শিরোনাম
◈ ঝালকাঠিতে ট্রাকচাপায় নিহতদের ৬ জন একই পরিবারের ◈ গাজীপুরের টঙ্গি বাজারে আলুর গুদামে আগুন ◈ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনোয়ারুল হক মারা গেছেন ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শনিবার ঢাকা আসছেন ◈ দুই এক পশলা বৃষ্টি হলেও তাপদাহ আরো তীব্র হতে পারে  ◈ এথেন্স সম্মেলন: দায়িত্বশীল ও টেকসই সমুদ্র ব্যবস্থাপনায় সম্মিলিত প্রয়াসের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ◈ কেএনএফ চাইলে আবারও আলোচনায় বসার সুযোগ দেওয়া হবে: র‌্যাবের ডিজি ◈ ওবায়দুল কাদেরের হৃদয় দুর্বল, তাই বেশি অবান্তর কথা বলেন: রিজভী ◈ মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী ◈ বাংলাদেশ সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে: অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত : ০৬ মার্চ, ২০১৯, ০৪:৩২ সকাল
আপডেট : ০৬ মার্চ, ২০১৯, ০৪:৩২ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রোগীর হয়েছে হাতে ব্যথা, ডাক্তার দিলেন কিডনী রোগের ইনজেকশন!

খোকন আহমেদ হীরা, বরিশাল: বরিশাল নগরীতে চিকিৎসা করাতে এসে দালালনির্ভর ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ভুয়া ডিগ্রিধারী পরিচয়দানকারী ডাক্তারের খপ্পরে পরে সর্বস্ব হারিয়েছেন ভোলা জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের দুই দিনমজুর পরিবার। সামান্য হাতের ব্যাথার জন্য আল্টাসোনগ্রাম পরীক্ষা করানো হয়েছে এক রোগীকে। অপর রোগীর রক্তের serum creatinine: ১.৪ থাকা সত্বেও কিডনীতে আক্রান্ত বলে মাত্র ২৫ টাকার Neuro-v ইনজেকশ পুশ করে চিকিৎসক হাতিয়ে নিয়েছে তিন হাজার টাকা।

শুধু তাই নয়, এমবিবিএস পাশ করা ওই চিকিৎসক তার ভিজিট হিসেবে হিয়েছেন ১২শ’ টাকা। মঙ্গলবার দিনভর প্রতারণামূলক এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে বরিশাল নগরীর জর্ডন রোডস্থ সাউথ এ্যাপেক্স ডায়াগনস্টিক সেন্টার (ডিজিটাল ল্যাব) কর্তৃপক্ষ ও ডাঃ নাজমুল হোসেন। বিষয়টি নিয়ে নগরজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এমন প্রতারক ও প্রতারণার প্রতিকার চেয়ে ভূক্তভোগী রোগীর পরিবার জেলা প্রশাসক থেকে শুরু করে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক, সিভিল সার্জন, ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ মেডিকেল এ্যাসেসিয়েশন, ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ও নার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবে অভিযোগ প্রেরণ করেছেন।

ভুক্তভোগী রোগী শাহজাহানের পুত্র মোঃ জুয়েল জানান, তার পিতা শাহজাহান মিয়া ভোলা জেলার গজারিয়া বাজারস্থ উত্তর দিঘলদী গ্রামের বাসিন্দা ও একজন কৃষক। নয় সদস্যর পরিবার তাদের। তিনি সংসারের বড় ছেলে ও চট্টগ্রামে দিনমজুরের কাজ করেন। গত কয়েক দিন ধরে তার পিতা শারিরিক অসুস্থ্যতায় ভুগছিলেন। তার চিকিৎসার জন্য গ্রামে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা ধার-দেনার মাধ্যমে সংগ্রহ করে শাহজাহান মিয়া ও পার্শ্ববর্তী শাহজাহাল চৌকিদারের অসুস্থ্য (হাতে ব্যাথা) স্ত্রী শাহানুর বেগমকে সাথে নিয়ে ৫ মার্চ লঞ্চযোগে বরিশালে আসেন। শাহজাহাল তার স্ত্রী পারুল বেগম, ছেলে জুয়েল আর প্রতিবেশী শাহানুর বেগম বরিশাল লঞ্চ টার্মিনালে এসে এক অটোরিকশা চালককে বান্দরোডস্থ রাহাত আনোয়ার হাসপাতালের ডাঃ মোঃ আনোয়ার হোসেনের চেম্বারে নিয়ে যেতে বলেন। তখন অজ্ঞাতনামা ওই অটোরিকশা চালক জানায় ডাঃ মোঃ আনোয়ার স্যার বরিশালে নেই, তার অবর্তমানে রোগী দেখেন জর্ডন রোডস্থ সাউথ এ্যাপেক্স ডায়াগনস্টিক সেন্টারের (ডিজিটাল ল্যাব) ডাঃ নাজমুল হোসেন।

অতঃপর অটোরিকশা চালক রোগীদের ডাঃ নাজমুল হোসেনের চেম্বারে নিয়ে যায়। সেখানকার সাউথ এ্যাপেক্স ডায়াগনস্টিক সেন্টার (ডিজিটাল ল্যাব)’র কাউন্টারে দায়িত্বরত ম্যানেজারের সাথে অটোরিকশা চালক জুয়েলকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে হাতের মুঠে টাকা নিয়ে সেখান থেকে সটকে পরেন। এর ৩০ মিনিট পর ছয়শ’ টাকা করে মোট ১২শ’ টাকা ভিজিটের পরিশোধের পর ডাঃ নাজমুল হোসেন একে একে শাহজাহান ও শাহানুর বেগমকে দেখে পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য কাউন্টারে পাঠান। কাউন্টার ম্যানেজার পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য শাহজাহানের কাছ থেকে ৫ হাজার ৫০০ টাকা ও শাহানুর বেগমের কাছ থেকে তিন হাজার টাকা নেন (শাহানুর বেগম ডান হাতের ব্যথায় ভুগছিলেন কিন্তু চিকিৎসক তাকে আল্ট্রসোনগ্রামসহ রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা দেন)। দুপুরে প্রাপ্ত রিপোর্টগুলো সবই ভাল দাবি করে ডাঃ নাজমুল হোসেন বলেন, শাহজাহান মিয়া কিডনি রোগে আক্রান্ত (অথচ তার রিপোর্টে serum creatinine: ১.৪ উল্লেখ ছিলো)। চিকিৎসক নাজমুল হোসেন আরও বলেন, এই মুহুর্তে শাহজাহানের শরীরে একটি ইনজেকশন পুশ করতে হবে। ইনজেকশনটির তার কাছে আছে দাম তিন হাজার টাকা। ওই তিন হাজার টাকা দেয়া মাত্রই মাত্র ২৫ টাকা মূল্যের একটি ঘবঁৎড়-া ইনজেকশন পুশ করা হয়। এসময় ইনজেকশনটির খালি ভায়েল সংগ্রহ করে রাখেন জুয়েল।

অপরদিকে শাহানুর বেগমের সকল রিপোর্ট ভাল দাবি করে তার ব্যবস্থাপত্রে সাত ধরনের ওষুধ লিখে দিয়ে তাকে বিদায় দেয়া হয়। বিকেলে ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হয়ে একটি ফার্মেসীতে ওই ইনজেকশনের খালি ভায়েল নিয়ে যোগাযোগ করে জুয়েল জানতে পরেন তার মূল্য মাত্র ২৫ টাকা। তখন তিনি বুঝতে পারেন দিনভর তার সাথে ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ডাক্তার প্রতারণা করেছেন। বিষয়টি তিনি বিভিন্ন সংবাদকর্মীদের কাছে তুলে ধরেন।

সংবাদকর্মীরা এ বিষয়ে ডাঃ নাজমুল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করেন। ডাঃ নাজমুল হোসেন তার ব্যবস্থাপত্রে ও নগরীর জর্ডন রোডস্থ সাউথ এ্যাপেক্স ডায়াগনস্টিক সেন্টারে (ডিজিটাল ল্যাব) সাটানো সাইনবোর্ডে উল্লেখ করেছেন তিনি এমবিবিএস (ঢাকা), পিজিটি (মেডিসিন) পাশ। এছাড়া তিনি মেডিসিন, গ্যাস্ট্রোলজি, বাতব্যথা, হার্ট, স্টোক, নাক, কান, গলা, বক্ষব্যাধি, চর্ম, যৌণরোগে উচ্চতর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, সাবেক মেডিকেল অফিসার, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, সাবেক সহকারী রেজিষ্টার, গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজ, সাভার, ঢাকা, ইগউঈ:৭৩২৯৯। উচ্চতর প্রশিক্ষণের বিষয় জানতে চাইলে তিনি (ডাঃ নাজমুল হোসেন) তার কোন প্রমাণপত্র দেখাতে পারেননি। চিকিৎসক কেন ইনজেকশন বিক্রি করবেন এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। পাশাপাশি দালালের বিষয়ে ডায়াগনস্টিক কর্তৃপক্ষ দায়ী করে তিনি বলেন, ছয়শ’ টাকার ভিজিটের তিনশ’ টাকা তাকে (ডায়াগনস্টিক) মালিককে দিতে হয়।

তিনি আরও বলেন, আমার কাজ রোগী দেখা আর ডায়াগনস্টিকের কাজ যেভাবেই হোক রোগী এনে দেয়া। এছাড়া রোগী শাহানুরের হাতের ব্যাথায় আল্ট্রাসোনগ্রাম পরীক্ষা করানোর বিষয়ে তিনি কোন উত্তর দিতে রাজি হননি। সবশেষ তিনি পুরো বিষয়টি গোপন রাখতে সংবাদকর্মীদের অনুরোধ করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জর্ডন রোডস্থ সাউথ এ্যাপেক্স ডায়াগনস্টিক সেন্টার (ডিজিটাল ল্যাব) অশিংদার ডিবি পুলিশের এক উপ-পরিদর্শক (এসআই)।

এদিকে জর্ডন রোডস্থ সাউথ এ্যাপেক্স ডায়াগনস্টিক সেন্টার (ডিজিটাল ল্যাব) ও ডাঃ নাজমুল হোসেনের এমন প্রতারণার প্রতিকার চেয়ে রোগীর পুত্র মোঃ জুয়েল বরিশালের জেলা প্রশাসক, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক, সিভিল সার্জন, ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ মেডিকেল এ্যাসেসিয়েশন, ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক ও নার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবে অভিযোগ প্রেরণ করেছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়