সিরাজুল ইসলাম, সিংগাইর: হেমায়েতপুর-সিংগাইর-মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশ দিয়ে বয়ে খালটি অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। ইতিমধ্যেই খালের জায়গা বিভিন্ন স্থানে দখল হয়ে গেছে। ইটভাটা কোম্পানী ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা খাল ভরাট করে ইচ্ছেমতো ব্যবহার করছে। ফলে খালের পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে জলাবন্ধতাসহ পরিবেশের ওপর বিরুপ প্রভাব পড়ছে।
এদিকে, সিংগাইর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাল উদ্ধার ও রক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে ইউএনও রাহেলা রহমত উল্লাহ জানিয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার পূর্বপাশ দিয়ে প্রবাহিত ধলেশ্বরী নদী হতে পশ্চিমে বায়রা ইউনিয়নের গাড়াদিয়া পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার খালটি প্রধান সড়কের পাশ দিয়ে প্রবাহিত। দু‘যুগ আগেও বছরের বেশির ভাগ সময় নৌকাযোগে খালটি দিয়ে পন্য পরিবহন করা হতো। ভেপু বাজিয়ে চলতো যাত্রীবাহী নৌযান। পরবর্তী সময়ে কতিপয় দখলদার মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদ থেকে লীজ নিয়ে খালটির বিভিন্ন স্থান ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করে। যার ফলে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। কমখরচে পন্য পরিবহনের সুযোগ হারায় শত-শত ব্যবসায়ীসহ বিরাট জনগোষ্ঠী। সেই সাথে ধল্লা, জয়মন্টপ ইউনিয়ন, সিংগাইর পৌরসভা, সদর ও বায়রা ইউনিয়নে বর্ষাকালে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এ খালটির অস্তিত্ব হারিয়ে গেলে পরিবেশের ওপর বিরুপ প্রভাবসহ ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ক্ষতিগ্রস্থ হবে বলে অনেকেই জানান। ইতিপূর্বে গুরুত্বপূর্ন এ খালটি সচল রাখতে কোন কার্যক্রম দেখা যায়নি।
দেরিতে হলেও সিংগাইরের বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাহেলা রহমত উল্লাহ স্ব-উদ্যোগে খালটি উদ্ধার ও রক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করেছেন। যা সিংগাইর তথা মানিকগঞ্জবাসীর প্রাণের দাবী। ওই আবেদনে খালটি খনন করে দক্ষিণ পাশে পায়ে হাটা পথ তৈরি করলে অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে রক্ষার পাশাপাশি বুহৎ এলাকার জলাবদ্ধতা দূর হবে বলেও মন্তব্য করা হয়।
রেকর্ড পর্চা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, হেমায়েতপুর- সিংগাইর- মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক সংলগ্ন খালটি বায়রা ,বলধারা,সিংগাইর, জয়মন্টপ, ধল্লা ও জামির্ত্তা ইউনিয়নের বায়রা, দেহনাখিলা, সানাইল,খোলাপাড়া, সিংগাইর, গঙ্গামালঞ্চ, দেউলী, লক্ষীদিয়া, নীলটেক, জয়মন্টপ, ভাকুম, কামুড়া,মেদুলিয়া, গাজিন্দা,পূর্ববাস্তা, সুদক্ষিরা ও ধল্লা মৌজার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। যার আয়তন প্রায় ৮৪ একর। এর মধ্যে ৪৩.৫৪ একরের মালিক জেলা প্রশাসক। ২০.৭১ একরের মালিক মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদ এবং ১৯.০১ একরের মালিক ঢাকা/জেলা বোর্ড। বিগত বছরগুলোতে মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদ একক ভাবে খালের জমি ইজারা দিয়ে আসছিল। বছর খানেক আগে হেমায়েতপুর- সিংগাইর-মানিকগঞ্জ সড়কটির উন্নয়ন কাজ শুরু হলে পূর্বের ইজারা প্রাপ্তদের দু’চারটি স্থাপনা বাদে সকলকে উচ্ছেদ করা হয়। সেই সঙ্গে সড়কের দু’পাশে থাকা বেসরকারি সংস্থা প্রশিকার লাগানো প্রায় ৫ হাজার বিভিন্ন প্রজাতির বড় আকারের পুরনো গাছ এককভাবে টেন্ডারে বিক্রি করে জেলা পরিষদ। নতুন করে আবার খালের জায়গা লীজ দেয়ার পায়তারা করছে বলে একাধিক সূত্র জানায়।
জেলা পরিষদ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনোয়ার হোসেন বলেন,অতীতের মত আবারো সড়কের পাশের খালের জমি লীজ দেয়া হবে। মালিকানা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কিছু জমি ভুলে জেলা প্রশাসকের নামে রেকর্ড হয়েছে । যা নিয়ে মামলা চলছে ।
এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস বলেন, সিংগাইরের ইউএনও‘র আবেদনের প্রেক্ষিতে মালিকানা নির্ধারণসহ খালটি খনন ও সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :