শিরোনাম
◈ চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ১২ ইউনিট ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী

প্রকাশিত : ১৬ মার্চ, ২০১৯, ০৬:১৮ সকাল
আপডেট : ১৬ মার্চ, ২০১৯, ০৬:১৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নিউজিল্যান্ডে মসজিদে হত্যাযজ্ঞ : জীবন বাজি রাখা হিরো নাইম রশিদ

ডেস্ক রিপোর্ট।। নাইম রশিদ। নিউজিল্যান্ডে মসজিদে হত্যাযজ্ঞের সময় তিনি নিজের জীবনের দিকে ফিরে তাকান নি। হামলাকারী যখন নির্বিচারে মুসল্লিদের গুলি করে হত্যা করছিল পাখির মতো, তখন তিনি দেখিয়েছেন অসীম সাহসিকতা। জাপটে ধরে হামলাকারীর বন্দুক কেড়ে নেয়ার জন্য ধস্তাধস্তি করেন। ততক্ষণে লাশের সারিতে যোগ হয়েছে তারই ছেলে তালহা (২১)-এর দেহ। সেই শোককে শক্তিতে পরিণত করে, নিজেকে শক্ত করে, জীবন বাজি রেখে তিনি লড়াই চালিয়ে যান হামলাকারীর সঙ্গে। তা না হলে নিহতের সংখ্যা অনেক অনেক বেশি হতে পারতো। যে নাইম রশিদ নিজের জীবন বাজি রাখলেন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, মুসলিম ভাইদের রক্ষার জন্য শেষ পর্যন্ত তিনিই বাঁচতে পারলেন না।

তাকে মারাত্মক আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেয়া হলো। কিন্তু সেখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। তাই বিশ্ব মিডিয়া তাকে হিরো বা নায়ক হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। তার ছবি দিয়ে আলাদা রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে।

শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করতে ক্রাইস্টচার্চের মসজিদ আল নূরে গিয়েছিলেন নাইম রশিদ ও তার ছেলে তালহা। মসজিদ তখন কানায় কানায় পূর্ণ। অকস্মাৎ সেখানে সিনেমার ভিলেনদের মতো এলোপাতাড়ি গুলি শুরু করে সন্ত্রাসী ব্রেনটন টেরেন্ট (২৮)। নাইম রশিদের চোখের সামনে লুটিয়ে পড়তে থাকে মুসল্লি ভাইদের দেহ। রক্তে ভেসে যেতে থাকে মসজিদের মেঝে। চারদিকে আর্ত চিৎকার। দিকভ্রান্ত মানুষ। ছুটাছুটি করছে। তার সামনে লুটিয়ে পড়ছেন মানুষ। তার মধ্যে রয়েছেন তার ২১ বছর বয়সী ছেলে তালহাও। একজন পিতা হিসেবে সেই দৃশ্য তার হৃদয়ে যে কম্পন তোলার কথা, যে ঝড়ে তার ভেঙে পড়ার কথা, তিনি তার বিরুদ্ধে দাঁড়ালেন। নিজেকে স্থির করলেন। অস্ট্রেলিয়ান হামলাকারী ব্রেনটন টেরেন্টের কাছ থেকে তার অস্ত্র কেড়ে নেয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগলেন। এই ধস্তাধস্তিতে যে সময়টা লেগেছে তার মধ্যে অনেক মুসলিম মসজিদ থেকে বেরিয়ে যেতে পেরেছেন। তা না হলে আরও কি ভয়াবহতা ঘটতে পারতো তা ভাবতেই গা শিউরে ওঠে। তাই তিনি হয়ে উঠেছেন হিরো।

লন্ডনের একটি ট্যাবলয়েড পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ লিখেছে, নামাজ আদায় করতে যাওয়া ভাইদের রক্ষার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়লেন রশিদ। তিনি হামলাকারী ব্রেনটনের অস্ত্র কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। এতে মারাত্মকভাবে আহত হন রশিদ। এক পর্যায়ে হামলাকারী মসজিদ থেকে বেরিয়ে পালায়। সঙ্গে সঙ্গে অন্য মুসলিমরা রশিদকে উদ্ধার করে দ্রুত নিয়ে যান হাসপাতালে। কিন্তু যিনি অন্য মুসলিমদের জীবন বাঁচাতে নিজের জীবনকে বাজি ধরলেন, তিনিই বাঁচতে পারলেন না। শুক্রবার রাতের শেষভাগে তিনি মারা যান।
নাইম রশিদের বাড়ি পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে। পাকিস্তানে তিনি একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করতেন। কিন্তু একজন শিক্ষক হিসেবে চাকরি পেয়ে যান নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে। সেখানে গিয়ে জীবনযাপন শুরু করেন।

পাকিস্তানের এআরওয়াই নিউজকে ড. খুরশিদ আলম নিশ্চিত করেছেন নিহত নাইম রশিদ তার ভাই। তাকে ও তার ভাজিতা তালহাকে শুক্রবারের নৃশংস হামলায় হত্যা করা হয়েছে। এর আগে ওয়েলিংটনে পাকিস্তানের হাই কমিশন নিশ্চিত করেছে, হামলায় ৪ জন পাকিস্তানি আহত হয়েছেন। ৫ জন রয়েছেন নিখোঁজ।
হামলার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া প্রত্যক্ষদর্শী সৈয়দ মাজহারুদ্দিন। তিনি বলেছেন, আরেকজন মানুষ কিভাবে হামলাকারীকে মোকাবিলা করেছিলেন এবং তার একটি অস্ত্র কেড়ে নিয়েছিলেন। এ ঘটনা ঘটেছিল লিনউড মসজিদে। সেখানে তিনি দেখতে পান হামলাকারী প্রতিরক্ষামূলক ‘গিয়ার’ পরে আছে। মাতালের মতো গুলি ছুড়ছিল সে। তারপরই তাকে মোকাবিলা করতে একজন যুবক উদ্যোগ নেন। নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডকে তিনি বলেছেন, ওই যুবক সুযোগ বুঝে হামলাকারীকে পাকড়াও করে ধরে এবং তার কাছ থেকে একটি অস্ত্র কেড়ে নেয়। তারপরই ওই যুবক মসজিদে থাকা মুসল্লিদের সুরক্ষা দেয়ার চেষ্টা করেন। তবে তিনি জানতেন না কিভাবে অস্ত্র চালাতে হয়।

ওই যুবককেও হিরো হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন মাজহারুদ্দিন। তিনি বলেছেন, ওই ‘হিরো’ বন্দুক চালানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তিনি বন্দুকের ট্রিগার খুঁজে পান নি। এ সময় হামলাকারীকে ধরতে পিছন থেকে দৌড়াতে থাকেন ওই ‘হিরো’। কিন্তু বাইরে তখন একটি গাড়িতে হামলাকারীর সহযোগীরা অপেক্ষা করছিল। হামলাকারী দৌড়ে গিয়ে তাতে উঠে পড়ে এবং পালিয়ে যায়। উৎস: মানবজমিন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়