মঞ্জুর মোর্শেদ : ধানের চেয়ে মাছ চাষে বেশি লাভ, এমন অজুহাতে সিরাজগঞ্জের শস্য ও ধান উৎপাদনকারী জমিগুলোতে চলছে একের পর এক পুকুর খনন। প্রতিনিয়ত কৃষিজমি রূপান্তরিত হচ্ছে জলাশয়ে। এতে করে দিন দিন কমে যাচ্ছে আবাদযোগ্য ভূমি আর হ্রাস পাচ্ছে কৃষি উৎপাদন। চ্যানেল ২৪
উত্তরবঙ্গের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি চলনবিল। কখনও সবুজে ভরা মাঠ, কখনও সোনা রং ধানে ভরা প্রান্তর, কখনও সরষে ফুলের হলুদ আবার কখনও রুপালি জলের ঢেউয়ে পাল তোলা নৌকা। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবর্তন হয় চলনবিলের রূপ ও সৌন্দর্য। এ চলনবিলেরই বিশাল একটি অংশ সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, রায়গঞ্জ ও উল্লাপাড়া উপজেলায়। এ অঞ্চলের জমি উর্বর পলিসমৃদ্ধ হওয়ায় ইরি বোরো মৌসুমে বিপুল পরিমাণ ধান, শীত মৌসুমে রবিশস্য উৎপাদন হয়ে থাকে। নানা প্রতিকূলতায় চলনবিল নিজের অপার সৌন্দর্য হারাতে বসেছে। গত কয়েক বছর ধরে বিলের মাঝখানে যত্রতত্র পুকুর খননের কারণে বিলের মধ্যাঞ্চলে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। সচেতন মহল মনে করছে, অবাধ পুকুর খননের কারণে ভবিষ্যতে হয়তো এ অঞ্চলে আবাদযোগ্য কোনো জমিই থাকবে না। শস্যভাণ্ডার চলনবিল শুধুই মৎস্যভাণ্ডারে পরিণত হবে।
এলাকার প্রভাবশালী মাটি ব্যবসায়ীর প্রলোভনে পড়ে কৃষকরা তাদের দুই বা তিন ফসলি জমি পুকুরে পরিণত করছেন। মাটি ব্যবসায়ীরা কয়েকজন কৃষকের জমি পাঁচ সাত বছরের জন্য লিজ নিয়ে শুরু করেছেন পুকুর খনন। বছরে বিঘা প্রতি ১৮ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত কৃষককে দেয়া হচ্ছে। নগদ টাকার নেশায় কৃষকরা একের পর এক পুকুর খননের দিকেই ঝুঁকছেন।
এলাকার কৃষকেরা বলেন, ধান, গম, আলু, রবিশস্যসহ অন্যান্য খাদ্যশস্য উৎপাদন করতে যে পরিমাণ খরচ হয় তা বিক্রি করে উৎপাদন খরচও ওঠে না। পুকুর কেটে লিজ দিলে বছরে ২০-২৫ হাজার টাকা বিনা পরিশ্রমে পাওয়া যায়।
সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আব্দুস সাত্তার বলেন, আমার জমিতে আমি পুকুর কাটছি, এতে আবার কার অনুমতির প্রয়োজন? ফসলি জমিতে কাটা হচ্ছে পুকুর। কৃষক আইয়ুবুর রহমান ১০ বিঘা জমি জুড়ে পুকুর খনন করছেন। তিনি বলেন, ধানচাষে কোনো লাভ নেই। তাই আগেও আমি পুকুর কেটেছি। তার পাশে আরেকটি পুকুর খনন শুরু করেছি।
মাছ ব্যবসায়ী খন্দকার তৌফিকুর রহমান বলেন, চলনবিলের বুক চিরে মহাসড়ক হওয়ার পর থেকেই পুকুর খনন শুরু হয়। তখন খুবই কম ছিলো। বর্তমানে সেটা অনেক বেড়েছে। সাত বছর আগে আমরা সমবায় ভিত্তিতে বেশ কয়েকটি পুকুর খনন করি। সেখানে মাছ চাষ হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুর রশিদ বলেন, জেলার শস্যভাণ্ডার জমিগুলো ব্যাপক হারে পুকুর হয়ে যাচ্ছে তা হতাশাজনক। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে কৃষি উৎপাদন আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পাবে। এলাকার মানুষের দাবি পুকুর খনন বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া অতি জরুরী।