শিরোনাম
◈ অবশেষে মার্কিন সিনেটে সাড়ে ৯ হাজার কোটি ডলারের সহায়তা প্যাকেজ পাস ◈ কক্সবাজারে ঈদ স্পেশাল ট্রেন লাইনচ্যুত, রেল চলাচল বন্ধ ◈ ইউক্রেনকে এবার ব্রিটেননের ৬১৭ মিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা ◈ থাইল্যান্ডের উদ্দেশ্য রওনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ◈ জিবুতি উপকূলে অভিবাসীবাহী নৌকাডুবিতে ৩৩ জনের মৃত্যু ◈ লোডশেডিং ১০০০ মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে, চাপ পড়ছে গ্রামে ◈ এফডিসিতে মারামারির ঘটনায় ডিপজল-মিশার দুঃখ প্রকাশ ◈ প্রথম ৯ মাসে রাজস্ব আয়ে ১৫.২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন ◈ প্রথম ধাপে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাত চেয়ারম্যানসহ ২৬ জন নির্বাচিত ◈ বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগ আহ্বান রাষ্ট্রপতির

প্রকাশিত : ১৮ মার্চ, ২০১৯, ১১:৩২ দুপুর
আপডেট : ১৮ মার্চ, ২০১৯, ১১:৩২ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নদী আছে, নৌকা চলে না

ডেস্ক রিপোর্ট : কিশোরগঞ্জের বিস্তীর্ণ হাওর এলাকাসহ ১৩টি উপজেলায় জালের মতো ছড়িয়ে আছে ছোট-বড় অনেক নদ-নদী। কিন্তু অধিকাংশ নদীতে পলি জমায় তা নাব্য সংকটের কবলে পড়েছে। এক সময় এই এলাকায় নৌপথ যোগাযোগের মূল ভরসার নাম হলেও এখন আর তা নেই। নাব্য সংকটের কারণে ভরা বর্ষা মৌসুম ছাড়া বেশিরভাগ নদীতেই নৌকা চলে না। শুধু যোগাযোগই নয়; জেলার প্রায় সব এলাকার কৃষিও ছিল নদীনির্ভর। কিন্তু বর্ষাকাল ছাড়া অন্য সময় নদীতে পানি থাকে না। তাই বাধ্য হয়ে কৃষকরা ভূগর্ভস্থ পানি দিয়ে সেচ কাজ চালাচ্ছেন। নদীগুলোর মরণদশা প্রভাব ফেলছে কিশোরগঞ্জসহ হাওর এলাকার মানুষের জীবনযাত্রা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেও। তাই শিগগিরই নদীগুলো খনন করে শুস্ক মৌসুমে নৌযান চলাচলের উপযোগী করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশবাদীরা।

কিশোরগঞ্জ জেলার মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র, ঘোড়াউত্রয়া, ধনু, কালনী, ধলেশ্বরী, নাগচিনি ও মেঘনার মতো বড় নদ-নদী। পাশাপাশি আড়িয়াল খাঁ, নরসুন্দা, ধেনু, সিঙ্গুয়া, সোয়াইজনি নদীর মতো অনেক নদীই সমৃদ্ধ করেছে এ অঞ্চলকে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শুস্ক মৌসুমের শুরুতেই পানি সংকটে পড়ছে নদীগুলো। তীব্র পানি সংকটের কারণে নদীগুলোর অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পথে। বেশিরভাগ নদীতেই নৌকা চালানো যায় না। নদী ও সংলগ্ন খালগুলোর পানি দিয়ে এক সময় কৃষিকাজ করা হলেও এখন তা সম্ভব হচ্ছে না।

কিশোরগঞ্জের বুক চিরে প্রবাহিত হয়েছে নরসুন্দা নদী। ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদী নরসুন্দা হোসেনপুর উপজেলা দিয়ে ঢুকে কিশোরগঞ্জের মধ্য দিয়ে পূর্বদিকে ইটনার চৌগঙ্গায় ধনু নদীতে গিয়ে মিশেছে। ৫৮ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীটি এক সময় খরস্রোতা থাকলেও এখন প্রায় মরা খাল। এক সময় নদীটি দিয়ে কিশোরগঞ্জের সঙ্গে সারাদেশের নৌ-যোগাযোগ ছিল। নদীটি শুকিয়ে যাওয়ায় সেই যোগাযোগ এখন আর নেই। নদীটির অধিকাংশ স্থানে এখন ধান চাষ হয়। নরসুন্দার শাখা সুতি নদী ও সোনাইজানি নদীরও একই অবস্থা। সরেজমিন দেখা যায়, সুতি নদীতে এক সময় মালবাহী নৌকা চললেও এখন আর চলে না। বরং নদীর মধ্যখানে শুকনো চরে পড়ে আছে ছোট-বড় অনেক নৌকা। এসব নৌকা বর্ষা মৌসুমের আগে সেখান থেকে সরানোও সম্ভব না।

জামালপুর দিয়ে ঢুকে ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদীর গা বেয়ে ভৈরবের কাছে মেঘনার সঙ্গে মিলিত হয়েছে ব্রহ্মপুত্র নদ। দেশের অন্যতম প্রধান এই নদের কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর অংশ শুকিয়ে চরে পরিণত হয়েছে। এক সময় এই নদী দিয়ে আশপাশের জেলার সঙ্গে কিশোরগঞ্জের যোগাযোগ রক্ষা হতো। বিশেষ করে নদীটি দিয়ে ময়মনসিংহের গফরগাঁও এলাকায় যাওয়ার প্রধান পথ ছিল। গফরগাঁও, হোসেনপুরসহ আশপাশ এলাকার ৪০টি বাজার ও মোকামে এই পথ দিয়েই মালপত্র পরিবহন করা হতো। নদের তীরবর্তী বাজার ও মোকামগুলো এখনও সেই সাক্ষ্য দেয়। কিন্তু নদে চর পড়ায় শুকনো মৌসুমে নৌপথে যাতায়াত এখন অনেকটা গল্পের মতো।

আড়িয়াল খাঁ নদ কটিয়াদী থেকে উজানচর ও লোহাজুড়ি হয়ে ভৈরবে গিয়ে মেঘনায় মিশেছে। এই নদও নৌ-যোগাযোগের অন্যতম রুট ছিল। কিন্তু নাব্য সংকটের কারণে হাজার হাজার ব্যবসায়ী তাদের মালপত্র সড়কপথে পরিবহন করে থাকে।

হবিগঞ্জের খোয়াই, মৌলভীবাজারের মনু এবং সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারা মিলে অষ্টগ্রাম ও দিরাই উপজেলার সীমান্তে এসে কালনী নদী নামে পরিচিতি লাভ করেছে। এই কালনী নদীতেও এখন শুকনো মৌসুমে নৌকা চলে না। এতে হাওরের ৩২টি উপজেলার মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটছে। তারা দুর্ভোগ সহ্য করে বিকল্প পথে যাতায়াতে বাধ্য হচ্ছে। হাওরের মিঠামইন উপজেলায় সুরমা নদী শুকিয়ে যাওয়ায় অষ্টগ্রাম উপজেলার আদমপুর পর্যন্ত নৌপথ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে সেই এলাকার অর্ধশতাধিক বাজার ও মোকামের মাল পরিবহন করা যাচ্ছে না।

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা দিয়ে বয়ে চলা ধলেশ্বরী ও নরসুন্দা নদীতে এখন পানি নেই বললেই চলে। নদী শুকিয়ে গিয়ে তলদেশের মাটিতেও ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে আশপাশের শত শত একর জমিতে সেচ দিতে সমস্যায় পড়েছেন কৃষকরা। তারা ছোট ছোট ডোবা-নালা থেকে পানি সংগ্রহ করে ধান ক্ষেতে দিচ্ছেন। যাদের সামর্থ্য আছে তারা শ্যালো মেশিনের সাহায্যে ক্ষেতে পানি সেচ দিচ্ছেন।

জেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখন প্রত্যেক বছরে বর্ষা হয় না। এমনকি অনেক সময় প্রচুর বৃষ্টি হলেও নদীতে স্বাভাবিক উচ্চতায় পানি ওঠে না। তলদেশ পলি জমে ভরে ওঠায় উজানে ঢল হলেই নদী উপচে পড়ে। তখন বন্যা মানুষকে ভোগায়। তবে বেশিরভাগ সময় নদীগুলোতে তেমন পানি থাকে না। অনেক সময় বর্ষা মৌসুমেও ধান চাষের জন্য কৃষকদের সেচের ওপর নির্ভর করতে হয়।

কিশোরগঞ্জে পরিবেশ আন্দোলনের নেতা অধ্যক্ষ রবীন্দ্রনাথ চৌধুরী বলেন, কিশোরগঞ্জের নদীগুলো কখনোই খনন করা হয়নি। উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানির সঙ্গে প্রচুর পলি এসে নদীর তলদেশ ভরিয়ে ফেলেছে। ফলে নদীর গভীরতা কমে যাচ্ছে। উজানে ঢল হলেই এখানে বন্যা দেখা দেয়। তাতে হাওর এলাকায় বোরো আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিনি আরও বলেন, এ অঞ্চলে এক সময় নৌপথেই বেশিরভাগ যোগাযোগ রক্ষা করা হতো। কিন্তু কয়েক বছর ধরে বর্ষাকালে সচল থাকলেও অন্য সময় নৌ-যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময় নৌকাগুলোও নদী ও খালের হাঁটুপানিতে বা ডাঙায় পড়ে থাকে। তিনি অবিলম্বে কিশোরগঞ্জের সব নদ-নদী ড্রেজিং করার দাবি জানান। তার মতে, হাওর ও উজান এলাকার মানুষের কম খরচে যাতায়াত ও মালপত্র পরিবহনের জন্য নৌরুটগুলো সচল করা খুবই জরুরি।

কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক বলেন, আগাম বন্যার কবল থেকে হাওর অঞ্চলের প্রধান ফসল বোরো ধান রক্ষা করা ও ভাঙনের তাণ্ডবে বিলীন হয়ে যাওয়া গ্রামগুলো পুনরুদ্ধারে ইতিমধ্যে 'কালনী-কুশিয়ারা প্রকল্প' হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে হাওরবাসীর নৌপথে যোগাযোগসহ বোরো জমিতে সেচের সমস্যা দূর হবে।

কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলাম জানান, নৌপথ সচল রাখতে ইতিমধ্যে কালনী-কুশিয়ারা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এ প্রকল্পের অধীনে নদী খনন ও নদীর বাঁকা অংশ কেটে সোজা করা হবে। প্রকল্পটির মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে নদী খনন ও অন্যান্য কাজ করা হবে। তিনি বলেন, জেলার অন্যান্য নদীর নাব্য ফিরিয়ে আনার জন্য আরও কয়েকটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে সব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে এসব সমস্যার সমাধান হবে।

সূত্র : সমকাল

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়