নাদিরা সুলতানা
মাঝে মাঝেই মনে হয় জীবনে সবচেয়ে কঠিন কাজ হচ্ছে, সবসময় সবকিছুতে ইতিবাচক থেকে জীবনেই লেগে থাকা। এটা কঠিন, সুকঠিন... তার চেয়েও বড় কথা! না, সব মিলে গত দুই-তিন একদম ভালো যাচ্ছে না। একসময় ছাত্র রাজনীতি করে এসেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দরতম অধ্যায়ের একটি। এই ক্যাম্পাসকে ঘিরে আছে স্মৃতির মিছিল, বর্ণাঢ্য সময়। বলা যেতে পারে প্রিয়তম আবেগের একটির নাম এই ‘‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’। যতো দূরেই যাই, যেখানেই যাই, যেভাবেই থাকি, শুনতে চাই ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়’ বাংলাদেশে তার ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে সবসময় সব অবস্থায় মাথা উঁচু করেই আছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা গোটা বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করার ক্ষমতা রাখবে সম্মানের সাথে... না, বুকভাঙা কষ্ট নিয়ে বলছি, দিনশেষে এই সত্য মেনে নিতেই হবে এ সময়ের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশেরই প্রতিচ্ছবি, আজকের বাংলাদেশ! মূল ধারার অপরাজনীতি থেকে বের হয়ে আসার ক্ষমতা হারিয়েছে সেই ১৯৯০ এর পর থেকেই... ( বড় অচেনা এই সময়ের তারুণ্যের বড় অংশ! যাপিত জীবনের নানা টানাপড়েন এবং বিশেষ করে এই ডাকসু নিয়ে রীতিমতো অসুস্থ বোধ করছি...)
আজ ৪ দিন পর লিখতে বসলাম সেই ডায়েরি পর্ব, সত্যি বলতে একদম ছন্দে ফিরতে পারছি না... তারপরও সামনে আছে অনেক অনেক প্রিয় বন্ধু সময় এবং না বলা কথা, খুব চাইছি শেষ করতে তাই আজ মনকে যতোটা সম্ভব তুলে নিয়ে এলাম এক রকম জোর করেই... আরো একটা পর্ব শেয়ার করতে।
ছোট এই ময়মনসিংহ ট্রিপ শেষ করে ফিরলাম আজ ঢাকা। জার্নির শুরুর কিছু সময় ভালো কাটলেও ঘণ্টা দেড়-দুই না যেতেই গাড়ির এসি কাজ করছিলো না। গাজীপুর পর্যন্ত গøাস নামিয়ে বাইরের হাওয়া খেতে পারলেও... টঙ্গী এসে আর সেটা সম্ভব হচ্ছিলো না অনেক বেশি ধুলাবালি এবং গরম... আমার পুত্র, পুরোই ন্যাতান্যাতা হয়ে ঘুম... যেটা বলছিলাম, টানা ৪-৫ ঘণ্টা পানি না খেয়ে, ওয়াস রুম ইউজ না করতে পেরে আমিও উত্তরা পর্যন্ত এসেই মনে হচ্ছিলো এই বুঝি ফেইন্ট হয়ে গেলাম... খুব খারাপ একটা জার্নি হলো সব মিলে। এর মাঝে ড্রাইভার ছেলেটা বয়স খুব বেশি হলে ২০-২২ হবে... উত্তরা পার হয়েই দেখি অন্যদিকে রওনা দিচ্ছে... আমাদের গাড়ি ঠিক করে দিয়েছে যে ভাই আমার সে নাকি বলেছে বসুন্ধরা, তাই সে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার দিকে যাচ্ছে... আসলে তাকে বলা হয়েছে, বসুন্ধরা মার্কেটের কাছেই আমরা যাবো। বিপত্তি আর কাকে বলে... এইটা এমন কোন বিষয় না হয়তো, কী এক অদ্ভুত কারণে ড্রাইভার ছেলেটা এমন ঘাইঘুই শুরু করলো... মন, শরীর সব খারাপ তার মাঝে এই অবস্থা... না আর নেয়া যাচ্ছিলো না। নভর বাবা যতোটা রিএক্ট করার সে করে যাচ্ছে... আমার দেশ থেকে নিয়ে আসছি ছেলেটাকে, বেয়াদবিটা নিতেও পারছি না... আবার কেউ ওকে অনেক বকুক সেটাও দেখতে পারছি না... না এই জ্বালা আর প্রাণে সহে না একটা অবস্থা... মানুষ বিপদে পড়লেই নাকি বেশি ধার্মিক হয়... উ আমি ননস্টপ ¯্রষ্টার নাম জঁপছি... আর বলছি এবারের মতো মাফ করে দাও খোদা... পাঁচ-ছয় ঘণ্টার বেশি হয়ে গেছে, একভাবে বসে আছি... আর কিছুক্ষণ হলে আমার অবস্থা ঠিক কী হতে পারে সেটাই ভাবছি... আনমনা হওয়ার চেষ্টা করছি... অবশেষে এলাম ‘গ্রীন রোড’ ভাবছি, আহ ঢাকা, কী ভীষণ অভিশপ্ত এই নগরী তারপরও একে ঘিরেই কী ভীষণ আয়োজন, জীবনের মহোৎসব... বাসায় ঢুকেই টয়লেট থেকে বের হয়ে নাকে মুখে পানি দিয়ে একটু পানি খেয়েই বুঝলাম... গোপাল ভাড়ের সেই গল্পটা কী বেসম্ভব সত্য উপলব্ধি!)
আপনার মতামত লিখুন :