ডেস্ক রিপোর্ট: উত্তর সিটি করপোরেশনে আগামীকাল ২৮ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার মেয়র পদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। একইসঙ্গে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সম্প্রসারিত অংশেও অর্থাৎ নতুন ওয়ার্ডগুলোতে কাউন্সিলর পদেও নির্বাচন হবে কাল। তবে এই নির্বাচনের সময় রাজধানীতে গণপরিবহন চলাচল করবে কিনা তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। নির্বাচন কমিশন (ইসি) নগরীরর প্রধান সড়কগুলোতে যান চলাচল করার অনুমতি দিলেও পুলিশ প্রশাসন বলছে বুধবার মধ্যরাত থেকে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত পর্যন্ত কোনও ধরনের যানবাহন মহানগরীরর সড়কগুলোতে চলাচল করবে না। আর এই অনিশ্চয়তায় কাল রাস্তায় বাস বের করা হবে কিনা তা নিয়ে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি রয়েছে দোটানায়।
আজ বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা জানান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচনি এলাকায় সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকার কথা বলা হলেও কিছু ক্ষেত্রে শিথিলতা থাকছে। নগরীর প্রধান প্রধান সড়কে বাস চলাচল চলবে। এছাড়া পরীক্ষার্থীরা প্রবেশপত্র দেখিয়ে যেকোনও পরিবহনে চলাচল করতে পারবে। তবে অহেতুক ঘোরাফেরার জন্যে কোনও ধরনের যান ব্যবহার করা যাবে না।
কে এম নূরুল হুদা বলেন, ‘ঢাকা শহরে অনেক ইমার্জেন্সি বিষয় আছে। এয়ারপোর্টে একজন যাত্রী যাবে, তার জন্য কি বন্ধ থাকবে? অ্যাম্বুলেন্স যাবে, এক্সপোর্ট-ইমপোর্টের জিনিসগুলো যাবে, এরকম জিনিসগুলো বিবেচনা করে পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া আছে, যাতে এভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। ব্যাপকভাবে সব বন্ধ করে দেওয়া হয়নি।’
প্রধান সড়কে বাস চলাচল করতে পারবে বলেও এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান।
ঢাকা শহরে প্রচুর প্রাইভেট ভেহিকেল আছে, এগুলো চলাচলের ওপর আপনার নির্দেশনা কী— জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘না, প্রাইভেট ভেহিকেল নির্ধারিত কোনও কাজ ছাড়া চলাচল করতে পারবে না। ঘোরাফেরা করার জন্য তো আর চলবে না। এটা নিয়ে বেশি আলোচনা করার দরকার নেই। এটা ঢাকা শহর তো অনেক ধরনের ইমার্জেন্সি বিষয় থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য যারা থাকবেন, তারা এগুলো বুঝবেন।’
এ সময় যান চলাচলের ক্ষেত্রে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে যানবাহন চলবে। আর জরুরি প্রয়োজনে যারা যান (প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেল) ব্যবহার করবে, তারা আমাদের কাছ থেকে স্টিকার সংগ্রহ করবে। এছাড়াও পুলিশকে যদি কেউ তার প্রয়োজনের কথা বলে, তারাও কিন্তু তাদের অনুমতি দেবে। অহেতুক ঘোরাফেরার জন্য অকারণে তো যানবাহন চলতে দেওয়া যাবে না। অন্যথায় একটা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে। পরীক্ষার্থীরা তাদের প্রবেশপত্র দেখিয়ে যান ব্যবহার করতে পারবে।’
তবে বিষয়টি নিয়ে ট্রাফিক পুলিশ বলছে, নির্বাচনি এলাকার সব সড়কে সব ধরনের পরিবহন বন্ধ থাকবে। আর পরিবহন মালিকরা বলছেন, এ নিয়ে তাদের সঙ্গে কোনও আলোচনা হয়নি। তবে আদেশ অনুযায়ী প্রধান প্রধান সড়কে যানবাহন চলার কথা। কিন্তু এখনও তারা কোনও নির্দেশনা পাননি।
বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সহকারী সচিব মো. লিয়াকত আলী স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে দুই সিটি এলাকায় বেবি ট্যাক্সি/অটোরিকশা/ইজিবাইক; ট্যাক্সি ক্যাব; মাইক্রোবাস; জিপ; পিক আপ; কার; বাস; ট্রাক; টেম্পো; ইজিবাইক ও স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন যন্ত্রচালিত যানবাহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
তবে দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় মহাসড়ক ছাড়াও আন্তঃজেলা বা মহানগর থেকে বের হওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, মহাসড়ক ও প্রধান প্রধান রাস্তার সংযোগ সড়ক বা এমন রাস্তাগুলোতে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে বলা হয়েছে। এছাড়া জাতীয় মহাসড়ক, বন্দর ও জরুরি পণ্য সরবরাহসহ অন্যান্য জরুরি প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে পারবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, পরিবহন বন্ধ রাখার বিষয়ে আমাদের সঙ্গে কোনও আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে যতদূর জানি প্রধান প্রধান সড়কগুলো নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে। এখন কী সিদ্ধান্ত আছে তা ভালো করে বলতে পারছি না। তবে আমার মনে হয় যানবাহন চলবে এবং চলতে দেওয়া উচিত। কারণ, এটি তো একটি উপ-নির্বাচন।
নির্বাচনি এলাকার প্রধান প্রধান সড়কে পরিবহন চলবে কিনা সে বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এসএম মুরাদ আলী বলেন, ‘দুই সিটির নির্বাচনি এলাকায় জরুরি সেবায় নিয়োজিত পরিবহন ছাড়া কোনও ধরনের যানবাহন চলবে না। উত্তরের কোনও এলাকায় কোনও পরিবহন চলবে না। দক্ষিণের যেসব এলাকায় নির্বাচন নেই সেখানে চলবে।’
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির দফতর সম্পাদক সামদানী খন্দকার বলেন, আসলে আমরা ধোঁয়াশায় আছি। যদি উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকে তাহলে আব্দুল্লাহপুর থেকে নাবিস্কো পর্যন্ত কোনও যানবাহন চলতে পারবে না। অপরদিকে, দক্ষিণ সিটির যে এলাকায় নির্বাচন নেই তাতে যানবাহন চলবে। এখন আমাদের বাসগুলো ছাড়ে গাজীপুর আব্দুল্লাহপুর থেকে। এখন উত্তর সিটি বাদ দিয়ে তো দক্ষিণ সিটিতে আসতে পারবে না। সেজন্য আমরা বলে দিয়েছি কাল (বৃহস্পতিবার) কোনও বাস যাতে না ছাড়ে।
তবে নির্বাচন উপলক্ষে রাজধানীতে সাধারণ ছুটি থাকবে এটুকুই শুধু নগরবাসীর সান্ত্বনা।
সূত্র:বাংলা ট্রিবিউন
আপনার মতামত লিখুন :