কেএম নাহিদ : একদিকে শিল্পক্ষেত্রে দূষণ, অন্যদিকে পানির অপচয় বড় সমস্যা। আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে উৎপাদন প্রক্রিয়ার অঙ্গ হিসেবে পানি পরিশোধনের উদ্যোগ চলছে । আবর্জনার পুর্নব্যবহারও এই সমাধানসূত্রের অঙ্গ। প্লাস্টিক উৎপাদনের সময় শীতল করার প্রক্রিয়ায় অনেক পানির প্রয়োজন হয়। নেদারল্যান্ডসের একটি কারখানা পাম্পের মাধ্যমে মাটির নীচ থেকে পানি উত্তোলন করে না, বরং বাইরে থেকে পানি কিনে একবার ব্যবহার করে সমুদ্রে ফেলে দেয়। পানি বিশেষজ্ঞ নিল্স খ্রোট বলেন, বছরে আমাদের প্রায় ২ কোটি কিউব মিঠা পানির প্রয়োজন হয়। সেটা এখানে কিছুটা সমস্যা বটে, কারণ গোটা এলাকা আসলে সমুদ্রের সঙ্গে যুক্ত। ফলে ভূগর্ভস্থ পানি বেশ লবণাক্ত। ডয়েছে ভেলে
লবণাক্ত পানি যন্ত্রপাতি নষ্ট করতে পারে। তাই কোম্পানিগুলির পক্ষে পানি পরিশোধন করার তুলনায় মিঠা পানি কেনা অনেক সস্তা এক ইউরোপীয় গবেষণা প্রকল্পের আওতায় সেই পরিস্থিতি বদলানোর চেষ্টা চলছে৷ একটি পরীক্ষামূলক প্লান্টের মধ্যে একাধিক প্রক্রিয়ায় পানি থেকে লবণসহ অন্যান্য ক্ষতিকারক পদার্থ দূর করা হচ্ছে। পানি পরিশোধনবিশেষজ্ঞ ভিলবার্ট ফান ডেন ব্রুক বলেন, প্রথমে আমরা লামেলা সেপারেটরের মাধ্যমে পানির মধ্য থেকে কঠিন বস্তু দূর করার চেষ্টা করি৷ তারপর দুটি ভিন্ন প্রযুক্তির মাধ্যমে পানি থেকে লবণ দূর করা হয়।
গবেষকরা উন্নত ন্যানো ফিল্টার ও আধুনিক মেমব্রেন প্রযুক্তি পরীক্ষা করছেন৷ শিল্পক্ষেত্রে পানির পুনর্বব্যহার প্রক্রিয়া আরও দক্ষ ও সস্তা করে তোলাই এই উদ্যোগের লক্ষ্য। পানি প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ পেটার কাউভেনবার্গ বলেন, ‘‘প্রচলিত মেমব্রেন ফিলট্রেশন ব্যবস্থা কাজে লাগিয়ে বড়জোর ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ পানি পুনর্বব্যহারের যোগ্য করে তোলা যায়। এই প্রযুক্তির সাহায্যে তা বাড়িয়ে ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশে আনা সম্ভব৷ এই মেমব্রেন প্রণালী জলীয় বাষ্প প্রবেশ করতে দেয় এবং লবণ ধরে রাখে। কিন্তু সেগুলির আয়ু বড় কম। তাই সেগুলি আরও কার্যকর করে তোলার উদ্যোগকে চূড়ান্ত অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। টেকনিকাল মাইক্রোবায়োলজিস্ট ক্রিস্টিনা ইয়ুংফার বলেন, শিল্পক্ষেত্রের একাধিক সুবিধা রয়েছে৷ প্রথমত, এটি আরও পরিবেশবান্ধব প্রক্রিয়া। কারণ এর মাধ্যমে পানি সাশ্রয় সম্ভব হয়৷ তাছাড়া মিঠা পানির উৎসের উপর নির্ভর করতে হয় না৷ নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে জ্বালানি সাশ্রয়ও সম্ভব হয়৷ ফলে এমন পরিস্থিতি একইসঙ্গে শিল্পক্ষেত্র ও প্রকৃতির জন্য ইতিবাচক৷ বেলজিয়ামের অ্যান্টওয়ার্ক বন্দরে প্লান্টগুলিতে তাদের নিজস্ব উৎপাদন প্রক্রিয়ার জন্য উপযুক্ত করে পরিশোধনের সরঞ্জাম ও পদ্ধতি পরস্পরের মধ্যে সমন্বয় করা হচ্ছে। কেমিকাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কার্লস নেগ্রো মনে করেন, গোটা প্রক্রিয়ার একেবারে শেষে পানি পরিশোধন না করে রিসাইক্লিংকে তার অংশ করে তোলাই হলো উদ্দেশ্য৷ তাই কারখানা অনুযায়ী পানি পরিশোধনের প্রণালী স্থির করা হয়।
একটি ক্লোরিন কারখানা কাছের রাসায়নিক কোম্পানিগুলি থেকে আবর্জনা সংগ্রহ করে৷ তারপর বেশ কয়েকটি আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে তা থেকে শুদ্ধ পানি ও ব্যবহারযোগ্য উপাদান সৃষ্টি করা হয়। কেমিকাল ইঞ্জিনিয়ার সাবিনে টাবের্ট বলেন, আমরা বলি, এটা মোটেই জঞ্জাল নয়৷ অবশ্যই তা পুনর্ব্যবহার করতে হবে, কারণ সেটি অন্যদের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। অদূর ভবিষ্যতে পানির মূল্য অনেক বেড়ে যাবে। তাই আগামীকালের সমস্যা আমাদের আজই সমাধানের চেষ্টা করতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :