নিতিশ চন্দ্র বর্মন: ঠাকুরগাঁও সদরে একটি হিমাগারে বিস্ফোরণের পর আশপাশে অ্যামোনিয়া গ্যাস ছড়িয়ে পড়েছে। এতে বহু মানুষ অসুস্থ হওয়ার পাশাপাশি বিস্তীর্ণ এলাকার ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আকচা ইউনিয়নের উত্তর ঠাকুরগাঁও গ্রামে ‘আমানত কোল্ড স্টোরেজ প্রাইভেট লিমিটেডে’ সোমবার গভীর রাতে বিস্ফারণ ঘটে বলে স্থানীয়রা জানান। তবে মঙ্গলবার সারাদিনই অ্যামোনিয়া ছড়িয়ে কৃষকরা এ ক্ষতির শিকার হন। এ কারণে অন্তত ৬০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের। ঘটনার ৩দিনেও ক্ষতিপুরণ পাননি ক্ষতিগ্রস্থরা। ক্ষতিগ্রস্থরা অবিলম্বে ক্ষতিপুরণ এর দাবি জানিয়েছেন। বিস্ফোরণের একদিন পর তা মেরামত করা হয়েছে বলে হিমাগার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উত্তর ঠাকুরগাঁও গ্রামে অবস্থিত আমানত কোল্ড স্টোরেজ প্রাইভেট লিমিটেডের অ্যামোনিয়া গ্যাস ছড়িয়ে যাওয়ার কারণে প্রায় ৪০ একর জমির মরিচ, ভুট্টা, মিষ্টি কুমড়া ক্ষেত, লিচু ও আম বাগানের পাতাগুলো ঝলসে গেছে। এছাড়া অসুস্থ হয়েছে নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ ও শিশু। এ ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী ক্ষতিপূরণ দাবি করে বুধবার বিকালে কোল্ড স্টোরেজের সামনে বিক্ষোভ করেছেন।
স্থানীয়রা জানায়, সোমবার রাত ২টার দিকে আমানত কোল্ড স্টোরেজ প্রাইভেট লিমিটেডে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ওই হিমাগারের ভেতরে অ্যামোনিয়া গ্যাসের পাইপ ফেটে যায়। এরপর মুহূর্তের মধ্যে নির্গত অ্যামোনিয়া গ্যাস গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। বহু অসুস্থ মানুষ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। অন্তত ৪০ একর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে স্থানীয়দের ভাষ্য।
ক্ষতিগ্রস্থ আবদুল আলিম বলেন, কোল্ড স্টোরেজের অ্যামোনিয়া গ্যাসের কারণে আমার আড়াই বিঘা জমির মিষ্টি কুমড়া ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। এতে করে আমার ছয় লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
পুহাতু বর্মন বলেন, অ্যামোনিয়া গ্যাসে তার ১ একর জমির মরিচ ক্ষেত ঝলসে গেছে; যাতে তার অন্তত ১ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
স্থানীয় ধীরেন রায়, ধনি চরণ, ভবেশ চন্দ্র রায়, রফিকুল ইসলাম বলেন, অ্যামোনিয়া গ্যাসের কারণে গ্রামের প্রায় ৪০ একর জমির বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত ও বিভিন্ন বাগান নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণে অন্তত ৬০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের।
গৃহবধূ আলেয়া বেগম বলেন, হঠাৎ করে রাতে গ্রামে কোল্ড স্টোরেজের অ্যামোনিয়া গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে। এতে করে নাক-মুখ জ্বালাপোড়া করে, পাশাপাশি শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এই গ্যাসের কারণে গ্রামের অসংখ্য মানুষ অসুস্থ হয়েছেন।
সদর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দিদারুল ইসলাম বলেন, আমানত কোল্ড স্টোরেজ প্রাইভেট লিমিটেডের অ্যামোনিয়া গ্যাস উত্তর ঠাকুরগাঁও গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে প্রায় ৪০ একর জমির ফসল ও বাগান নষ্ট হয়ে যায়। আমরা এই এসে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করছি।
উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার আব্দুল্লাহ আল আমিন খান বলেন, অ্যামোনিয়া গ্যাসের কারণে উত্তর ঠাকুরগাঁও গ্রামে অসংখ্য মানুষ অসুস্থ হয়েছে।
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. আবু মো. খয়রুল কবীর জানান, গ্যাসের কারণে অনেকে সামান্য অসুস্থ হয়েছিলেন। এখন সবাই মোটামুটি আশঙ্কামুক্ত। আমরা ৭০ জন নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ ও শিশুকে চিকিৎসা দিয়েছি। এর মধ্যে ছয় জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে এতে জনস্বাস্থের দীর্ঘস্থায়ী কোনো ক্ষতি হবে না বলে তিনি জানান।
এদিকে স্থানীয় কৃষক ও কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, হিমাগারের গ্যাসের কারণে কৃষকের আবাদকৃত মরিচ, গম, মিষ্টি কুমড়া, আম ও লিচু গাছ ঝলসে গেছে। জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাগণ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ও ৭০ জন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা তৈরি করেছেন।
সদর উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দিদারুল ইসলাম জানান, হিমাগারের গ্যাসে ৭০জন কৃষকের প্রায় ৪০ একর আবাদি জমির ফসল পুড়ে গেছে। আমরা এই তালিকা উপজেলা প্রশাসনের কাছে জমা দিয়েছি।
আকচা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সুব্রত কুমার বর্মন বলেন, কোল্ড স্টোরেজের অ্যামোনিয়া গ্যাসে কৃষকের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদিকে ঘটনার ৩দিনেও ক্ষতিপুরণ পাননি ক্ষতিগ্রস্থরা। মালিক ক্ষতিপুরণ নিয়ে টালবাহানা করছে। তাই দ্রুত ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ঘটনাটি জানার পর ঘটনাস্থল মেডিকেল টিম পাঠানো হয়েছে, সেইসাথে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করার জন্য একজন কৃষি অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
আমানত কোল্ড স্টোরেজের ফোরম্যান আব্দুল জব্বার বলেন, রাতে হঠা বিস্ফোরণে একটি পাইপ ফেটে অ্যমোনিয়া গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে। এরপর একদিন চেষ্টায় তা আবার মেরামত করা হয়।
আমানত কোল্ড স্টোরেরেজের মালিক আব্দুল্লাহ বলেন, এটি একটি দুর্ঘটনা। কৃষি অফিসার মাঠ পর্যায়ে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করছেন। তালিকা তৈরি হলে জানা যাবে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে।ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ হওয়ার পর আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা করব বলেও জানান তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :