শিরোনাম
◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ১৩ মার্চ, ২০১৯, ০৫:৪০ সকাল
আপডেট : ১৩ মার্চ, ২০১৯, ০৫:৪০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে বৈরী সম্পর্কের পেছনে স্বাধীনতার ঘোষণার ক্ষেত্রে ভিন্ন অভিমত, বঙ্গবন্ধুকে যোগ্য সম্মান না দেয়ার প্রবণতা, ১৫ আগস্ট বেগম জিয়ার জন্মদিন পালন, জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা তো খানিকটা রয়েছেই

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আশিক রহমান

ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেছেন, বিএনপি কেন জামায়াত থেকে বেরিয়ে যাবে? বিএনপি তো একটা বড় রাজনৈতিক দল। জামায়াতের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই, এটা বলার পরিস্থিতি এখন এসেছে। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মতো লোক এ বিষয়ে কথা বলেছেন। জামায়াতে ইসলামী থেকে বিএনপিকে দূরে সরে আসার পরামর্শ দিচ্ছেন। এছাড়া এখন অনেকেই বলার চেষ্টা করছেন যে, বিএনপি মুক্তিযোদ্ধাদের দল। এই দলের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের একসঙ্গে থাকা বা একসঙ্গে কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। আমার মনে হয়, আল্টিমেটলি দেখা যাবে বিএনপির সঙ্গে জামায়াত আর থাকছে না। এ নিয়ে বিএনপির উদ্যোগী হওয়ার দরকার আছে বলে মনে হয় না আমার। বরং জামায়াতকেই সরে যেতে হবে বিএনপির কাছ থেকে।

আমাদের নতুন সময়কে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, জাতি হিসেবে আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ সৃষ্টি করা। এই স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে কোনো দল বা কোনো গ্রুপ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে থাকলে এই দলের সঙ্গে তাদের থাকার দরকার নেই। বিএনপি হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধাদের দল। মুক্তিযোদ্ধাদের দলের সঙ্গে জামায়াতের থাকার দরকার নেই। থাকা তাদের সঙ্গতও নয়।

এক প্রশ্নের জবাবে ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, বতর্মানে দেশে যে রাজনীতি চলছে, তা জনগণের রাজনীতি নয়। এই রাজনীতির ক্ষেত্রে জনগণের কোনো ভূমিকা নেই। যারা রাজনীতির মালিক-মোক্তার তারা এই রাজনীতির হর্তাকর্তা নন। রাজনীতি যদি জনগণের উন্নয়নের মাধ্যম হয়, অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে যদি জনগণের দৌড়গোড়ায় পৌঁছাতে হয়, জনগণকে আইনের শাসনের মধ্যে নিয়ে আসতে হয়, জনগণের অধিকার যদি অপ্রতিরোধ্য করে গড়ে তুলতে হয়, এর কোনো বিকল্পও নেই। যতোদিন এটা আমরা নিশ্চিত করতে না পারবো ততোদিন আমাদের এভাবে ভুগতে হবে। আমি মনে করি, আমার প্রিয় ছাত্র নাঈমুল ইসলাম খান বা এ ধরনের যারা রয়েছেন সাংবাদিকতায় তাদের ভূমিকা আরও সৃজনশীল হওয়া প্রয়োজন। আরও সাহসী পদক্ষেপের অধিকারী হোক তারা। তা না করতে পারলে দেশে গণতন্ত্র আরও সংকুচিত হয়ে পড়তে পারে।

তিনি বলেন, দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন নিরপেক্ষ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। এই নির্বাচন এমন পরিবেশে হবে যেখানে প্রত্যেক ভোটার ইচ্ছামতো তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবে এবং প্রত্যেক প্রার্থী তার ভোটারের কাছাকাছি যেতে পারবে মিটিংয়ের মাধ্যমে, মিছিলের মাধ্যমে, সমাবেশের মাধ্যমে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ৩০ ডিসেম্বর হওয়ার কথা থাকলেও ২৯ ডিসেম্বর রাতেই হয়ে গিয়েছিলো বলে অনেকেই মনে করেন। সেটা কীভাবে হয়েছে তা সবাই জানে। এই ধারণা যদি সত্য হয় তাহলে আমরা যেজন্য সীমাহীন ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের অগ্নিতে ঝাঁপ দিয়েছিলাম তা অর্থহীন হয়ে পড়ে। মুক্তিযুদ্ধের অগ্নিকু- থেকে জন্মলাভ করে স্বাধীন বাংলাদেশের জয়যাত্রা শুরু হয়েছিলো গণতন্ত্রের আশীর্বাদ মাথায় নিয়েই। কিন্তু আজকে যে অবস্থা, এমন যন্ত্রণার মধ্যে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ কেন পড়লো? যারা শহীদ হয়েছেন তাদের কাছে আমাদের জবাবটা কী হবে? কী জবাব দেবো আমরা? দায়টা যারা ক্ষমতার রাজনীতি করতে চান, যারা কথায় গণতন্ত্রে বিশ^াস করেন, কিন্তু কাজে বিশ^াসী নন, জনগণকে এ দেশের মালিক হিসেবে স্বীকার করতে চান না, তাদেরই এর জবাব দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেয়া, তারেক রহমানকে নির্বাসিত করা এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কয়েকমাস আগে থেকে যদি আপনি হিসেব করেন তাহলে দেখতে পাবেন প্রায় ৯০ হাজার মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং তাতে প্রায় ২০-২৫ লাখ নাগরিক সংশ্লিষ্ট, এসব কারণে বিএনপির এই প্রাণচাঞ্চল্যহীনতা। ভৌতিকভাবে এখনো যে মামলাগুলো হয় তা কী একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে হতে পারে? পারে না। কিন্তু হচ্ছে।  এখানে আইনের শাসন যতোক্ষণ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত না হবে, ততোক্ষণ তো কেউ স্বস্তির মধ্যে থাকবে না। না থাকলে তার কার্যক্রম থাকবে কী করে? বিএনপিকে বিপুল সংখ্যক মানুষ সমর্থন করে। এটি ব্যাপক জনসমর্থনপুষ্ট একটা রাজনৈতিক দল। জনসাধারণের কোনো ভূমিকা এই মুহূর্তে নেই। ফলে যতোক্ষণ পর্যন্ত রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণের কাছে না যাবে ততোক্ষণ পর্যন্ত নাঈমুল ইসলাম খানদের মতো মানুষদের কথা বলতে হবে, চিৎকার করতে হবে। সত্য কথা বলতে হবে। সঠিকভাবে নির্বাচন পরিচালনা করার দায়-দায়িত্ব সরকারের ওপর বর্তাচ্ছে। সরকারকে এ কাজটা করতেই হবে। না করলে জনসাধারণ প্রতারিত হবে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার যখন এলো, রাজনৈতিক ক্ষমতা জনপ্রতিনিধিদের হাত থেকে শাসক-প্রশাসকদের হাতে হস্তান্তর হয়। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর ২০১৪  সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি যে নির্বাচন হয়েছে, ১৫৪ আসনে বিনা ভোটে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে গেলো, শপথও তারা গ্রহণ করলো সংসদ সদস্য হিসেবে। একটি গণতান্ত্রিক দেশে এটি কী কল্পনা করা যায়? কোনো আত্মসম্মানসম্পন্ন ব্যক্তির পক্ষে কী এটি সম্ভব? এভাবেই তো চলছে। এবার নির্বাচনের সময়ও কী ঘটেছে তা বলার দরকার নেই। আপনারা সাংবাদিকরা ভালো করেই জানেন- নির্বাচনে কী ধরনের ব্যাপার ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো কোনো সদস্য ভোটারদের বাড়িতে গিয়ে বলে এসেছে, বুথে যাওয়ার দরকার নেই! নিয়মহীনতা ও আইনের শাসন না থাকলে যে ঘটনা ঘটে, এই নির্বাচনে তা ঘটেছে। আমি বলবো দেশের জন্য যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের কাছে জবাব দেয়ার মতো আমাদের কিছু থাকছে না। আমরা কোনো জবাব দিতে পারছি না।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে বৈরী সম্পর্কের পেছনে স্বাধীনতার ঘোষণার ক্ষেত্রে ভিন্ন অভিমত, বঙ্গবন্ধুকে যোগ্য সম্মান না দেয়ার প্রবণতা, ১৫ আগস্ট বেগম জিয়ার জন্মদিন পালন, জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা খানিকটা তো রয়েছেই। এজন্য প্রধানত দায়ী হলো ক্ষমতার রাজনীতি এবং যেভাবে হোক, ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে রাখাই এসবের মূলে। বঙ্গবন্ধুর নাম শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারণ করতেন জিয়াউর রহমান এবং খালেদা জিয়া। প্রধান সমস্যা হলো ক্ষমতার রাজনীতি। কোনো একটি রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এলে তা যাতে হাতছাড়া না হয়, যে কোনোভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখার প্রবণতা থাকে। ১৫ আগস্ট বেগম জিয়ার জন্মাদিন পালন গুরুত্বপূর্ণভাবে না দেখে সামনে এগোনো উচিত। মূল ব্যাপারটা হলো দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা। তা করার জন্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের দৃঢ় সংকল্প থাকলে  এসব সমস্যার জন্ম হতো না।

বঙ্গবন্ধুর সাত মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ সম্পর্কে বলতে গিয়ে এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ই মার্চ প্রদত্ত ঐতিহাসিক ভাষণকে ইউনেস্কো বিশে^র দালিলিক ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত করে স্বীকৃতি জানিয়েছে এবং বলেছে, এটি হলো একটি ‘সমাপ্তির সূচনা’-অক্টোবর ২০১৭। তাছাড়া ইউনেস্কো এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে যে তারা এই ভাষণকে সংরক্ষণ করবেন। তবে বাংলাদেশই তা প্রচার করবে। এটি এক অনবদ্য ভাষণ। ইউনেস্কো এই ভাষণকে ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টার’ অন্তর্ভুক্ত করে চিরস্থায়ী করবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়