সাইফুদ্দিন আহমেদ নান্নু : গতবছর বাঙলা বিভাগের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের নিবন্ধনের জন্য কলাভবনের দোতলায় ডিপার্টমেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে ‘অপরাজেয় বাংলা’কে দেখছিলাম।
অপরাজেয় বাংলাকে কেমন যেনো অচেনা অচেনা লাগছিলো। কিন্তু কেন তা লাগছিলো ঠিক ধরতে পারছিলাম না। উপর থেকে দেখছি বলেই হয়তো এমনটা লাগছিলো। আবার মনে হলো, নাহ, ঠিক এখানে দাঁড়িয়ে কম করে হলেও হাজারবার দেখেছি। আবার মনে হলো, অনেক বছর পর দেখছি বলেই হয়তো এমনটা মনে হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে খটকা লাগবে কেন! ভাবতে ভাবতে মনে পড়লো, নাহ্ রঙটাতো সাদা ছিলো না। ছিলো ধুসর বর্ণের। আচ্ছা রঙের কথা বাদই দেই, তবুও কোথায় যেনো সমস্যা আছে! সেমিনার কক্ষ থেকে রেজিস্ট্রেশন শেষে বন্ধুদের নিয়ে নীচে এলাম, ছবি তোলার কথা বলে। ছবি তুলতে গিয়ে চোখে বাঁধলো অন্য সমস্যা।
অপরাজেয় বাংলাকে আগের তুলনায় ছোট ছোট লাগছে যেন! এ ভাবনাটা তারপর আর থাকেনি। ভুলেই ছিলাম।
গত কদিন ধরে ডাকসুর খবর, ছবি দেখতে দেখতে আবার সেই খটকাটা মাথায় এসেছে।
নতুন করে পড়তে লাগলাম, পুরনো ছবি খুঁজলাম। খুববেশি পুরনো ছবি পেলামও না। যা পেলাম তার সাথে নতুন ছবি মিলিয়ে বুঝলাম ভূমি থেকে বেদীর উচ্চতা মনে হয় ৬ ফুট আর এখন নেই। ভাস্কর্যের সামনে, পাশের রাস্তা উঁচু করে ফেলা হয়েছে। গায়েব হয়ে গেছে ভাস্কর্যের পাদদেশের আস্ত একটি ধাপের আদি রূপটাই। ভাস্কর্যের নান্দনিকতার সাথে তার বেদীর উচ্চতা এবং ভাস্কর্যের মূল কাঠামোর উচ্চতার একটা গভীর সম্পর্ক আছে। বেদীর উচ্চতা কম হলে বা কমিয়ে দিলে ভাস্কর্যের সামগ্রিক নান্দনিকতা চরমভাবে নষ্ট হয়। ঢাবি কর্তৃপক্ষ রাস্তা উঁচু করার সময় সেটি মনে হয় আমলে নেননি। মূল ডিজাইনে থাকা বেদীমূলের একটি ধাপের আদিরূপ হারিয়ে গেলে যে ভাস্কর্যের অঙ্গহানি ঘটে সেটাও বুঝেননি। আর রঙ! সেটাও বদলে ফেলা হয়েছে। বাংলাদেশের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী কোনো পুরাকীর্তির রঙ পরিবর্তন, কাঠামো পরিবর্তন আইনত শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
বলবেন, সংস্কার করতে গিয়ে হয়তো এমনটা ঘটেছে। না প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন, স্থাপনা সংস্কারেরও বিধিবদ্ধ নিয়ম আছে, সেটাও মানা হয়নি এখানে। অথবা প্রয়োজনটাও মনে জাগেনি। কাজটি অন্যায় হয়েছে, খুব বড় অন্যায়। ‘অপরাজেয় বাংলা’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় বলে কাজটিকে বড় অন্যায় বলছি, জমিদার বাড়ির আঙিনায় হলে কেবল অন্যায় বলতাম। [টিএসসির সড়কদ্বীপে এখন আর ঘাসের সবুজ গালিচা নেই। সিমেন্ট, টাইলসের আধুনিকতা, তাও ভাঙা, কাঁদাময় বিশ্রি টাইলস, ছোটবড় গর্ত। সেই ঘাসের গালিচায় বসে পথনাটক, গণসঙ্গীত আর প্রতিবাদী বক্তৃতার কথা আজও মনে আছে। সেই সড়কদ্বীপ এখন ফুঁচকা চটপটি বার্গারের বাগান।] ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :