শিরোনাম
◈ জলাবদ্ধতা নিরসনে ৭ কোটি ডলার ঋণ দেবে এডিবি ◈ ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী আরও হিংস্র হয়ে উঠেছে: মির্জা ফখরুল ◈ বেনজীর আহমেদের চ্যালেঞ্জ: কেউ দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে তাকে সব সম্পত্তি দিয়ে দেবো ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট স্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ আইনজীবীদের গাউন পরতে হবে না: সুপ্রিমকোর্ট ◈ তীব্র গরমে স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা আরও ৭ দিন বন্ধ ঘোষণা ◈ সিরিয়ায় আইএসের হামলায় ২৮ সেনা নিহত ◈ সরকার চোরাবালির ওপর দাঁড়িয়ে, পতন অনিবার্য: রিজভী  ◈ সরকারের বিরুদ্ধে অবিরাম নালিশের রাজনীতি করছে বিএনপি: ওবায়দুল কাদের ◈ বুশরা বিবিকে ‘টয়লেট ক্লিনার’ মেশানো খাবার খাওয়ানোর অভিযোগ ইমরানের

প্রকাশিত : ১৩ মার্চ, ২০১৯, ০৩:২৩ রাত
আপডেট : ১৩ মার্চ, ২০১৯, ০৩:২৩ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

প্রতিদিন দেশি বিদেশি পর্যটকরা ছুটছেন টাঙ্গুয়ার হাওরে (ভিডিও)

প্রতিবেদক : প্রকৃতির আপন খেলায় বেড়ে উঠা টাঙ্গুয়ার হাওরের সৌন্দর্য চোখে না দেখলে ঠিক উপলব্ধি হবে না। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে, সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর ও ধর্মপাশা উপজেলার ১৮ মৌজায়, ৫১টি জলমহালের সমন্বয়ে নয় হাজার ৭২৭ হেক্টর অঞ্চল নিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওর গড়ে উঠেছে। এটি বাংলাদেশের অন্যতম বড় জলাভূমি। বর্ষাকালে হাওরটির দুপাশের ফসলি জমি মিলে আয়তন দাঁড়ায় প্রায় ২০ হাজার একর।

ভারতের মেঘালয়ের পাদদেশে অবস্থিত এই টাঙ্গুয়ার হাওর। মেঘালয় পর্বত থেকে প্রায় ৩০টি ঝরনা এসে সরাসরি মিশেছে হাওরের পানিতে। সারিসারি হিজল-করচশোভিত, পাখিদের কলকাকলি সদা মুখরিত টাংগুয়ার হাওর। এটি মাছ, পাখি এবং অন্যান্য জলজ প্রাণীর এক বিশাল অভয়াশ্রম। জীববৈচিত্র্য ও সৌন্দর্যের কারণে টাঙ্গুয়ার হাওরের সুনাম শুধু সুনামগঞ্জ বা বাংলাদেশে নয়, বাইরেও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।

জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ মিঠা পানির এ হাওর বাংলাদেশের দ্বিতীয় রামসার অঞ্চল। সুন্দরবন দেশের প্রথম রামসার অঞ্চল। টাঙ্গুয়ার হাওরের প্রবেশ মুখেই দেখা যায় সারিসারি হিজলগাছ। দেখে মনে হবে এই গাছগুলো হাওরে আগত অতিথিদের অভিবাদন জানানোর জন্যই দাঁড়িয়ে আছে।

মূল হাওরে প্রবেশ করলে হাওরের পানিতে নিচের দিকে তাকালে দেখা মিলবে হরেক রকম লতাপাতাজাতীয় জলজ উদ্ভিদ। দেখে মনে হবে পানির নিচে অপরূপ সবুজের স্বর্গরাজ্য। টাঙ্গুয়ার হাওরে আরো পাবেন করচ, বরুন, পানিফল, হেলেঞ্চা, বনতুলসি, নলখাগড়া, বল্লুয়া ও চাল্লিয়া জাতের উদ্ভিদ।

এই হাওরের জীববৈচিত্র্যের মধ্যে অন্যতম হলো বিভিন্ন জাতের পাখি। এখানে প্রায় ৫১ প্রজাতির পাখি বিচরণ করে। এ ছাড়া ছয় প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, বেশ কয়েক প্রজাতির সাপ, বিরল প্রজাতির কিছু উভচর প্রাণী, ছয় প্রজাতির কচ্ছপ, সাত প্রজাতির গিরগিটিসহ নানাবিধ প্রাণীর বসবাস এই হাওরের জীববৈচিত্র্যকে করেছে ভরপুর।

প্রতিবছর নভেম্বর মাসের শুরুতেই সুদূর সাইবেরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, চীন, মঙ্গোলিয়া, নেপালসহ বিভিন্ন শীতপ্রধান দেশ থেকে বাংলাদেশে ছুটে আসে অতিথি পাখি। শীতের তীব্রতা থেকে নিজেদের রক্ষার জন্য হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে নানা প্রজাতির এসব অতিথি পাখি আসে দেশের হাতে গোনা কয়েকটি জায়গায়। সেখানে তারা গড়ে তোলে ক্ষণস্থায়ী আবাস। তার মধ্যে টাঙ্গুয়ার হাওর অন্যতম। পানকৌড়ি, বেগুনি কালেম, ডাহুক, বালিহাঁস, গাঙচিল, বক, সারস, কাক, শঙ্খচিল, পাতিকুটসহ নানা প্রজাতির পাখির নিয়মিত বিচরণ এই হাওরে। পরিযায়ী পাখিদের মধ্যে বিরল প্রজাতির প্যালাসেস ঈগল, যা আমাদের দেশে কুড়া ঈগল নামে পরিচিত, বড় আকারের গ্রে কিংস্টর্ক রয়েছে এই হাওরে।

টাঙ্গুয়ার হাওরে সারা বছর মাছ ধরা নিষিদ্ধ। সার্বক্ষণিক একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ ও আনসার বাহিনী যৌথভাবে পাহারা দেওয়া সত্ত্বেও তেমন কোনো সুফল লক্ষ করা যাচ্ছে না। কিছু অসাধু কর্মকর্তার কারণে প্রতিনিয়ত চলছে অবৈধ মাছ ধরা।

প্রকৃতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘হাওরের জলজ গাছ, পাখি ও মাছ রক্ষায় আরো আধুনিক ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। সরকার ও টাঙ্গুয়ার হাওরের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানকে আরো বেশি বেশি প্রচারণার মাধ্যমে হাওরপারের দরিদ্র জনগণের সচেতনতা বাড়াতে হবে। তারা হাওরের গাছ, পাখি, মাছের পরিবেশগত গুরুত্ব বুঝতে সক্ষম হলে হাওরের ক্ষতি না করে হাওরের প্রকৃতি ও পরিবেশ উন্নয়নে অবদান রাখবে। পাশাপাশি হাওরপাড়ে বসবাসরত মানুষদের বিকল্প কর্মসংস্থান করতে পারলে হাওরের ওপর চাপ কমবে আর তাতে হাওরের পরিবেশ উন্নত হবে। যে টাঙ্গুয়ার হাওর নিয়ে আমরা এত গর্ব করি, তার যত্ন যদি না নিই তাহলে একসময় শুধু আফসোসই করতে হবে আমাদের।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়