শিরোনাম
◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ চলচ্চিত্র ও টিভি খাতে ভারতের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করলেই ব্যবস্থা: ইসি আলমগীর  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো

প্রকাশিত : ১৪ মার্চ, ২০১৯, ০২:০৭ রাত
আপডেট : ১৪ মার্চ, ২০১৯, ০২:০৭ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ঢাকসু নির্বাচন ও ছাত্রলীগের অপরিপক্বতা!

অসীম সাহা : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসংসদ নির্বাচন (ডাকসু) নিয়ে নির্বাচনের আগে ও পরে বহু নাটকীয়তার জন্ম দিয়ে অবশেষে তার যা ফলাফল দাঁড়িয়েছে, তাতে প্রায় সবগুলো হলে বিশেষত ছাত্রীহলে স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং ছাত্রলীগের প্রার্থীরা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদসহ সবগুলোপদেই জয়লাভ করেছে। এ-নির্বাচনে ছাত্রদল ও ও বামছাত্রজোট একেবারে উধাও। কোটা অন্দোলনের নেতা নুরুল হক নূরের ডাকসুর ভিপি পদে জয়লাভ সকলকে বিস্মিত করেছে। আমাকেও।

এর আগে নূরের নাম আমি শুনিনি। কিন্তু হঠাৎ করে ডাকসুর ভিপি পদে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে তার মতো একটি ছেলে কী করে ছাত্রলীগের সভাপতি শোভনকে হারিয়ে দিতে পারলো? ডাকসুতে দুটি পদ ছাড়া সবগুলো পদেই যেখানে ছাত্রলীগের জয়জয়কার, সেখানে শোভনের এই হারের কারণ কী? তার অযোগ্যতা? সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতার অভাব? নির্বাচনের পরে পোস্টমর্টেমে এসব বিষয় হয়তো বেরিয়ে আসবে। কিন্তু তার আগেই আমার মনে প্রশ্ন জাগছে, যে ভোটাররা ডাকসুতে রব্বানীসহ অন্যদের ভোট দিয়ে জয়লাভ করিয়েছে, সেই ভোটারারই কি শোভনকে ভোট দেয়নি? নাকি নতুন ভুয়া ভোটার যুক্ত করে কারচুপির মাধ্যমে নুরুল হককে জিতিয়ে দেয়া হয়েছে? এই কা-টা কে করলো? বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নাকি নুরুল হকের পক্ষের মাস্তানবাহিনী? এমন অভিযোগ কিন্তু কেউই করেনি।

আর করলেও সেটা হতো হাস্যকর। যদিও প্রথমদিকে ছাত্রলীগ নুরুল হকের এই বিজয়কে মেনে নিতে চায়নি। তারা ভোট বাতিল করে নতুন নির্বাচনের দাবিতে ভিসির বাড়ির সামনে বিক্ষোভ মিছিলও করেছে। তা হলে একরাতের মধ্যে এমন কী ঘটলো যে, ছাত্রলীগ সভাপতি শোভন নুরুল হককে বুকে নিয়ে নির্বাচনকে মেনে নিতে দ্বিধাবোধ করলো না? নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর পর যেখানে স্বতন্ত্রসহ ছাত্রদল ও বিভিন্ন জোট নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে নতুন নির্বাচনের দাবিতে সব ধরনের মিছিল, মিটিং, ভিসির বাসভবন ঘেরাও ও ধর্মঘট পর্যন্ত করেছে এবং সেদিনই ছাত্রলীগ নির্বাচনকে সুষ্ঠু এবং প্রতিপক্ষকে ভোট বানচালের ষড়যন্ত্রকারী হিশেবে চিহ্নিত করে সাংবাদিক সম্মেলন কারেছে, সেখানে পরের দিনই কেন তারা উল্টোরথে যাত্রা শুরু করলো?

ছাত্রলীগ সভাপতি শোভন নুরুল হককে বুকে জড়িয়ে ধরে কি আগুনে জল ঢেলে দেয়ার চেষ্টা করলো? ছাত্রলীগ কি ভাবলো, এতে তাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়লো? দুদিন দুরকমের কথা বললে বা ভূমিকা রাখলে ইমেজ বাড়ে? নাকি একটি ঐতিহ্যবাহী দলের অপরিপক্বতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে? তারা মনে করলো, এতে তাদের ঔদার্য দেখে সকলে করতালি দিয়ে বাহ্বা বাহ্বা ধ্বনিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রকম্পিত করে তুলবে? তা যে হচ্ছে না, ছাত্রলীগ ছাড়া যারা জয়লাভ ও পরজয়বরণ করেছে, তারাসহ অন্য সকলে এই নির্বাচন বাতিল করে ৩ দিনের চূড়ান্ত আল্টিমেটাম দিয়ে পুনর্নির্বাচন দাবি করে তা প্রমাণ করেছে। এখন ছাত্রলীগ কী করবে? আন্দোলন ঠেকাতে প্রতিপক্ষের ওপর হামলে পড়বে? তাতে ছাত্রলীগের ইমেজ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা কি ছাত্রলীগ নেতৃত্ব একবারও ভেবে দেখেছে? আমি জানি না, এমন ধরনের জগাখিচুড়িমার্কা পরামর্শ ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দকে কারা দিয়েছেন! যারাই দিয়ে থাকুন, তারা যে আসলে রাজনীতিতে একেবারেই আনাড়ি কিংবা অতিশয় ধূর্ত, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর যদি ছাত্রলীগ নেতৃত্ব নিজেরাই এই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে, তা হলে তারা আত্মঘাতী কাজ করেছে। এতো অপরিপক্ব রাজনৈতিক মেধা নিয়ে ছাত্রলীগ ভবিষ্যতে কী করে তাদের সংগঠনের জন্য ভালো কাজ করবে এবং ডাকসুতে ছাত্রকল্যাণমুখী ভূমিকা পালন করবে, তাই ভাবছি! আসলে ‘ভাবিয়া করিও কাজ/করিয়া ভাবিও না’ এই আপ্তবাক্যটি সম্ভবত ছাত্রলীগ নেতৃত্বের জানা নেই। এখন সবকিছু নিয়ে একটা লেজেগোবরে অবস্থায় ছাত্রলীগ দিশেহারা। এর প্রভাব পড়বে ব্যাপক ছাত্রসমাজের মধ্যে এবং দেশীয় রাজনীতিতেও এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব আওয়ামী লীগের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।

অতিউৎসাহী যারা চিরকাল আওয়ামী লীগকে ডুবিয়েছে, সরকারকে বিপদগ্রস্ত করেছে; এখন তারা দলের জ্বলন্ত অগ্নিশিখা ছাত্রলীগকে ডোবানার জন্য দলের অভ্যন্তরেই ঘাপটি মেরে আছেন। এই ধূর্ত শেয়ালগুলো খন্দকার মোশতাকের বংশধর। এদের দল থেকে সরাতে না পারলে এরা নেত্রীকে যেমন কুপরামর্শ দিয়ে তার পতনের পথকে মসৃণ করবে, তেমনি ছাত্রলীগকেও দিগ্ভ্রান্ত পথিকে পরিণত করবে।
২৮ বছর পর অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগ যে সুবিবেচনার পরিচয় দেয়নি, এখন সেটা তারা নিশ্চয়ই মর্মে মর্মে উপলব্ধি করছে। কিন্তু এই উপলব্ধি কি তাদের জন্য অদূর ভবিষ্যতে কোনো সুফুল বয়ে আনবে এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

লেখক : কবি ও সংযুক্ত সম্পাদক, দৈনিক আমাদের নতুন সময়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়