অজয় দাশগুপ্ত, অস্ট্রেলিয়া থেকে : ক্রাইস্টচার্চ তো বটেই বিশ্ব বাঙালির ঘোর কাটেনি এখনো। একে শান্তির দেশ নামে পরিচিত কিউইদের দেশে এই দুর্ঘটনা। তাতে আবার আমাদের পুরা ক্রিকেট টিম প্রায় উধাও ও মুছে যেতে বসেছিলো। যদি তা হতো বা হলে কী হতো ভাবলেও শিউরে উঠি আমরা। সব জীবনই মূল্যবান। এরপরও এ যাবৎ আমাদের দেশের একাধিক মানুষের মৃত্যুর খবর পেয়েছি আমরা। মানা যায় না এমন একটা ঘটনা।
সারা বিশ্বে ঢালাওভাবে মুসলিম সম্প্রদায়কে সন্ত্রাসী বা টেররিস্ট বলার প্রবণতা এবার বন্ধ হবে আশা করি। মসজিদে নামাজ আদায় করতে যাওয়া মানুষদের মেরে নির্মম নৃশংসভাবে হত্যা করা লোকটিও সন্ত্রাসী। তার ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে তাকে ছাড় দেয়া বা কনসিডার করার সময় নেই সভ্যতার হাতে। ইয়া বড় এক ঘোষণাপত্র দিয়ে ঠা-া মাথায় কিলিংয়ে নামা যে কেউ ই জঙ্গি।
এখন সময় এসেছে চিহ্নিত করার। যে দেশে যে সমাজে যারাই সন্ত্রাসী তাদের বিষদাঁত ভেঙে দেয়ার কাজ শুরু করতে হবে। আমরা নিউজিল্যান্ডের প্রতিবেশী দেশে বসবাস করি। প্রশান্তপারে দুটি দেশই মূলত উন্নত আর আধুনিক। একটি অস্ট্রেলিয়া আরেকটি নিউজিল্যান্ড। অবশ্য নিউ ক্যালিডোনিয়া একটি ছোট দেশও আছে যার ধাঁচ ফরাসি। কারণ তারা ফ্রান্সের কলোনী। কিউইদের দেশ কোনোকালেও যুদ্ধের দিকে যায়নি। তাদের প্রধানমন্ত্রী এলেন ক্লার্ক ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি এসব ঝামেলায় নেই। তারপরও আজ সে দেশের ক্রাইস্টচার্চে মানুষের জীবন ঝরে পড়লো । ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষ জান হারালো কালো থাবায়।
বাংলাদেশিরা একটু হলেও স্বস্তি পেয়েছে এই কারণে যে, আমাদের ক্রিকেটাররা জানে বেঁচে গেছেন। ভাগ্যক্রমে বাঁচা তারা ভবিষ্যতে কোন দেশে যাবেন বা গেলে তাদের নিরাপত্তা কতোটা সঠিক আর কতোটা কার্যকর সেটা দেখা ব্যতীত তাদের আর পাঠানো যাবে না। মনে রাখা দরকার অস্ট্রেলিয়া যৌক্তিক কারণ ছাড়া অজুহাত দেখিয়ে বাংলাদেশে আসেনি। আর আমাদের টিমতো মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে ফিরেছে। যেখানে যাচ্ছি বা যাদের সঙ্গেই কথা হচ্ছে মানুষের বুকে জমে আছে পাহাড়। তারা কোনো ধর্মের সন্ত্রাসী বা জঙ্গিদের সহ্য করতে নারাজ।
ক্রাইস্টচার্চ কী আমাদের চোখ খুলে দিতে পারবে? আমরা কী ধর্মকে সব জায়গায় নামিয়ে নিয়ে আসার সংস্কৃতি থেকে ত্রাণ লাভ করবো এবার?
লেখক : কলামিস্ট ও বিশ^বিদ্যালয় পরীক্ষক
আপনার মতামত লিখুন :