ডেস্ক রিপোর্ট : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন কেন্দ্র করে ছাত্রদলের দুরবস্থার চিত্র ফুটে উঠেছে। ঢাবিসহ দেশের কোথাও এ ছাত্র সংগঠন যে আগের সেই ভিত আর নেই তা ধরা পড়েছে বিএনপির হাইকমান্ডের চোখে। ছাত্রদলের এ দুরবস্থা নিয়ে গত বুধবার বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটিতেও আলোচনা হয়। এ বৈঠকে স্কাইপির মাধ্যমে যুক্ত হওয়া দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও ছাত্রদলের এ দুরবস্থায় বিচলিত। আমাদের সময়
বিএনপির পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, বর্তমানে যারা ছাত্রদলের নেতৃত্বে আছেন তাদের সঙ্গে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত শিক্ষার্থীদের কোনো যোগাযোগ নেই। প্রমাণ হিসেবে তারা ডাকসু নির্বাচনের কেন্দ্রীয় ও হল সংসদগুলোতে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিতে না পারাকে সামনে আনছেন। পাঁচটি ছাত্রী হলের একটিতে ভিপি ছাড়া অন্য কোনোটিতেই প্রার্থী দিতে পারেনি এ সংগঠনটি।
এ অবস্থায় নিয়মিত শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে ছাত্রদলকে ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দিয়েছেন তারা। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, আমরা ছাত্রদলকে ঢেলে সাজাব। যাদের ছাত্রত্ব নেই, তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী দলের অন্য ১০ অঙ্গসহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পদে আসীন করা হবে। যাতে কেউ বাদ না পড়ে, সেদিকে আমরা খেয়াল রাখব। বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সর্বশেষ কেন্দ্রীয় কমিটি হয় ২০১৪ সালের অক্টোবরে।
দুবছর মেয়াদি কমিটি পার করেছে প্রায় পাঁচ বছর। ছাত্রত্ব নেই নেতাদের কারোরই। এ কমিটির সদস্য ৭৩৪ জন। সংগঠনটির ইতিহাসে এমন বৃহৎ কমিটি এটিই প্রথম। এর আগের আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল-হাবিবুর রশিদ হাবিব কমিটি ছিল ২৯৪ সদস্যের।
তারও আগে সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু-আমিরুজ্জামান খান আলিম কমিটি ছিল ১৭১ সদস্যের। পাশাপাশি সাংগঠনিক ইউনিট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটিতে সদস্য রয়েছে দুই শতাধিক। তিতুমীর সরকারি কলেজ শাখার কমিটি ৬৩৯ সদস্যের। ঢাকা কলেজ শাখার কমিটি ৬৮৭ সদস্যের। একইভাবে মহানগর উত্তর শাখার কমিটিতেও সদস্য ছয় শতাধিক। তবে মাঠের চিত্র ভিন্ন।
দেখা গেছে, এসব ঢাউস কমিটি থাকলেও সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় ছাত্রদলের কোনো কার্যক্রম নেই। শুধু তাই নয়, দেশের অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়Ñ রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগরসহ অন্য শিক্ষাঙ্গনগুলোতেও অবস্থা আরও করুণ। জেলা ও মহানগর কমিটিগুলোও নামসর্বস্ব।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আমাদের সময়কে বলেন, সরকারের নানা অত্যাচারের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রদলসহ বিরোধী সংগঠনগুলো ১০ বছর ধরে কার্যক্রম চালাতে পারছে না। এর পরও প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও ছাত্রদল দেশের সর্ববৃহৎ সংগঠন। এ সংগঠনটিকে আরও শক্তিশালী করতে আমরা পদক্ষেপ নেব। সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচনে ছাত্র সংগঠনটির দৈন্যদশার প্রমাণ দেখা গেছে।
ডাকসুর ভিপি, জিএস ও এজিএস পদে প্রার্থী দিতে পারলেও সর্বোচ্চ ভোট প্রাপ্তি ছিল পাঁচশরও কম। এ ছাড়া নেতাকর্মীর অভাবে পূর্ণাঙ্গ প্যানেলও দিতে পারেনি তারা। ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে হল ও কেন্দ্রীয় সংসদের প্রায় সব পদেই জয়লাভ করে ছাত্রদল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রদলের ক্যাম্পাসভিত্তিক রাজনীতি না থাকায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে নামটিই অপরিচিত হয়ে পড়েছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বেতন-ফি বৃদ্ধির বিরুদ্ধে আন্দোলন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভ্যাটবিরোধী আন্দোলনসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোনো যৌক্তিক আন্দোলনেই পাশে দাঁড়াতে পারেনি ছাত্রদল। মূলত ছাত্রদলে নিয়মিত শিক্ষার্থী কম থাকার কারণেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ নেই বললেই চলে। এমন অবস্থায় বিকল্প খুঁজছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে বরাবরই সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিরোধী ছাত্র সংগঠনকে পাশে পেলেও ছাত্রদলই গত ১০ বছর ধরে ব্যতিক্রম।
তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে কখনই দাঁড়াতে পারেনি। এমন পরিস্থিতিতে বিকল্প বিভিন্ন প্লাটফর্মের দিকে ঝুঁকছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। যার বড় প্রমাণ কোটা সংস্কার আন্দোলন। বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা সারাদেশে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। দেশের বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাদের আহ্বায়ক কমিটিও রয়েছে। গত সোমবারের ডাকসু নির্বাচনে ভিপি ও সমাজসেবা সম্পাদক পদে জয় পায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রার্থী নুরুল হক নুর ও আকতার হোসেন।
এ ছাড়া বেশিরভাগ ছাত্রী হলেও কোটা সংস্কার আন্দোলন সমর্থিত প্রার্থীরাই জয়লাভ করেন। কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন হল সংসদে সব পদেই ছাত্রলীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দেখা দেয় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্যানেল। সেখানে ছাত্রদল প্রতিদ্বন্দ্বিতা দূরের কথা, পূর্ণাঙ্গ প্যানেলই দিতে পারেনি। ডাকসু নির্বাচনের পরেই রব উঠেছেÑ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের। এমন পরিস্থিতিতে এসব প্রতিষ্ঠানেও ছাত্রদলের অবস্থান নেই বললেই চলে। এসব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজেও কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রার্থী দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
রাজনীতি সচেতন শিক্ষার্থীরা এ ক্ষেত্রেও ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রার্থীদের। এমন অবস্থায় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রদলের অবস্থান অস্তিত্বহীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ছাত্রদলের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা বলেছেন।নিয়মিত শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের কমিটি গঠন, নিয়মিত কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন ইউনিটের কমিটি গঠনের মাধ্যমে ছাত্রদলকে রাজনীতির মূলধারায় টিকিয়ে রাখতে হবে। এর বাইরে ছাত্রদলের কথিত নিয়ন্ত্রক বড় ভাইদের বলয়ের বাইরেও নিয়ে আসতে হবে।
গত প্রায় ১০ বছর ধরেই এসব কথিত বড় ভাইয়েরা ছাত্রদলের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেন। সংগঠনে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে তুলনামূলক অযোগ্যরাই স্থান পান কেন্দ্র ও বিভিন্ন ইউনিটে। তৃণমূলের কর্মীরা বলছেন, বড় ভাইদের প্রভাবে ছাত্রদল চলতে থাকলে সংগঠনটি একসময় অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বে। যথাসম্ভব নিয়মিত ছাত্র, যোগ্য ও ত্যাগীদের সমন্বয়ে নির্দিষ্ট সময় পর পর কমিটি গঠন করলে ধীরে ধীরে দৈন্যদশা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
আপনার মতামত লিখুন :