শিরোনাম
◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে

প্রকাশিত : ১৮ মার্চ, ২০১৯, ০৫:১৩ সকাল
আপডেট : ১৮ মার্চ, ২০১৯, ০৫:১৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

প্রেম সব সময় মানুষের সঙ্গেই আছে

ড. এমদাদুল হক

আদম-হাওয়া যে কাননে বাস করতেনÑশাস্ত্রে সেই কাননকে বলা হয়েছে নন্দনকানন। বর্ণনানুযায়ী এটি নন্দের আঁধার তাই আনন্দস্বরূপ। সুন্দর, তাই দৃষ্টিনন্দন। সৃজনশীল, তাই নান্দনিক। এটি এমন এক কানন যেখানে একবার কেউ প্রবেশ করলে আর বের হতে চায় না। এখানে বাস করে এমন কেউ, যাকে কোটিবার দেখলেও দেখার তৃষ্ণা মেটে না। তার সঙ্গে অনন্তকাল বসবাসের ইচ্ছা জাগন্ত থাকে। জীবনের তৃষ্ণা এখানে প্রবেশ করা। আস্তিক, নাস্তিক সবাই নন্দনকাননে যাওয়ার জন্য উদগ্রীব। আনন্দ, সৌন্দর্য ও সৃজনশীলতা কে না চায়? সমস্যা হলো নন্দনকানন প্রস্তুত অবস্থায় নেই। প্রত্যেককে তার নন্দনকানন সৃষ্টি করে নিতে হয়Ñজীবন সংগ্রামে।
আদম-হাওয়া মানে পরিবার। নন্দনকানন শুরু হয় পরিবার থেকে। যেখানে মাতা-পিতা, ভাই-বোন ও জীবনসঙ্গীর মতো সকলের সঙ্গে সুখ-দুঃখ, আশা-হতাশা, সরলতা-জটিলতা ভাগ করা যায়, সেখানেই গড়ে উঠে নন্দনকানন। ধর্ম আর কিছু নাÑনন্দনকানন তৈরি করা। অর্থাৎ এমন একটি পরিবার গড়ে তোলা যেখানে অনন্তকাল থাকার ইচ্ছা জাগ্রত থাকবে। একা একা নন্দনকাননে যাওয়া যায় না। এটি তিন প্রজন্মের মিলন কেন্দ্র। কেউ কাউকে নন্দনকাননে নিয়ে যেতে পারে না, এটি দেয়ার মতো কোনো কর্তৃপক্ষ নেই যে, সুপারিশ কাজে লাগবে। কর্তৃপক্ষ নেই বলেই তো এটি নন্দনকানন। যারা বিবেকের নির্দেশে চলে, যারা মানুষকে ভালোবাসে এবং ভালোবাসাকে ভালোবাসে তারা প্রাকৃতিক নিয়মেই এখানে প্রবেশ করে। এখানে যারা একসঙ্গে প্রেমে, বিশ্বাসে, শান্তিতে, ভক্তিতে থাকে সেখানেও তারা একসঙ্গেই থাকবে।
নন্দনকাননে যাওয়ার সঠিক পথ কোনটি? সঠিক পথ সবারই জানা। যখন সূর্য উঠে তখন সকল উদ্ভিদ ও তরুলতা সূর্যের দিকে মুখ করে, সামান্য কুক্কুটও বুঝতে পারে, সূর্যদেব উদিত হচ্ছেন। সুতরাং নন্দনকাননের পথ কাউকে দেখাতে হয় না- প্রেমের অনির্বাণ শিখা প্রদীপ্ত রয়েছে সকল হৃদয়ের কন্দরে। যারা প্রেমের ফুল ফোটাতে চায় না, তারাই পথ খুঁজে। খুঁজে, আর খুঁজে। ‘হেথা নয়, অন্য কোথা, অন্য কোথাÑঅন্য কোনোখানে’। যারা সম্যক পারিবারিক শিক্ষা হতে বঞ্চিত হয়, যারা মাতা-পিতার প্রেম পায় না, দাদা-দিদার আদর পায় না, ভাই-বোনের মধ্যে যাদের সুসম্পর্ক নেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারাই তৈরি নন্দনকাননের আশায় ছুটতে ছুটতে হাজির হয় আশ্রমে, দরবারে। কিন্তু চমৎকার বলাৎকার হয়ে যায় কিছুদিনের মধ্যেই। সব বঞ্চিতরা একত্রিত হলে বঞ্চনার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। যৌথ বঞ্চনাবোধ তৈরি হয়। খুঁজতে খুঁজতে দেহমন শ্রান্ত, ক্ষীণ, বিবশ হয়ে যায়। আর প্রেম? সে তো থেকে যায়Ñঅধরা। কিন্তু মানুষ দিতে পারে না। সে দেয়ার জন্য নিখুঁত পাত্র খুঁজে, যার অস্তিত্ব নেই। প্রেরণা, উদ্দীপনা, সেবা, শান্তি, প্রেমাস্পদের সান্নিধ্য, সন্তুষ্টি ইত্যাদি নন্দনকাননের উপাদান। এই উপদানগুলোর উপস্থিতিতে হৃদয়ে এমন এক ভাবের উদয় হয় যা অভ‚তপূর্ব, অশ্রæত ও কল্পনাতীত। যাদের মন দিবানিশি প্রেমবোধে আপ্লুত থাকে, যারা দেহের সঙ্গে মন এবং মনের সঙ্গে আত্মার সংযোগ রাখে, প্রেম যাদের সংযমী হতে প্রেরণা দেয়, যারা ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং অন্যকে ক্ষমা করে দেয় তারাই নির্মাণ করতে পারে নন্দনকানন। যাদের মধ্যে সর্বদা সন্তুষ্টি থাকে তাদের দুঃখ-কষ্ট থাকে না, তাদের রোগ-শোক হয় না, দুশ্চিন্তা, দুর্ভাবনাও তাদের স্পর্শ করতে পারে না। নন্দের আঁধার হয়ে তারা বাস করে আনন্দে। আনন্দ মানে দুঃখের অনুপস্থিতি। আনন্দের ধারা যখন প্রবাহিত হতে থাকে তখন অস্তিত্ব সে ধারায় মিশে যায়, ব্যক্তিত্ব তখন একাকার হয়ে যায় আনন্দের নৃত্যে। ধর্মের সঙ্গে আনন্দের বিরোধ চলছে অবিরতভাবে। ধর্মের পুঁজি দুঃখ। তাই গান-বাজনা, নৃত্য, নাটক, যাত্রা, কবিতা ধর্মে নিষিদ্ধ। কারণ হলো মানুষ যদি আনন্দেই থাকে তবে তো নন্দনকাননে যেতে চাইবে না, টিকিটও বিক্রি হবে না। নন্দনকাননে যাওয়ার ব্যবসাটি চালিয়ে রাখতে হলে দুঃখিত মানুষ চাই, বিষণœ মানুষ চাই।
আধ্যাত্মিকতায় কী নতুন কিছু হচ্ছে? ভিন্ন নামে, ভিন্ন পরিভাষায় এখানেও চলছে দুঃখের চাষাবাদ। বিচ্ছিন্নবাসের উদ্দেশ্য কী? দুঃখের চাষাবাদ করা, নিঃসঙ্গতার চাষাবাদ করা। ধর্মবাণিজ্যের জন্য দুঃখ চাই, কষ্ট চাই। নন্দনকাননের মুলাটি ঝুলবে চোখের সামনে, কেউ এর নাগাল পাবে না বিচ্ছিন্নবোধে, তবেই না ব্যবসাটি চালু থাকবে। আনন্দ নিয়ন্ত্রণই এখন প্রধান বিষয় হয়ে উঠেছে সব সম্প্রদায় ও গোত্রে। সমাজ, ধর্ম, রাষ্ট্র, সবাই উঠেপড়ে লেগেছে আনন্দ নিয়ন্ত্রণে। ধর্মের জন্য গোলাম চাই, আধ্যাত্মিকতায়ও গোলামের কদর সর্বাধিক। আনন্দিত মানুষ গোলাম হবে কোন দুঃখে? আনন্দের মিতালী প্রেমের সঙ্গে। সে-ই আনন্দে থাকতে পারে যে বাস করে প্রেমে, যে নিজেকে নিয়ে সুখী, নিজেকে যে ভালোবাসে ও সম্মান করে, মানুষকে যে ভালোবাসে ও সম্মান করে।
কেউ কী কাউকে আনন্দ দিতে পারে, যদি ব্যক্তি স্বয়ং আনন্দ চয়ন না করে? পারে না। অনেক সময় আমরা বুঝতে পারি না, কোনটি নন্দনকাননের সঠিক পথÑকোনটি ভ্রান্ত পথ। সহজ উত্তরÑভ্রান্ত পথের লক্ষণ দুঃখ, সঠিক পথের লক্ষণ আনন্দ। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়