ফিরোজ আহমেদ : ভাইরে, একটা সোজা কথা বলি। দুনিয়ার সকল মতাদর্শের পেছনে, দর্শনের পেছনে নানা প্রকারের খিদেই প্রধান ভূমিকা রাখছে। সেই আদিম যুগ থেকে পরশুর কোটা সংস্কার আন্দোলন পর্যন্ত।
দুনিয়ার জন্য যা সত্য, বাঙালি জাতিও তার বাইরে নয়। ভাষা আন্দোলন বলেন, ঊনসত্তর বলেন, তেভাগা বলেন, বাঙালি জাতির কোনো আন্দোলনই এই ব্যাকরণের অবাধ্য হয়নি। সমাজবাদ, নারীবাদ, পরিবেশবাদ, জাতীয়তাবাদÑ কোনো মতবাদই জন্ম নেয়নি এই চাহিদা ছাড়া। সুবিধাজনক অবস্থায় আছেন কিংবা অতিভালো-মেধাবী যদি হয়ে থাকেন চাকরি-বাকরি-চাষ-বাস তুচ্ছ বোধ হয়, পরের দাসত্ব বোধ হয়, সেই সুবাদে বাকি সব ধুলোমাটির মানুষের বাস্তবতাকে অস্বীকার করবেন, এ বড় অন্যায়। উর্দুতে পরীক্ষা দিতে হলে বাঙালি ছেলেমেয়েরা পিছিয়ে পড়বে, সেই ক্ষোভ ভাষা আন্দোলনের জ্বালানি ছিলো।
এসব বাস্তব কারণেই মানুষ চিন্তা বদলায়। ধর্মাত্মারা সেইটাকে পবিত্রতার চাদর দিছেন, সাহিত্যিকরা সৌন্দর্যের চাদর দিছেন, দার্শনিকরা মতাদর্শের চাদর দিয়েন এবং ইত্যাদি ইত্যাদি। এতো কথা বলার কারণ আমার বহু শ্রদ্ধেয় কিংবা স্নেহভাজন প্রিয়জনকে দেখছি সমকালের অন্যতম আপসহীন ও সফল সংগঠককে চাকরির জন্য লোভাতুর মধ্যবিত্তের আন্দোলনের নেতা হিসেবে উপহাস করছেন।
পারলে বরং এই আন্দোলনটার সমাজতাত্ত্বিক নানা চেহারা নিয়ে গবেষণা করেন। পর্যালোচনা করেন। কিন্তু অন্য কোনো আন্দোলনের চাইতে অপবিত্র আন্দোলন এটা নয়, অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ বা পবিত্রতর যদি নাও হয়ে থাকে একটু খুঁটে দেখতে শিখলেই বুঝতে পারবেন, সমাজে অন্যায্য ক্ষমতাকাঠামো, মুক্তিযুদ্ধের নাম ভাঙিয়ে একটা সামন্তজমিদারতন্ত্র কায়েমের বিরুদ্ধে এক গভীর চেতনার সারবস্তু সেখানে আছে। পারলে তাকে ভাষা দিন। নিজেদের জন্য এটুকুই শুধু বলতে পারি, সেই চেষ্টা সাধ্যমতো করেছি। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :