মুহাম্মদ জমির : ফেব্রুয়ারি আমাদের সবার মনে গভীর রেখা একে দিয়েছে। এ মাস মনে করিয়ে দেয় সাংষ্কৃতিক একটি পরিচয়ের দাবিতে আমাদের সংগ্রাম ও আত্মোৎসর্গের কথা। আর সেই সঙ্গে মনে করিয়ে দেয় কিভাবে স্বাধীনতার পথ দেখিয়েছিল এই সংগ্রাম। মাতৃভাষা রক্ষার সংগ্রামকে সম্মান জানিয়ে এ মাসের ২১ তারিখকে বিশেষ স্বীকৃতি দিয়েছে সারাবিশ্ব। ইউনেস্কোর কাছ থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করায় দিনটি বিশেষ মর্যাদার এবং সারাবিশ্বে দিবসটি পালন হয় নানান জাতির মাতৃভাষা এবং সেই ভাষাতেই শিক্ষাদানের দাবি নিয়ে।
টেকসই উন্নয়নের সঙ্গেও বিষয়টি সম্পৃক্ত হয়ে উঠেছে। রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার সহ যারা সেদিন জীবন দিয়েছেন সবাইকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। আমাদের স্মরণ রাখতে হবে বিশ্বের কাছে বাংলা ভাষার স্বীকৃতি লাভের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। স্বাধীনতার পরই বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করা হয়। ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দিয়ে সারাবিশ্বের নজর কেড়েছিলে বঙ্গবন্ধু।
মায়ের কাছে শেখা ভাষাই মানুষের প্রথম ভাষা। এরপর যোগাযোগ সক্ষমতা বাড়াতে কিংবা পেশাজীবনে দক্ষতার জন্য দ্বিতীয় বা তৃতীয় ভাষাও শেখা যেতে পারে। যে চর্চাটি দেখা গেছে বৃটিশ ভারতে। যখন সবাই মাতৃভাষায় কথা বলছে তখন কিছু লোক শাসকদের কাছাকাছি যেতে ইংরেজি শিখতো এমনকি বৃটিশদের অনুকরণে কাপড়ও পরতো। এমনকি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও এর ব্যতিক্রম না। এই গঙ্গাতীরেও তার ছায়া পড়ে। কৃষি নির্ভর এই অঞ্চলের মানুষ আরো কিছুটা শিখতে ও জানতে চাইলো। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পবাদ প্রবচন বিনিময়ের মাধ্যমে যোগাযোগ হতো। গ্রামীন কথন, শ্লোক, খনার বচন, প্রবাদ যেগুলো আমাদের ঐতিহ্যের অংশ ছিলো সেগুলোতে ইংরেজির মিশেল শুরু হলো। ধীরে ধীরে অনেক দেশীয় প্রবচনের জায়গা দখলে নিলো ইংরেজী প্রবচন। ইংরেজরা যেভাবে এগুলো বব্যবহার করে আমরা সেভাবে শিখলাম এবং এভাবে সেগুলোও আমাদের ঐতিহ্যের অংশ হয়ে গেলো। আমাদের সংষ্কৃতির একটি নতুন ধারা তৈরি হয়েছে, আমি সেদিকে সবার দৃষ্টি আকর্ষন করতে চাই।
স্বাভাবিক কারনেই আমাদের শিক্ষিত তরুণদের মাঝে ইংরেজির ব্যবহার বেড়েছে। তারা বাংলা বলতে, পড়তে এমনকি বুঝতেও পারে; কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে তারা ইংরেজি বাংলার মিশ্রণে একধরনের বাংলিশ ভাষার প্রচলন করেছে। মাঝে মাঝে তারা প্রবচন গুলোর ভুল ব্যবহার করে। যা দুঃখজনক। ফেব্রুয়ারি মাসে সারাবিশ্ব যখন বাংলা এবং বাংলাদেশকে সম্মানিত করছে তখন আমাদের তরুন প্রজন্মেরও উচিৎ নিজের সংস্কৃতিকে সম্মান করা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাষার মান অক্ষুন্ন রাখা।
এই ফেব্রুয়ারিতে বইমেলার মাধ্যমে বাংলাদেশ দেখিয়েছে যে সাহিত্য আর বই আমাদের শুধু একসাথে করেছে তা নয় আমাদের দৈনন্দিন দুঃখ কষ্টের পাশাপাশি আমাদের চিন্তা ভাবনাও আদান প্রদানের সুযোগ হয় এখানে। শিশুদেরও নির্মল আনন্দ খুঁজে নেয়ার আদর্শ জায়গা হয়ে উঠছে বইমেলা।
আপনার মতামত লিখুন :