শিরোনাম
◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু, মানতে হবে কিছু নির্দেশনা ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ বিশ্ববাজারে সোনার সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ চেক প্রতারণার মামলায় ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিচার শুরু ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ প্রফেসর ইউনূসকে প্রদত্ত "ট্রি অব পিস" প্রধানমন্ত্রীকে প্রদত্ত একই ভাস্করের একই ভাস্কর্য: ইউনূস সেন্টার ◈ নির্বাচনী বন্ড কেবল ভারত নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি: অর্থমন্ত্রীর স্বামী ◈ কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন করে দেশে ফিরলেন ভুটানের রাজা

প্রকাশিত : ১৯ মার্চ, ২০১৯, ০৪:১১ সকাল
আপডেট : ১৯ মার্চ, ২০১৯, ০৪:১১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নুরুল হকের সমালোচনা করুন, নিন্দা করুন, কিন্তু তাকে প্রত্যাখ্যান এখনই নয়

ফিরোজ আহমেদ : ব্যক্তি আর সংগঠন দুটোর মাঝে পার্থক্য আছে, সম্পর্কও আছে। ইতিহাসে ব্যক্তির দায় এবং ভূমিকা একটু জটিল। নুরুল হককে এখনই শত্রু প্রতিপন্ন করা ঠেলে দেয়ার আগে আবারও কয়েকটা বিষয় ভাবা যাক। আমি নুরুল হকের পক্ষে, প্রধানমন্ত্রীর সামনে তার নাটকীয় নমনীয়তার পরও নূরের আঞ্চলিক বাংলায় যাকে বলে ‘নৌকার গুন টাইনা নিয়া যাওয়া’, তেমন একটা কঠিন কাজ করতে হয়েছে তাকে। তার সম্ভাবনাকে ধ্বংস করে ফেলতে সাহায্য করবেন না।
নূর হলো সেই লোক, যাকে এই সেদিনও এক সাংবাদিক প্রকাশ্য টেলিভিশনে ‘নুরু’ ‘নুরু’ বলে তাচ্ছিল্য করেছেন। নূর সেই লোক গু-াতন্ত্র যাকে ‘শিবির’ আখ্যা দিয়ে তাকে রাজপথে পেটানো যে বৈধ, সেটা প্রতিপন্ন করেছে এবং সেই বৈধতা যেহেতু গু-াতন্ত্র বাংলাদেশে আছে, তাকে এবং তার সাথীদের পিটিয়ে রক্তাক্তও করা হয়েছে। হাতুড়ির আঘাতে হাড় ভেঙে দেয়া হয়েছে তার সহযোদ্ধার, তাও থেকেছে প্রতিকারহীন। যেদিন সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সহসভাপতি হলো, সেদিনও তাকে প্রাণভয়ে দৌড়াতে হয়েছে ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রে, গণমাধ্যমে তার ওপর হামলার চিত্র প্রচারিত হয়েছে, গণমাধ্যমের উপস্থিতি তার নিরাপত্তার বীমা হয়নি। নুরুল হকদের প্রকাশ্য সংসদে রাজাকারের বাচ্চা বলা হয়েছে, নুরুল হকদের গ্রেফতার করা হয়েছে। নুরুল হককে নিয়ে ব্যঙ্গ বিদ্রুপে এদেশের কবি-সাংবাদিক-শিল্পী-কথাসাহিত্যিক কেউ পিছিয়ে থাকেননি।
নুরুল হক প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করেছে, এই ঘটনা কি গু-াতন্ত্রেরই নৈতিক পরাজয় স্বীকার নয়? তাদের এই পরাজয় আরও বড় আকারে দেখা দিতে পারতো যদি নুরুল হকের মনোবল আরও চড়া থাকতো, জানা থাকতো তার পেছনে সংগঠিত শক্তি আছে, সে গ্রেফতার হলে হাজার লোকের মিছিল হবে এই নিশ্চয়তা থাকতো। আপনারা যদি ভাবেন যে নুরুল হক চাকরির সংকীর্ণ আন্দোলন করেছে, স্বার্থপর চাকরির আন্দোলন করতে গিয়ে কেন বেচারা তার অল্প কজন সঙ্গীসহ প্রাণের ঝুঁকিতে পড়বে? হয়তো নুরুল হকের এই পদক্ষেপ তাকে সেই ঝুঁকি থেকেও রক্ষা করবে।
নূরের সবচে বড় বিপদ হলো তার শ্রেণি অবস্থান। মধ্যবিত্তকে সে কতোখানি বিব্রত করেছে তার ভাষা দিয়ে, তার শব্দচয়ন প্রায়শই কানে বাজে, উচ্চারণ বেশ আঞ্চলিক, পরিশীলনের অভাব খুব আছে। আমার ধারণা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবীতম শিক্ষার্থীদের, যারা সমাজ সচেতন, ভালো কিছু চান, সকলের মঙ্গলকামনা করেন, সকলে তাদের ভালো ভালো দৃষ্টান্ত অনুসরণ করেন এমনটা চান, তাদেরকে বিরাট পরিমানে বিড়ম্বনায় ফেলেছে। ‘নূরের বিরুদ্ধে আপত্তিটা কী’? জানতে চাইলে আমার খুব প্রিয় এক তরুণ বন্ধু বললেন, ‘ওদের কোনো ভিশন নাই’। কী ভীষণ অভিযোগ! কিন্তু শুধু মধ্যবিত্তের নৈতিক শক্তি দিয়ে, শুধু জ্ঞানের প্রাবল্য দিয়ে সেই বিচ্ছিন্নতা অতিক্রম করা যায় না, যার অভাবে বিপুল সংখ্যাগিষ্ঠ সর্বদা দূরে দূরে থাকে। তখন মধ্যবিত্তের সর্বদা কান্না পায়, মনে হয়: এই সমাজ আমাদের মতো সেরাদের উপযুক্ত হয়নি এখনো।
এইটাও খুব সত্যি, নূরের মতো নি¤œ-মধ্যবিত্ত সহজে ভয় পায়। সমাজে তার কোনো প্রতিষ্ঠান নাই, কোনো মতাদর্শিক সমর্থন নাই, নারীদের সাথে উপযুক্ত আচরণের শিক্ষাও নাই, ইংরেজি ভাষাটা ভালোভাবে জানা নাই, অনভ্যস্ততায় সময়মতো যথাযথ শব্দটা ঠিকমতো আসে না, সব কিছু মিলে বহু রকম নাজুকতা ভর করে। থাকার মাঝে একটা আছে, সংখ্যার স্থুল শক্তি। তারা জানে অন্যরা ভুল, কিন্তু সেটা গুছিয়ে প্রকাশ করার সামর্থ্য সর্বদা থাকে না। তাদের মাঝে নুরুল হক একটা সোনার টুকরো ছেলে, যে তার বিপুল সাংগঠনিক ক্ষমতার সক্ষমতা দেখিয়েছে।
হয়তো ভবিষ্যতে আপনাদের আশঙ্কা সত্যি প্রমাণিত হবে। হয়তো হবে না। কিন্তু নূর কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব করে না। একজন ব্যক্তি হিসেবে রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ তার জন্য অযথাযথ কিছু নয়। সে যদি কোটা সংস্কারের দাবির সাথে বৈঈমানী করে, তখন তার প্রতিশ্রুতি সে ভঙ্গ করেছে বলে বলা যাবে। প্রধানমন্ত্রী ৩১ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জিতে আসা বলে ফিসফিস করছেন? বৈধতা শুধু বৈধ নির্বাচনে হয় না, ক্ষমতায় যিনি আছেন তিনিই প্রধান, তিনি আছেন। আপনার আমার রাজনৈতিক লক্ষ্য বৈধতা প্রতিষ্ঠিত করা, জনগণের বৈধ সরকার প্রতিষ্ঠা, তাই বলে যিনি আছেন, তিনি নাই হয়ে যান না। যতোক্ষণ তিনি আছেন, ততোক্ষণ তার বিরুদ্ধেই সংগ্রাম, তার সাথেই দাবি পেশ। যতোক্ষণ না জনগণ একদফা তোলার মতো সংগঠিত হয়।
ডাকসুর সহসভাপতি বাংলাদেশে রাজনৈতিক গণতন্ত্র স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। সহসভাপতিকে তার দায়ে আবদ্ধ রাখতে পারেন তার সহযোদ্ধারা। তার সহকর্মীরা। ব্যক্তি কী করবে, তার সাহস, তার ভীরুতা, তার আত্মসমর্পণ, তার গর্জে ওঠাÑ এই সব কিছুতে শ্রেণি, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ভূমিকা রাখে। চূড়ান্ত ভূমিকা রাখে সমাজে সংগঠিত প্রতিরোধের শক্তি। এরশাদ আমলে বহু ছাত্রনেতা স্বৈরাচারের কাছে বিক্রি হয়েছে, রাতারাতি তাদের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করেছে প্রতিদিন প্রবলতর হতে থাকা জনতা।
এইটাই কাজ। নূরের সমালোচনা করুন। নিন্দা করুন। কেন সে তার অনশন করা রোকেয়া হলের মেয়েদের কথা বলতে ভুলে গেলো, কেন তার কথা আরও স্পষ্ট হলো না, কেন সে প্রতিটা নিপীড়নের শাস্তি দাবি করলো না, সেই দাবি করলে বাংলাদেশের মানুষের চোখে সে তারও কতো বড় নায়ক হিসেবে আবির্ভূত হলো, সেই সমালোচনা চলুক। কিন্তু তাকে প্রত্যাখ্যান এখনই নয়। বরং এখনো তার জমার খাতাই অনেক অনেক ভারী।
ছাত্র রাজনীতির অভিজ্ঞতার অভাবই আজকের এই সব পরিস্থিতির জন্য, অনভিজ্ঞ কাজ আর সংগঠনহীনতার জন্য দায়ী। এরই সুযোগে গু-াতন্ত্র জেকে বসেছে। নানান অর্জন আর হতাশার বন্ধুর পথেই গণতন্ত্রের সংগ্রাম পুনর্গঠিত হবে। মনে রাখতে হবে, ব্যক্তির চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ যে কোন আন্দোলনের সামষ্টিক কাঠামো গড়ে তোলা। ব্যক্তিকে সমষ্টির অধীনে নিয়ে আসা। নায়কের প্রয়োজন তখন কমে আসতে থাকবে, সমাজমুক্ত হবে, গণতান্ত্রিক হবে। কোটা সংস্কারের আন্দলন আর নিরাপদ সড়কের আন্দোলন আমাদের সমাজে নতুনতর প্রজন্মের ইশারা। তার নানান দিক নিয়ে আরও আলোচনা ভবিষ্যতে করতে হবে। আপাতত তাৎক্ষণিকতার প্রয়োজনে এইটুকু বলে রাখা। লেখক : সাবেক ছাত্রনেতা। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়