শিরোনাম
◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি

প্রকাশিত : ০৭ মার্চ, ২০১৯, ০৪:০২ সকাল
আপডেট : ০৭ মার্চ, ২০১৯, ০৪:০২ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

৭ই মার্চের ভাষণ, বঙ্গবন্ধু যেন সেদিন একটি সুতোর মধ্যে দিয়ে হেঁটে গেছেন : সৈয়দ হাসান ইমাম

আশিক রহমান : সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম বলেছেন, ৭ মার্চ আমাদের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। সেদিন আমরা রেসকোর্স ময়দানে উপস্থিত ছিলাম। বঙ্গবন্ধু ভাষণ দেবেন। ভাষণে কী বলবেন তিনি, অধীর আগ্রহে সবাই। গেলাম জনসভা শুনতে। জনসভা শুরুর আগে ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধুর বাড়ির দিকে যাচ্ছিলাম। পথে জোহা সাহেবের সঙ্গে দেখা হলো। তিনি তখন নারায়নগঞ্জের আওয়ামী লীগের এমপি। মুক্তিযুদ্ধের পরও তিনি এমপি ছিলেন। শামীম ওসমানের বাবা। তাকে দেখলাম একটা রেস্টুরেন্টে খাওয়ার জন্য ঢুকছেন, ৩২ নম্বরের দিক থেকেই আসছিলেন। আমি তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে জোহা সাহেবের কাছে গেলাম। জানতে চাইলাম, বঙ্গবন্ধু আজ কী বলবেন? আমরা খুব উত্তেজিত ছিলাম যে আজ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হবে। জনগণও আশা করছিলো আজকে স্বাধীনতার ঘোষণা করা হবে। জোহা ভাই বললেন, ‘আমরা তো গিয়েছিলাম, বঙ্গবন্ধু বললেন, তোরা মাঠে যা, যা বলার আমি সেখানেই বলবো বলে তিনি গোসল করতে চলে গেলেন।’ তখন বাজে দেড়টার মতো। আমরা মাঠে ফিরে এলাম। তিনটেয় জনসভা। বঙ্গবন্ধু আসতে কিছুটা দেরী হলো, কুড়ি মিনিটের মতো। বঙ্গবন্ধুকে মিটিংয়ে নিয়ে আসার দায়িত্ব ছিলো আব্দুর রাজ্জাকের। তার কাছ থেকে পরে শুনেছিলাম নির্ধারিত রাস্তা দিয়ে না এসে অন্য রাস্তা ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ তাদের আশঙ্কা ছিল্,ো বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হতে পারে। সেজন্য তারা বিভিন্ন জায়গা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বঙ্গবন্ধুকে জনসভায়স্থলে নিয়ে আসে।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি আরও বলেন, ৭ মার্চের অবস্থা ছিলো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। জনগণের আকাক্সক্ষা হচ্ছে স্বাধীনতা ঘোষণা আর স্বাধীনতা ঘোষণা করলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। মেসাকার হয়ে যাবে। প্লেন প্রস্তুত, তারা বোম্বিং করতে পারে। আরেকটি হবে, পৃথিবীর মানুষের কাছে আমরা বিচ্ছিন্নতাবাদী জাতি হিসেবে প্রমাণিত হবো যদি বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এসব জানতেন বঙ্গবন্ধু। তার ফলেই বঙ্গবন্ধু সেদিন স্বাধীনতা ঘোষণা করেননি। আবার এমন দিকনির্দেশনা দিলেন, যা স্বাধীনতা ঘোষণার মতোই। এর ফলে কোনো একটা ছুতোয় পাকিস্তান আমাদেরকে হত্যা করবে সেই সুযোগটি পেলো না, পৃথিবীর মানুষও আমাদেরকে বিচ্ছিন্নতাবাদী বলতে পারলো না। বঙ্গবন্ধু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কথা বললেন, আবার আমাদেরকে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে বললেন। ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’।
বঙ্গবন্ধু সতের মিনিটেরও ওপরে বক্তৃতা দিলেন। কিন্তু তা ছিলো অলিখিত! তিনি সব বলেছিলেন নিজের মন থেকে। একটি শব্দ সেখান থেকে সরানো যায় না। বঙ্গবন্ধু যেন একটি সুতোর মধ্যে দিয়ে হেঁটে গেছেন। যদি মানুষ করে যে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা করলেন না তাহলে তার নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জ হয়ে যায়, আর যদি পাকিস্তানিরা প্রমাণ করতে পারে তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন তাহলে আমাদের সংকটে পড়তে হয়। আমরা বুঝলাম স্বাধীনতার ঘোষণা তিনি করেছেন, মাঠ থেকে চিৎকার করতে করতে খুশি হয়ে ফিরে এলাম। পাকিস্তানিরাও কোনো সুযোগ পেলো না। এটি একটি অসাধারণ বক্তৃতা। এই বক্তৃতায় সবকিছু বলা আছেÑ ভবিষ্যত সম্পর্কে। বক্তৃতায় তিনি বারবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলছিলেন, ‘তোমরা আমার ভাই, তোমরা ব্যারাকে থাকো, তোমাদেরকে কেউ কিছু বলবে না। কিন্তু আমাদের লোকেদের ওপর আর গুলি চালাবার চেষ্টা করো না।’ আবার তিনি বলছেন, ‘তোমাদের ওপর আমার নির্দেশ রইলো যার যা কিছু তাই নিয়ে প্রস্তুত থাক, ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলো।’ আরেকটি খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা তিনি বলেছিলেন, ‘আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি’ তার মানে আমি অনুপস্থিত থাকতে পারি, আমি হয়তো মরেও যেতে পারি, গ্রেপ্তার হতে পারিÑ যেকোনো কিছু আমার হতে পারে।
বঙ্গবন্ধু নেতৃত্বের এমন একটি জায়গায় গেলেন, তার যে নির্দেশ সেই নির্দেশ তিনি যদি মরেও যান তা তার অনুপস্থিতিতেও আমরা স্বাধীন যেন দেশকে স্বাধীন করি। ব্যক্তির যে নেতৃত্ব তা তিনি জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দিলেন। এই বক্তৃতাতেই আমরা সেদিন স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করি। সেদিন থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেমেয়েরা কাঠের রাইফেল নিয়ে ট্রেনিং নিতে শুরু করে। ছেলেরা গোপনে চর এলাকায় ট্রেনিং নিতে শুরুকরে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়