শিরোনাম
◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ০২ মার্চ, ২০১৯, ০৪:৪১ সকাল
আপডেট : ০২ মার্চ, ২০১৯, ০৪:৪১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ভারতে পৌঁছালেন ভূপাতিত ভারতীয় যুদ্ধ বিমানের বৈমানিক অভিনন্দন

আসিফুজ্জামান পৃথিল : পাকিস্তানে ভূপাতিত ভারতীয় মিগ-২১ যুদ্ধবিমানের পাইলট অভিনন্দন বর্তমানকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিয়েছে পাকিস্তান। গতকাল শুক্রবার পাঞ্জাবের ওয়াগা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পা রাখেন তিনি। বুধবার তার বিমানটি কাশ্মীরের পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ভূপাতিত হয়। অভিনন্দন প্যারাসুটে করে পাকিস্তানের মাটিতে অবতরণ করেন। স্থানীয় জনতা তাকে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে। ওয়াগা সীমান্তে অভিনন্দনকে বিদায় জানান পাকিস্তানের রেডক্রস প্রতিনীধি। এই হস্তান্তর প্রক্রিয়া রেডক্রসের মাধ্যমেই সম্পন্ন করা হয়। ইয়ন, এনডিটিভি, আনন্দবাজার, ডন, বিবিসি।

দু’দিনের টানটান উত্তেজনার পর, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পাকিস্তানের পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, অভিনন্দনকে মুক্তির কথা জানান। সেই ঘোষণার সূত্রে শুক্রবার অভিনন্দনকে প্রথমে ইসলামাবাদ থেকে লাহোর হয়ে ওয়াগা সীমান্তে নেওয়া হয়। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা পৌঁনে ৭টায় ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ৮টি গাড়ি ওয়াগা দিয়ে পাকিস্তানে প্রবেশ করে। আন্তর্জাতিক আইন মেনে অভিনন্দনকে রেডক্রসের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে।

ওয়াগা সীমান্তে দুপুর থেকেই ভীড় করতে থাকে দুইদেশের উৎসুক জনতা। অনেকের হাতেই ছিলো ভারতের জাতীয় পতাকা তিরঙ্গা। কেউ কেউ অভিনন্দনকে বীর বলে অভিহিত করে শ্লোগানও দেন। দর্শকদের ভীড় কমাতে, এদিন এই সীমান্তে দুইপক্ষের পতাকা নামানোর রীতি বাতিল ঘোষণা করা হয়। উল্লেখ্য, এই সীমান্তে নিজেদের মধ্যে সম্প্রতি বাড়ানোর অংশ হিসেবে সীমান্তরক্ষীরা প্রতিদিন সন্ধ্যায় একসঙ্গে কুচকাওয়াজের মাধ্যমে নিজ নিজ দেশের জাতীয় পতাকা নামান।

অভিনন্দনের এই মুক্তিকে ভারত-পাকিস্তান শান্তি প্রক্রিয়ার খুব গুরুত্বপূর্ন পদক্ষেপ বিবেচনা করা হচ্ছে। অভিনন্দন আটক হওয়ার পর থেকেই ভারতের লক্ষ্য ছিল আন্তর্জাতিক স্তরে পাকিস্তানকে চাপে ফেলা। তারই ফলশ্রুতিতে পাকিস্তানের উপর চাপ দেয় যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব। তবে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এই সংবাদের ব্যাপারে কোন মন্তব্য করা হয়নি। পাকিস্তানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রেই অভিনন্দনের মিগ ২১ বাইসন যুদ্ধ বিমান ক্ষতিগ্রস্থ হয়। অভিনন্দন বন্দি হওয়ার পরই তাঁর মুক্তির দাবি করে দিল্লি। পাশাপাশি তাঁর রক্তাক্ত মুখের ছবি যেভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতে থাকে তারও প্রতিবাদ করে ভারত। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এতো দ্রুত অভিনন্দনকে মুক্তি দেওয়ার পিছনে যুক্তরাষ্ট্র যথেষ্ট ভুমিকা রেখেছে। পাকিস্তানের পার্লামেন্টে ইমরান মুক্তির ঘোষণা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে গোটা বিশ্বের সংবাদ মাধ্যমের সামনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ভারত এবং পাকিস্তানের থেকে ভাল খবর আসছে। উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্র চায় ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে থাকা সমস্যা মিটে যাক। এর মাঝেই শোনা গিয়েছিলো যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর সঙ্গে টেলিফোনে প্রায় ২৫ মিনিট কথা বলেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান টুইটারে জানান, ভারত এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি যাতে সবদিক বিবেচনা করে সামাল দেওয়া হয় সেটা দেখতে অনুরোধ করেছি।

জানা গেছে বেশ কিছু পরীক্ষা নীরিক্ষার আগে অভিনন্দন ভারতে যেতে পারবেন না। আনন্দবাজার জানায়, নিরাপত্তার খাতিরেই এসব পরীক্ষা করা হবে। ভারতীয় বিমান বাহিনীর বরাত দিয়ে আনন্দবাজার জানিয়েছে, ওয়াগা সীমান্ত থেকেই বাড়ি ফিরতে পারবেন না অভিনন্দন। সেখান থেকে সরাসরি বিমানবাহিনীর গোয়েন্দাদের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে তাঁকে। বেশ কিছু ডাক্তারি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে অভিনন্দনকে। দেখা হবে তিনি ফিট কিনা। বন্দিদের শরীরে অনেকসময় মাইক্রোচিপ ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, যার মাধ্যমে আড়ি পেতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নেয় শত্রুপক্ষ। অভিনন্দনের শরীরে সেরকম কোনও চিপ বসানো হয়েছে কিনা, তা স্ক্যান করে দেখা হবে। মনোবিদের কাছেও নিয়ে যাওয়া হবে অভিনন্দনকে। বন্দি থাকা অবস্থায় ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সংক্রান্ত তথ্য পেতে শত্রুপক্ষ তাঁকে অত্যাচার করেছে কিনা তা জানার চেষ্টা করা হবে। পাকিস্তানে কোনও ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে কিনা দেখা হবে তাও। অভিনন্দনকে জেরা করতে আনা হতে পারে ইনটেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি) এবং রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং (র) কর্মকর্তাদেরও। তবে সচরাচর পাইলটদের তাঁদের হাতে তুলে দেয় না বিমানবাহিনী। তাই অভিনন্দনের ক্ষেত্রে তা নাও হতে পারে। পাকিস্তানে পা রাখা থেকে ওয়াগা সীমান্ত পার করা, গোয়েন্দাদের প্রতি মুহুর্তের বিস্তারিত বর্ণনা দিতে হবে অভিনন্দনকে। বন্দি অবস্থায় তাঁর কাছে কী কী জানতে চাওয়া হয়, তা জানাতে হবে তাঁকে। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী তাঁর মিগকে আঘাত করতে করে কী ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করেছিল, তাও জানার চেষ্টা করা হবে। তাঁর সঙ্গে থাকা কোন কোন নথি তিনি নষ্ট করতে পেরেছিলেন এবং কী কী নথি পাক সেনার হাতে পৌঁছেছে তারও তালিকা তৈরি করা হবে। শত্রুপক্ষের হাতে বন্দি ছিলেন অভিনন্দন। সেখানে তাঁকে আপসের কোনও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল কি না, তাঁকে ব্যবহার করার কোনও চক্রান্ত কোনো করা হয়েছি কি না সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করবেন গোয়েন্দারা। এই গোটা পদ্ধতিকে সামরিক পরিভাষায় বলা হয় ‘ডিব্রিফিং’। সম্পাদনা : ইকবাল খান

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়