শিরোনাম
◈ কিছুটা কমেছে পেঁয়াজ ও সবজির দাম, বেড়েছে আলুর ◈ দেশের ৯২ শতাংশ মানুষ দ্বিতীয় কোনো ভাষা জানেন না, সময় এসেছে তৃতীয় ভাষার ◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫

প্রকাশিত : ১৮ মার্চ, ২০১৯, ০২:৪৫ রাত
আপডেট : ১৮ মার্চ, ২০১৯, ০২:৪৫ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বিএনপির সম্পদ, আওয়ামী লীগের বোঝা

বিভুরঞ্জন সরকার : গত তিন দশক ধরে দেশের রাজনীতির চালচিত্র অনেক ক্ষেত্রেই প্রায় অপরিবর্তিত আছে। এক দলের সরকার ক্ষমতায় থাকলে যেসব বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সমালোচনার ঝড় তোলে, ক্ষমতায় গিয়ে তারা পূর্বসূরিরই পদাঙ্ক অনুসরণ করে। পুরনো সংবাপত্র ঘাটলেই বিষয়টি চোখের সামনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় মাত্র দুটি সংবাদ উদ্ধৃত করছি। ১৯৯৫ সালের ৫ জুন দৈনিক সংবাদ-এ প্রকাশিত খবর: ‘ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অধীন থানাগুলোতে মন্ত্রী, এমপি, সরকার দলীয় নির্দেশ বা কথা অনুযায়ী চলা এখন পুলিশের মুখ্য কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঢাকা মাহানগরীর পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা সাধারণ মানুষের কোনো অভিযোগ ভ্রুক্ষেপ করে না এবং কোনো চেইন অব কমান্ড নেই। সেই সুযোগে পুলিশ বাহিনীর অনেক সদস্য দুর্নীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে ঝুঁকে পড়েছে। কোনো কোনো পুলিশ কর্মকর্তার ঢাকা শহরে দুই তিনটা বাড়ি আছে’। ২৩ এপ্রিল ‘ ৯৬ দৈনিক ভোরের কাগজ- এ প্রকাশিত খবর: ‘১৯৯৪ সালের জুন থেকে ৯৫-এর ডিসেম্বর পর্যন্ত দেড় বছরে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আব্দুল মতিন চৌধুরীর স্বাক্ষরযুক্ত সুপারিশে রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাস ৪০৬ জন কুখ্যাত আসামির সাজা মওকুফ করে মুক্তি দিয়েছে। মুক্তিপ্রাপ্তরা প্রায় সকলেই বিএনপির সন্ত্রাসীগ্রুপের নেতা-কর্মী। যারা চাঁদাবাজি, অপহরণ, নারী নির্যাতন, ডাকাতি, অবৈধ অন্ত্র ব্যবহার প্রভৃতি ঘৃণ্য মামলায় দোষী প্রমাণিত হয়ে ৩ বছর থেকে যাবজ্জীবন পর্যন্ত সাজা পেয়েছিলো। ছাড়া পাওয়ার পর তারা আবার সক্রিয় রাজনীতি ও তাদের পুরনো ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে’।

এ দুটি খবর থেকে আমরা কি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি না যে, আওয়ামী লীগ সরকার উত্তরাধিকার সূত্রে দুটো জিনিস পেয়েছে। তার একটি বিএনপি-অনুগত পুলিশ দল এবং অন্যটি চিহ্নিত অপরাধী চক্র-যাদের পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক মদদ। দেশের সব রাজনৈতিক দলের সমর্থন-সহযোগিতা ছাড়া দেশ থেকে হত্যা-সন্ত্রাস দূর করা সম্ভব নয়। কুখ্যাত অপরাধী হিসেবে কাউকে গ্রেপ্তারের পর যদি কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে তাদের দলীয় কর্মী বা নেতা পরিচয়ে মুক্তি দাবি করা হয়, তাহলে সেটা কি মেনে নেয়ার মতো হতে পারে? তবে হ্যা, বিএনপির আমলে যেভাবে চলছিলো সেভাবে চললে সেটা আবার গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বিএনপি পুলিশে দলীয়করণ করে সমালোচিত হয় তাহলে আওয়ামী লীগ একই কাজ করে প্রশংসিত হতে পারে না। বিএনপি খারাপ করেছে, সেই যুক্তিতে আওয়ামী লীগের খারাপটা সমর্থনযোগ্য হয় না। সন্ত্রাস দমনে শেখ হাসিনার সরকার কঠোর মনোভাব গ্রহণ করলেও দেশ থেকে সন্ত্রাস-সহিংসতা একেবারে দূর হয়ে যায়নি। সন্ত্রাসী বা অপরাধীদের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা দানের অপসংস্কৃতি থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারছি না। প্রতিপক্ষ বৈরি ভূমিকা গ্রহণ করলেও সরকারকে চিহ্নিত অপরাধীদের বিরুদ্ধে দৃঢ় মনোভাব দেখাতে হবে। মানুষ কোন বিষয়গুলো অপছন্দ করে সেগুলো সরকারকে বুঝতে হবে। মানুষের মনোভাব যথাযথভাবে উপলব্ধি না করে কেবল উন্নয়নের গল্প বলে যে মানুষের মন জয় করা যায় না সেটা এখনও বুঝতে না পারার কথা নয়।

আমরা বাঙালিরা খুবই বিস্মৃতিপ্রবণ জাতি। অতীতটা আমাদের স্মৃতি থেকে খুব দ্রুত মুছে যায়। চোখের সামনে যা দেখি সেটাই খুব বড় হয়ে ধরা পড়ে। অতীতের সঙ্গে তুলনামূলক আলোচনাও অনেক সময় আমার পছন্দ করি না। বিএনপির শাসনামলের ব্যর্থতাগুলো এখন মানুষের খুব একটা মনে নেই। তাদের চোখের সামনে আছে শেখ হাসিনা সরকারের টানা শাসনের দৃষ্টান্ত। বিএনপির যে ব্যর্থতা মানুষ ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখে আওয়ামী লীগ সরকারের একই ধরনের ব্যর্থতাকেও মানুষ ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবে বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। আওয়ামী লীগের কাছে মানুষের প্রত্যাশা বেশি, আওয়ামী লীগের ব্যাপারে সমালোচনাও বেশি। সেজন্যই যাদের অপকীর্তির কারণে সরকারের নিন্দা সমালেচনা হয় তাদের বিরদ্ধে অত্যন্ত দৃঢ় ও সাহসী ভূমিকা নিতে হবে। অতীতে এরশাদ শিকদারের মতো ভয়াবহ চরিত্রের অপরাধীকে আইনের আওতায় এনে দণ্ড দিতে পারলে এখন চিহ্নিত টেররদের প্রতি দুর্বলতা দেখানো হবে কেন? এটা মনে রাখতে হবে, সন্ত্রাসীরা কিংবা অপরাধীরা বিএনপির মতো দলের জন্য সম্পদ হতে পারে, আওয়ামী লীগের জন্য তারা বোঝা। ঘাড় থেকে বাহুল্য বোঝা নামিয়ে ফেলতে দেরি করলে পথ চলার কষ্ট বাড়বে। আওয়ামী লীগকে সময় থাকতেই এই বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে।

লেখক: গ্রুপ যুগ্ম সম্পাদক, আমাদের নতুন সময়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়