মতিনুজ্জামান মিটু : অর্থনৈতিক বিবেচনায় প্রচলিত সবজির চেয়ে বাহারী বা রঙিন সবজির দাম দুই থেকে তিনগুণ বেশি। কাজেই মানবদেহের প্রয়োজনীয় অ্যান্থোসায়ানিনের প্রকৃতিক উৎস বলে পরিচিত এই সবজি চাষে সমৃদ্ধ হবে কৃষক বললেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুহাম্মদ মহীউদ্দীন চৌধুরী।
মানবদেহে অ্যান্থোসায়ানিনের প্রভাব সম্পর্কে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন গবেষণা ফলাফলা ফলের বরাতে তিনি জানান, একটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা মানবদেহে রোগ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। এটি মানবদেহে ক্যান্সার, হৃদরোগ, নিউরোডি জেনারেটিভ ব্যাধি ও বার্ধক্য জনিত রোগের ঝুঁকি কমায়। সিরামে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা বৃদ্ধি, কোলস্টেরল বন্টন, স্থুলতা বা মুটিয়ে যাওয়া হ্রাস, দৃষ্টিশক্তি এবং লোহিত কনিকাকে অক্সিডেটিভ ক্ষতি থেকে রক্ষাও করে অ্যান্থোসায়ানিন।
প্রকতিতে অ্যান্থোসায়ানিনের প্রভাব সম্পর্কে এই কৃষি কর্মকর্তা জানালেন এটি উদ্ভিদের পাতা, ফুল, ফলকে বর্ণিল করে বিভিন্ন কীটপতঙ্গ এবং প্রাণীকে আকৃষ্ট করার মাধ্যমে পরাগায়ণ ও প্রাকৃতিকভাবে বীজ বিস্তারে সাহায্য করে। এছাড়া আল্টাভায়োলেট রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে পারে অ্যান্থোসায়ানিন।
অ্যান্থোসায়ানিনের প্রাকৃতিক শাকসবজির মধ্যে রয়েছে লালশাক, লালমুলা, লালবরবটি, লাল মিষ্টিআলু, লাল গোলআলু, লালশিম ও শিমের বীজ, লাল লেটুস লাল বাধাকপি, লাল ফুলকপি, কালো বেগুন এবং লাল ও হলুদ রঙের ক্যাপসিকাম ইত্যাদি।
ভারত, থাইল্যান্ড, তাইওয়ান, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, নিউজিল্যান্ড ও আমেরিকায় বহু আগেই অ্যান্থোসায়ানিনের ব্যবহার শুরু হয়েছে। এর স্বাস্থ্যগুণ বিবেচনায় নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী উচ্চ মাত্রার অ্যান্থোসায়ানিন সমৃদ্ধ ট্রান্সজেনিক আপেল উদ্ভাবন করেছেন। এ ফলগুলোর গায়ে ও ভেতরে সাধারণ আপেলের তুলনায় অনেকগুণ বেশি অ্যান্থোসায়ানিন তৈরী হওয়ায় এদের বর্ণ লাল। বর্তমানে এটি ক্যাপসুল আকারে বাজারজাতকরণ শুরু হয়েছে। সর্বপ্রথম ২০০১ সালে নরওয়ে ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘বায়োলিংক গ্রুপ’ অ্যান্থোসায়ানিন ক্যাপসুল ‘ম্যাডক্স’ প্রস্তুত করে এবং বাজারজাতকরন শুরু করে। পরে ২০০৭ সালে আমেরিকায় বাজারজাতকরণের জন্য ‘ফুড অ্যান্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন’ এর অনুমোদন পায় এই অ্যান্থোসায়ানিন ক্যাপসুল।
ড. মুহাম্মদ মহীউদ্দীন চৌধুরীর মতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইসন্টিটিউটের সবজি বিভাগ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার সেন্টার ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন বিএডিসি’র বীজ উৎপাদন খামারগুলো এ বিষয়ে বিভিন্ন কর্মসুচি হাতে নিতে পারেন। এরই মধ্যে দেশের কিছু এলাকার অগ্রসর শিক্ষত চাষি স্বল্প পরিসরে হলেও লালশাক, লালমুলা, লালবরবটি, লাল মিষ্টিআলু, লাল গোলআলু, লালশিম ও শিমের বীজ, লাল লেটুস লাল বাধাকপি, লাল ফুলকপি, কালো বেগুন এবং লাল এবং হলুদ রঙের ক্যাপসিকাম ইত্যাদির উৎপাদন শুরু করেছেন। যা তারা অভিজাত এলাকায় বিক্রি ও হোটেলে সরবরাহ করছেন। উৎপাদনের বিরাট একটি অংশ বিদেশে রপ্তানী করে বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করছেন এদের অনেকে।
আপনার মতামত লিখুন :