শিরোনাম
◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত

প্রকাশিত : ১৮ মার্চ, ২০১৯, ০৯:০০ সকাল
আপডেট : ১৮ মার্চ, ২০১৯, ০৯:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রমজানের আগেই বেড়ে গেছে জিনিসপত্রের দাম, সক্রিয় সিন্ডিকেট

ডেস্ক রিপোর্ট : প্রতিদিনই বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। চাল, ডাল, পেঁয়াজ, মাছ, মাংস, তেল, তরিতরকারি, ফলমূল, চিনি, লবণসহ সব কিছুর দাম আগের তুলনায় বেড়েছে। রমজান মাস আসার আগেই পরিকল্পিতভাবে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়াচ্ছে সক্রিয় সিণ্ডিকেট। রোজা শুরুর আগে ভোগ্য পণ্যের দাম আরো এক দফা বাড়বে -এমন অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহল থেকে।

খোদ বাণিজ্যমন্ত্রীই বলেছেন, চালের দাম বাড়ছে চার-পাঁচ জন বড় ব্যবসায়ীর কারসাজিতে। তবে শুধু চালের বাজার নয়; পুরো ভোগ্যপণ্যের বাজারেই একাধিক সিন্ডিকেট সক্রিয়। কিন্তু বাজার সিণ্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। অথচ লাগামহীন দাম বাড়ার কারণে সীমিত আয়ের সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে চাকরিজীবী আর খেটে খাওয়া মেহনতী মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। ভোরের কাগজ।

ভোগ্যপণ্যের দাম কেন বাড়ছে? এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর নেই। দায়িত্বশীলরা দোষ চাপান একে অন্যের ওপর। এ দুর্ভোগের জন্য মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের দায়ী করছেন সাধারণ মানুষ ও বাজার বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, রমজান মাসে নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে না- সরকারের এমন ঘোষণার দুই-তিন মাস আগেই বাড়তে থাকে পণ্যমূল্য। ফলে রমজান মাসে আর পণ্যের দাম বাড়ে না। বাড়ে তার আগেই। এবারও ঠিক একই পথে হাঁটছেন ব্যবসায়ীরা। যদিও উৎপাদন কম থাকায় দাম বাড়ছে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা।

চলতি মার্চ মাসের প্রথম দিকে টানা কয়েকদিন বৃষ্টিতে উৎপাদন কমেছে বলেও জানান তারা। খুচরা বাজারে সবজির দাম পাইকারি বাজারের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। কেন এ তারতম্য- এ প্রশ্নে ব্যবসায়ীরা নিরুত্তর। অবশ্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আগামী ২৭ মার্চ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একটি বৈঠকে বসবে। আগামী রমজান মাসে পণ্যমূল্য যেন স্বাভাবিক থাকে এ বিষয় নিয়েই বৈঠকে আলোচনা হবে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি বিশ^স্ত সূত্রে জানা গেছে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে একটি চিঠি ইস্যু করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে কমলেও দেশে দফায় দফায় বাড়ছে আমদানিকৃত অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দামও। সবজির দাম এখন আকাশ ছোঁয়া। এই বাস্তবতায় ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ে চরম অস্বস্তিতে দেশের কোটি কোটি সাধারণ ভোক্তা।

সংশ্লিষ্টদের মতে, এসবই সিন্ডিকেটের কারসাজি। তাদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়ছে প্রশাসন। দুর্বল বাজার মনিটরিং, প্রতিযোগিতা কমিশন গঠন করা হলেও তা কার্যকর না হওয়া, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে যে আইন রয়েছে তা প্রয়োগ না হওয়া, ভ্রাম্যমাণ আদালত নিষ্ক্রিয় থাকা এবং পণ্যমূল্যের তালিকা প্রদর্শন না করার সুযোগ নিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। তাই দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বাজার মনিটরিং টিম শক্তিশালী করার সঙ্গে সঙ্গে সরকার নিয়ন্ত্রিত সংস্থা টিসিবিকে শক্তিশালী করার পরামর্শ রয়েছে তাদের।

দাম বাড়ানোর বিষয়ে ক্যাব সভাপতি ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, শীত পরবর্তী সবজির দাম কিছুটা বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। তবে বর্তমান বাজারে সবকিছুই যেন হঠাৎ আকাশ ছুঁয়েছে। বিষয়টি মনিটরিং করে সরকারকেই ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলেন, বাজার ব্যবস্থায় প্রতিযোগিতা হ্রাস ও আইনি নিয়ন্ত্রণ না থাকার কারণেই অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট গড়ে উঠছে।
ঢাকার কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মুরগির দাম। ঢাকার বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৭০ টাকায়। রাজধানীর মালিবাগ কাঁচাবাজারে কথা হয় চাকরিজীবী রফিকুলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের কাছে আমরা জিম্মি। হুটহাট করেই জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেয়। এভাবে যদি দাম বাড়তে থাকে আমরা কী করব? মাছ, মাংস, পেঁয়াজ, সবজি সব কিছুর দাম বাড়তি। আমাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। কিন্তু দিন শেষে আমাদের বেতন কিন্তু বাড়ছে না। সরকারের উচিত বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা।

সবজির দাম বাড়ার বিষয়ে মতিঝিলের এজিবি কলোনি কাঁচাবাজারের সবজি ব্যবসায়ী লতিফ বলেন, পাইকারি বাজারে হঠাৎ মাল কম। জেলাগুলো থেকে মাল কম আসছে। পাইকাররা বেশি দাম হাঁকাচ্ছে। আমাদেরও ব্যবসা করতে হয়, তাই বেশি দাম দিয়ে হলেও কিনতে হয়। ক্রেতাদের সঙ্গে বেশি দাম নিয়ে ঝগড়াও হয়। ব্যবসা করি, তাই কেউ কিছু বললেও কিছু মনি করি না। তবে দাম বাড়লে কেনাবেচা কম হয়। তাই আমাদেরও ক্ষতি হয়। খিলগাঁও বাজারে মাছ ব্যবসায়ী ছদরুল বলেন, কাওরানবাজারে যে মাছ গত সপ্তাহে কিনেছি ৫০০ টাকা কেজি। আজ সেই একই মাছ কিনেছি ৭০০ টাকা। আমরা কি করব বলেন?

দেখা গেছে, রাজধানীর বাজারগুলোতে হঠাৎ করে সবজির দাম অনেকখানি চড়ে গেছে। কিছু কিছু সবজির দাম আবার নতুন করে বেড়েছে। তিনটি সবজির কেজি ছুঁয়েছে ১০০ টাকা। বাকিগুলোর বেশিরভাগের কেজি অথবা পিস ১০০ টাকার কাছাকাছি। সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫-১০ টাকা বেড়েছে। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি। তবে আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ আগের মতই ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। প্রতি পোয়া (২৫০ গ্রাম) কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে।
এদিকে মাছ ও মাংসের দামেও স্বস্তিতে নেই ক্রেতারা। বয়লার মুরগির পাশাপাশি দাম বেড়েছে লাল লেয়ার মুরগি ও পাকিস্তানি কক মুরগির। লাল লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২১০ থেকে ২২০ টাকা কেজি। আর পাকিস্তানি কক মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা। ৪৮০ টাকা থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যেত গরুর মাংস। এখন গরুর মাংসের দামও বেড়ে গেছে। প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে বাজারভেদে ৫০০-৫৫০ টাকা পর্যন্ত দামে। আর খাসির মাংসের দর এখন ৭২০-৮০০ টাকা।

শীত শেষ হওয়ার পর থেকেই চড়েছে সবজির বাজার। বাজারের সবজি বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাজারে আসা নতুন সবজি যেমন বরবটি, পটল, কচুর লতি বিক্রি হচ্ছে ৭০-১২০ টাকা কেজি। করলা ৮০-৯০ টাকা কেজি। ঢেঁড়স বিক্রি হয়েছে ৮০-১০০ টাকা কেজি। শিম, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি সবইকিছুর দামই এখন ৪০-৬০ টাকার কাছাকাছি। কম দামের মধ্যে এখন রয়েছে আলু। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ১৫-২৫ টাকা দরে।

এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, চাহিদার তুলনায় সব ধরনের পণ্যের মজুদ সন্তোষজনক। বাজারে কোনো পণ্যের ঘাটতি নেই। পণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখার পাশাপাশি যাতে কেউ কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে না পারে, সে বিষয়টি কঠোরভাবে নজরদারি করা হচ্ছে। নিত্যপণ্যের দাম সাধারণ ক্রেতার নাগালে রাখার লক্ষ্যে রোজা শুরুর আগেই বাজার মনিটরিংয়ে নামবে দেশের চারটি গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক টিম।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়