সাব্বির আহমেদঃ হেডিংটা দেখে নিশ্চয়ই খটকা লাগছে। হ্যাঁ, লাগারই কথা, কেননা ১৩-১৪ আবার কি? খটকা দূর হবে লেখার শেষাংশে। এক বন্ধু আরেকবন্ধুর পিঠে লিখে দিচ্ছেন 'বন্ধু, দেখা হলে বলিস আমরাই ১৩-১৪। কথায় মনে হচ্ছে এক সঙ্গে তেরো চদ্দো বছর পার করেছেন। এখন ফারাক হয়ে যাচ্ছেন। আসলে তাও না। ওই দুই বন্ধু ওই সাল দু'টিকে স্মরণ করে রাখতে চাচ্ছেন। রাখবেই না কেনো, ওই ২০১৪ সালেই গলায় গলায় করে এসেছিলেন প্রাণের ক্যাম্পাসে। কিন্তু আজ বিদায়ের ক্ষণ।
মঙ্গলবার দুপুর দুইটা। ফাগুনের এই শেষ বেলায় তখনও শীতের ফুটানি। আড়মোড়া ভেঙে প্রকৃতি এখনও প্রস্ফুটিত হয়নি বৈকি, বন্ধুরা দলবেঁধে নির্ধারিত সময়ের আগেই হাজির। আনুষ্ঠানিকভাবে শেষদিনের মতো ক্যাম্পাসে পদচারণ। দেখতে দেখতে পার হয়েছে ৪টি বছর। এবার বিদায়ের পালা। বিদায়ের সানাইও যেন বাজছে গোটা ক্যাম্পাস জুড়ে। খুনসুটি স্মৃতিতে রোমন্থন সবাই। অনেকে প্রকৃতির সঙ্গে জু মিলিয়ে একটু জড়সড়। স্মৃতির আবেগটাই যেন জড়সড় করে রেখেছে তাদের। বাহারি পোশাকের সঙ্গে সেজেও এসেছেন কেউ কেউ। প্রিয় শিক্ষক ও সহপাঠীদের সঙ্গে নেচে গেয়ে রাঙিয়ে রাখবেন দিনটি। আর তাই তো 'র্যাগ ডে'র আয়োজন।
প্রস্তুতিটাও ঢের। আগের রাতে শৈল্পিক আলপনা, সজ্জিত ক্লাসরুম, বেলুন আর পটকায় যেনো প্রস্তুতির ষোলকলা পূর্ণ। কমতি ছিল না কোনও কিছুর, হয়নি ব্যত্যয়। এবার শুধু আবগাহনের পালা। রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের সমাপনী দিন ছিল আজ। ২০১৩-১০১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের আজ অনার্স অধ্যায় শেষ।
সবার গায়ে শোভা পাচ্ছে অভিন্ন টি-শার্ট। হাতে মার্কার পেন। খানিকবাদেই শুরু হবে সেই কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত। শিক্ষক-শিক্ষার্থী মিলে কাটবেন র্যাগ ডের কেক। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর চার বছরের স্মৃতিচারণ শেষে দারুণ হৈ-হুল্লোড়ে কাটা হলো কেক। এরই ফাঁকে ক্যামেরায় মুহুর্মুহু ক্লিক আর প্রিয় শিক্ষকদের জড়িয়ে নানা অঙ্গ ভঙ্গিতে সেলফি- কোনও কিছু যেন বাদ যাচ্ছে না।
একে অন্যের টি-শার্টে স্মৃতিতে আবেগমাখা বাক্য লিখে দিচ্ছেন। কেউ আবার থাকার প্রত্যয়ে অন্যকে আর্শীবাদও করছেন। আবেগকে চাপিয়ে রেখেই লিখবেন নানা আবেগী কথন- যেন দুপুরের শুভ্রতা ছড়িয়ে পড়ছে সকলের মধ্যে।
আগের রাতে হয়েছে রংতুলি, বাদ যেতে পারে কি রঙের আঁচড়। না, সেটাও বাদ যায়নি। পুরো ক্যাম্পাস মাতিয়ে রং মাখামাখি। রঙে যেন রাঙিন পুরো অবয়ব। কাউকে দেখে চেনবার উপায় নেই। উচ্চস্বরে গান, সঙ্গে দলবেঁধে মাঠে নাচানাচি- পুরো ক্যাম্পাস যেন দেখছে এক ভিন্ন পরিবেশ।
এবার সত্যি বিদায়ের পালা। বিহবলের সুর যেন সকলের কণ্ঠে, চোখের কোনায় হঠাৎই পানি। আবেগাপ্লুত হয়ে রায়হান মাহমুদ কাওসার বলেন, চারটি বছর এক সঙ্গে ছিলাম, এখন সবাই চলে যাচ্ছি। স্বশরীরে আর যোগাযোগ হবে না বলে মনটা ভীষণ খারাপ।
আজ থেকে ক্যাম্পাস ও ক্লাসরুমকে দারুণ দারুণ মিস করবে জানিয়ে টুম্পা বলেন, মাঠের কোনে আর আড্ডাবাজি, সেলফি আর খুনসুটি হবে না- ভাবতেই পারছি না। তবুও আশা, সকলেই যোগাযোগ রাখবো।
আপনার মতামত লিখুন :