প্রভাষ আমিন : নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ৪৯ জন মারা গেছেন। তারচেয়ে বড় কথা হলো, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সদস্যরা অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন। তারাও জুমার নামাজ পড়তে সে মসজিদে গিয়েছিলেন। এক নারী তাদের সতর্ক করলে তারা কোনোরকমে জীবন নিয়ে ফিরে আসতে পেরেছেন। এই হামলার ঘটনা নিয়ে দেশে-বিদেশে তোলপাড়, নিন্দার ঝড়।
শুক্রবার সকালে এই খবর পাওয়ার পর টিভি খুলে দেখি বাংলাদেশের একটি টিভি চ্যানেল এই হামলার ভিডিও ফুটেজ ‘এক্সক্লুসিভ’ ব্যান্ড দিয়ে চালাচ্ছে। প্রথমে ভেবেছি, বাংলাদেশে ক্রিকেট দলের সঙ্গে বাংলাদেশের অনেক টিভি সাংবাদিকই গেছেন। হয়তো ঘটনাচক্রে সেই টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক এক্সক্লুসিভ ফুটেজ পেয়ে গেছেন। দেখে একটু চমকেও গিয়েছি, এতোবড় হামলার ভিডিও ফুটেজ শুধু বাংলাদেশি একটি টিভি চ্যানেল পেয়েছে, এ তো বিশাল ব্যাপার। এক্সক্লুসিভ বলতে এতোদিন বুঝেছি, যে ঘটনায় ঐ টিভি ছাড়া আর কেউ ছবি তুলতে পারেনি বা অন্যের তোলা ছবি হলেও যেটি তাদের কাছে ছাড়া আর কারো কাছে নেই। কিন্তু একটু পরই ভুল ভাঙ্গে।
ক্রাইস্টচার্চে হামলার ছবি কোনো টিভি চ্যানেলই তুলতে পারেনি।হামলাকারী নিজেই এ ছবি তুলেছে। সম্ভবত মাথায় লাগানো কোনো ক্যামেরা দিয়ে তুলেছে এবং ১৭ মিনিট ধরে তা ফেসবুকে লাইভ করেছে। সেই ফুটেজ এখন বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের মোবাইলে আছে। নিউজিল্যান্ডের হামলাকারীর ফেসবুক লাইভের ভিডিও কী করে বাংলাদেশের একটি টিভি চ্যানেলের ‘এক্সক্লুসিভ’ হয়? এটাই বুঝতে পারছি না।
তারচেয়ে বড় কথা হলো, এ ধরনের নৃশংষ হামলার ছবি, সত্যি সত্যি এক্সক্লুসিভ হলেও, সেটি চালানো উচিত কিনা? এই প্রশ্নও এখন বিশ্বজুড়ে আলোচিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে ক্রাইস্টচার্চের পুলিশ কমিশনার এই হামলার ছবি সম্প্রচার না করতে সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। ইউটিউব ভিডিওটি সরিয়ে ফেলার কথা ভাবছে। আর সেখানে আমরা প্রতিযোগিতা করে ‘এক্সক্লুসিভ’ ব্যান্ড লাগিয়ে প্রচার করছি।
শুধু এই একটি ঘটনা বা এই একটি চ্যানেলই নয় টিআরপির লোভে আমরা অসুস্থ এক প্রতিযোগিতায় নামি প্রতিদিন। কে, কার আগে খবর দেবো; সেই প্রতিযোগিতা। খবরটি সত্য কিনা, সেটি যাচাই করার জন্যও অপেক্ষা করি না। দর্শক ধরার এই অসুস্থ প্রতিযোগিতায় আমরা হয়তো মাঝে মাঝে এগিয়ে যাই, কিন্তু সাংবাদিকতাটা পিছিয়ে পড়ে বারবার।
লেখক : হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ
আপনার মতামত লিখুন :