শিরোনাম

প্রকাশিত : ১৩ মার্চ, ২০১৯, ০১:২৮ রাত
আপডেট : ১৩ মার্চ, ২০১৯, ০১:২৮ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ডাকসুর গৌরবোজ্জল অতীত এবং ২০১৯ এর নির্বাচন

তাসমিয়া নুহিয়া আহমেদ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসুকে মনে করা হয় বাংলাদেশের দ্বিতীয় পার্লামেন্ট হিসাবে। আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে ডাকসু অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

ডাকসুর যাত্রা শুরু হয় ১৯২২ সালে। সেসময় এটি পরিচিত ছিল ঢাকা ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (ডাসু) হিসাবে। সেসময়ে এই সংগঠনের নেতৃত্বে যারা ছিলেন তাদেরকেই আমাদের ভাষা আন্দোলন এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের সামনের সারিতে দেখা গেছে।

১৯৩৯ সালে এসে ছাত্রনেতারা দাবি তুললেন স্টুডেন্টস ইউনিয়নকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রভাবমুক্ত করার। সেই দাবি একসময় পূর্ণতা লাভ করলো। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২, এই সময়কালে এই সংগঠনের নেতৃত্ব রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। ১৯৫৩ সালে ‘ডাসু’ পরিণত হয় ‘ডাকসু’ তে। ১৯৬৬ সালে ডাকসু নেতৃবৃন্দ পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্বশাসনের দাবিতে বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ছয় দফা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ১৯৬৯ সালে যে গণআন্দোলন হয়, সেখানেও ডাকসু নেতাদের দুর্দান্ত ভূমিকা। আর এই আন্দোলনের ফলেই তৎকালীন সরকার বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে দায়ের করা ষড়যন্ত্রমূলক আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধেও ডাকসুর ভূমিকা ও অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখ করার মত।

সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছি সামরিক শাসক এরশাদের আমলে। ১৯৯০ সালে এরশাদকে উৎখাত করতে যে আন্দোলন, সেখানেও ডাকসুর বড় ভূমিকা ছিল। ২৮ বছরের দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর এই যে ডাকসু নির্বাচন হয়ে গেল গতকাল, সেটা আমাদের জাতীয় নির্বাচনে একটা গুণগত পরিবর্তনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। যদিও নির্বাচনের দিন ভোট নিয়ে কিছু বিতর্ক দেখা দিয়েছে, ভোটের আগে পরিবেশ নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠেছে, তার পরও এমন একটা নির্বাচন হতে পারাটাও এক ধরনের সাফল্য হিসাবেই বিবেচনা করা যায়।
অতীতের দিকে তাকালে দেখা যায়, ১৯৬২ সালে যখন এসএম শরিফ শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলন হয়েছিল, তখন তৎকালীন ডাকসুর ভিপি (আজকের ওয়ার্কার্স পার্টি সভাপতি) রাশেদ খান মেনন সেখানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এজন্য তৎকালীন প্রশাসন জনাব মেননকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঁচ বছরের জন্য বহিস্কারও করেছিল।

সুলতান মোহাম্মদ মনসুর হচ্ছেন একমাত্র ছাত্রলীগ নেতা যিনি ডাকসুর ভিপি হয়েছিলেন। তিনি ১৯৮৯-১৯৯০ তে নির্বাচিত হন। ১৯৬৬-৬৭ তে নির্বাচিত ভিপি মাহফুজা খানম সক্রিয় অংশ নিয়েছিলেন হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশনবিরোধী আন্দোলনে। তিনি ছয়দফা আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন।

ডাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক খায়রুর কবির খোকন বর্তমানে বিএনপির যুগ্ন মহাসচিব। ১৯৯০-৯১ সেশনে নির্বাচিত এই ছাত্র নেতা এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। ডাকসুতে দুই বার ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন মাহমুদুর রহমান মান্না, তিনি বর্তমানে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক।

তবে গতকাল হয়ে যাওয়া ডাকসু নির্বাচন কিছুটা হলেও সমালোচিত হয়ে থাকবে বিরোধী সকল দলের বয়কটের কারণে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত সংবাদে দেখা যায়, রোকেয়া হলে ছাত্রীরা বস্তাভর্তি ব্যালট পেপার পেয়েছে। অনেকে অভিযোগ করেছেন যে, কিছু কিছু হলে আগে থেকেই ব্যালট বাক্স ভরে রাখা হয়েছিল। অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে কুয়েত মৈত্রী হল, শহিদুল্লাহ হলের ভোট গ্রহণ নিয়েও।

১৯৭৩ সালের ডাকসু নির্বাচনে ভোট বাক্স হাইজ্যাকের ঘটনা ঘটেছিল। সেটা একটা ন্যাক্কারজনক উদাহরণ সৃষ্টি করেছিল। আমরা আশা করবো, আর কোন ডাকসু নির্বাচন যেন কোন বিতর্কের জন্ম না দেয়। এবারের নির্বাচন নিয়ে যে সকল অভিযোগ উঠেছে, সেগুলো সত্য কি অসত্য সেটা যেন প্রশাসন গ্রহণযোগ্য তদন্তের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়। কোন ধরনের অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেলে যেন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে। সেই সঙ্গে আমরা আশা করি ডাকসুর নতুন নেতৃত্ব যেন শিক্ষার পরিবেশ অক্ষুন্ন রেখে ছাত্র সমাজের অধিকার আদায়ে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে।

(লেখক- ডেইলি আওয়ার টাইমের নির্বাহী সম্পাদক।)

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়