতারের বিজয়ের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে, কোন প্রার্থী কোন আদর্শের, কোন চিন্তার, কোন দলের, ছাত্র-ছাত্রীরা তা গুরুত্ব দেয় না। যে তাদের স্বার্থ চিন্তা করে তারা তাকেই ভালোবাসে। দিন দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দলীয় রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে এবং নিজের ক্যারিয়ারের ব্যাপারেই বেশি মনোযোগী হয়ে উঠছে। ছাত্রনেতাদের এগুলো বুঝতে হবে। এবছর ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাড়া সব দলেরই ভরাডুবি হয়েছে। ক্ষমতাসীন সংগঠনের নির্বাচিত নেতারা যদি সাধারণ শিক্ষার্থীদের মনের ভাব না বুঝতে পারে বা তাদের স্বার্থে কাজ না করে, তাদেরও পরিণতি একই রকম হবে। গণঅভ্যুত্থানের সামনে কেউ টিকে না।
কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনায় ডাকসু নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। কিন্তু ২৮ বছর পর নির্বাচন করতে পারাটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একটি বড় সফলতা। কর্মকর্তাদের এবং শিক্ষার্থীদের পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় নির্বাচনে কিছু অবাঞ্চিত ঘটনা ঘটেছে। তবে নির্বাচন নিয়মিত হলে ত্রুটি বিচ্যুতি কেটে যাবে। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি নির্ধারণে সরাসরি অংশ নিতে পারবে শিক্ষার্থীরাও ।
লেখক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, ফিল্ম ও ফটোগ্রাফি বিভাগের প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান ও রাজনীতি বিশ্লেষক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়