শিরোনাম
◈ চুয়াডাঙ্গার পরিস্থিতি এখন মরুভূমির মতো, তাপমাত্রা ৪১ দশমিক  ৫ ডিগ্রি ◈ ফরিদপুরে পঞ্চপল্লীতে গণপিটুনিতে ২ ভাই নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১ ◈ মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ ভারতে লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফায় ভোট পড়েছে ৫৯.৭ শতাংশ  ◈ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী ◈ দাম বেড়েছে আলু, ডিম, আদা ও রসুনের, কমেছে মুরগির  ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক ◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা ◈ ভিত্তিহীন মামলায় বিরোধী নেতাকর্মীদের নাজেহাল করা হচ্ছে: মির্জা ফখরুল ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী

প্রকাশিত : ০৭ মার্চ, ২০১৯, ০৩:৫৬ রাত
আপডেট : ০৭ মার্চ, ২০১৯, ০৩:৫৬ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ : সংবিধানের মূলমন্ত্র

ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ : জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা বাংলাদেশের সংবিধানের এই চার মূলনীতি বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতীয়তাবাদের কথাই বলেছেন। তিনি বাংলার মানুষের অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক মুক্তির কথা বলেছেন। তার বক্তৃতায় বাঙালি জাতির ওপর তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের নির্যাতনের করুণ বর্ণনা দিয়েছেন।
একইসঙ্গে বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে বাঙালি জাতির গণতান্ত্রিক অধিকারের দাবি তুলেছেন। বঙ্গবন্ধুর ভাষণে শোষণমুক্ত সমাজতন্ত্রের প্রতিফলনও আমরা দেখতে পাই। তিনি তার বক্তব্যে একদিকে যেমন বাঙালি জাতির অর্থনৈতিক মুক্তির দাবি জানিয়েছেন, তেমনি অসহযোগ আন্দোলনে শ্রমজীবী গরিব মানুষের কথা উল্লেখ করেছেন।
সবশেষে, বঙ্গবন্ধু তার ৭ মার্চের ভাষণে ধর্মনিরপেক্ষতার সাক্ষর রেখেছেন। তিনি তার বাঙালি জাতীয়তাবাদ চেতনার প্রতিষ্ঠায় হিন্দু, মুসলমান, বাঙালি, অবাঙালি সবার কথাই বলেছেন। বঙ্গবন্ধু তার ৭ মার্চের ভাষণে বাঙালি জাতীয়তাবাদ যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, তা আজ পর্যন্ত বিশ্বের আর কোনো নেতা পারেননি। তিনি ৭ মার্চের ভাষণে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন :
‘আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, তারা বাঁচতে চায়। তারা অধিকার পেতে চায়। নির্বাচনে আপনারা সম্পূর্ণভাবে আমাকে এবং আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেছেন শাসনতন্ত্র রচনার জন্য। আশা ছিলো জাতীয় পরিষদ বসবে, আমরা শাসনতন্ত্র তৈরি করবো এবং এই শাসনতন্ত্রে মানুষ তাদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি লাভ করবে। কিন্তু তেইশ বছরের ইতিহাস বাংলার মানুষের রক্ত দিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস। তেইশ বছরের ইতিহাস, বাংলার মানুষের মুমূর্ষু আর্তনাদের ইতিহাস, রক্তদানের করুণ ইতিহাস। নির্যাতিত মানুষের কান্নার ইতিহাস।
অতএব, আমরা দেখতে পাচ্ছি বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বাঙালি জাতীয়তাবাদের আলোকে উদ্ভাসিত। বঙ্গবন্ধু তার ৭ মার্চের ভাষণে সমাজতন্ত্রকে ধারণ করেছেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সমাজতন্ত্র ভাবনা শাস্ত্রীয় সমাজতন্ত্র ছিলো না। আমরা পরবর্তীতে তার অনেক বক্তৃতায় সে ব্যাখ্যা পেয়েছি। তিনি সমাজতন্ত্রকে তত্ত্বের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করে শোষণহীন, ন্যায়ানুগ ও সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা অর্জনের লক্ষ্যে ব্যবহার করতে চেয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর ভাষণে অর্থনৈতিক মুক্তির দাবি জানানো হয়েছে, শোষণমুক্ত সমাজের দাবি জানানো হয়েছে। ৭ মার্চের ভাষণে যে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক তিনি দিয়েছিলেন সেখানে শ্রমজীবী মানুষের ওপর তার বিশেষ দৃষ্টি ছিলো। তিনি তার ভাষণে অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করার সময় বলেছিলেন :
‘গরিবের যাতে কষ্ট না হয়, যাতে আমার মানুষ কষ্ট না করে সেইজন্য যে সমস্ত অন্যান্য জিনিসগুলো আছে সেগুলোর হরতাল কাল থেকে চলবে না। রিকশা, ঘোড়ার গাড়ি, রেল চলবে, লঞ্চ চলবে। ২৮ তারিখে কর্মচারীরা যেয়ে বেতন নিয়ে আসবেন। আর এই সাত দিন হরতালে যে সমস্ত শ্রমিক ভাইয়েরা যোগদান করেছে, প্রত্যেকটা শিল্পের মালিক তাদের বেতন পৌঁছে দেবেন।’
পাহাড়সম প্রতিকূলতার মধ্যে দাঁড়িয়েও বঙ্গবন্ধু গরিব দুঃখী ও শ্রমজীবী মানুষের কথা চিন্তা করেছেন। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের অন্যতম মূলনীতি হচ্ছে গণতন্ত্র। যদি তৎকালীন পাকিস্তানে গণতন্ত্রের বিজয় আমরা দেখতেই পেতাম তাহলে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের আর প্রয়োজনই হতো না। সম্পূর্ণ বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু বাঙালির গণতান্ত্রিক অধিকারের ন্যায্য দাবি জানিয়েছেন। তিনি যে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন তার মূল উদ্দেশ্যই ছিলো বাঙালির গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা। আবার এটাও সত্য যে, বঙ্গবন্ধু তার ৭ মার্চের ভাষণে গণতন্ত্রের পূর্ণ বিকশিত রূপ ধারণ করেছেন। গণতন্ত্রের সংখ্যাগত প্রেক্ষিত নয়, বরং তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিলো গণতন্ত্রের গুণগত মান। ৭ মার্চের ভাষণে তাই তিনি বলেছেন :
‘আমি বললাম অ্যাসেম্বলির মধ্যে আলোচনা করবোÑএমনকি আমি এ পর্যন্তও বললাম, যদি কেউ ন্যায্য কথা বলে, আমরা সংখ্যায় বেশি হলেও একজন যদিও সে হয় তার ন্যায্য কথা আমরা মেনে নেবো।’
বঙ্গবন্ধু তার ৭ মার্চের ভাষণে বলেছেন : ‘এই বাংলায় হিন্দু-মুসলমান, বাঙালি, অবাঙালি যারা আছে তারা আমাদের ভাই, তাদের রক্ষার দায়িত্ব আপনাদের ওপর, আমাদের যেন বদনাম না হয়।’
এই বাক্যটি ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ নীতির বহিঃপ্রকাশের একটি অনন্য উদাহরণ। দ্বিজাতি তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে যে পাকিস্তানের জন্ম হয়েছিলো সেটি যে একটি ঐতিহাসিক ভুল ছিলো তার বড় প্রমাণ হলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা। বাংলাদেশ জন্মের অন্যতম মূল উদ্দেশ্যই ছিলো ধর্মনিরেপেক্ষ একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। যদিও বঙ্গবন্ধুর মার্চের ভাষণ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণার পূর্বে প্রদান করা হয়েছিলো তথাপি ৭ মার্চের ভাষণের যে ভাষা তার মাধ্যমে আমরা বঙ্গবন্ধুকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের রূপকার হিসেবে দেখতে পাই।
আমাদের সংবিধানের ১৫০(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ সংবিধানের পঞ্চম তফসিল দ্বারা আমাদের সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। উপরন্তু সংবিধানের ৭(খ) অনুযায়ী সংবিধানের ১৫০ অনুচ্ছেদকে সংবিধানের একটি অপরিবর্তনযোগ্য বিধান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ফলে পঞ্চম তফসিলে উল্লিখিত বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটি আমাদের সংবিধানের একটি অপরিহার্য ও অপরিবর্তনীয় অংশে পরিণত হয়েছে।
পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ষষ্ঠ এবং সপ্তম তফসিল স্বাধীনতার ঘোষণা এবং ঘোষণাপত্রের মূল পাঠকে সংবিধানের সঙ্গে সংযোজিত করেছে মাত্র। কিন্তু যেটা আমরা প্রায়ই ভুলে যাই সেটা হলো ১৯৭২ সালের আদি সংবিধান থেকেই এই দুটি বিষয় আমাদের সংবিধানের অন্তর্গত করা হয়েছে। আমাদের সংবিধানের ১৫০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী স্বাধীনতার ঘোষণা এবং ঘোষণাপত্র দুটি আমাদের সংবিধানের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে স্বীকৃত। সংবিধানের চতুর্থ তফসিলেও স্বাধীনতার ঘোষণা এবং ঘোষণাপত্র ক্রান্তিকালীন ও অস্থায়ী বিধানাবলী হিসেবে চিহ্নিত করে সংবিধানের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। স্বাধীনতার ঘোষণা এবং ঘোষণাপত্রে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই হচ্ছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক। একইভাবে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত রয়েছে যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই হচ্ছেন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি। সুতরাং এই বিষয় নিয়ে বিতর্ক অর্থহীন ও অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত যা সংবিধান লঙ্ঘনের শামিল। লেখক : আইনজীবী

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়