আনন্দ মোস্তফা: ১৯৭২ সালের ১৮ ডিসেম্বর দুটি মার্কিন বি-৫২ বোমারু বিমান থাইল্যান্ড ও গুয়ামের তত্কালীন মার্কিন বিমান ঘাঁটি থেকে 'ইতিহাসের সবচেয়ে বড়' অভিযানের জন্য প্রস্তুত হয়। বিমান দুটির অভিযানের লক্ষ্যস্থল উত্তর ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়। সেসময়ে বিশ্বের সবচেয়ে 'সুরক্ষিত দুর্গ' হিসেবে খ্যাত হ্যানয়কে গুড়িয়ে দেয়া ছিল যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য। টানা ১১ দিন হ্যানয়ে অবিরত বোমাবর্ষণ করা হয়। সিএনএন
যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যুদ্ধে হ্যানয়ে ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছিল ১৯৭২ সালের শেষের দিকে যখন মার্কিনিরা 'অপারেশন লাইব্রেকার ২' চালায় যা 'ক্রিসমাস বম্বিং' নামেও পরিচিত। এই বোমা হামলার উদ্দেশ্য ছিল স্রেফ উত্তর ভিয়েতনামিজদের আলোচনার টেবিলে বসানো। তত্কালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের প্রশাসন ধারণা করেছিল অবিরাম বোমা হামলা চালিয়ে তাদের ভীতি ধরিয়ে আলোচনার টেবিলে আনা যাবে।
'অপারেশন লাইব্রেকার ২' এ ৭০০'র বেশি বি-৫২ বোমারু ১৫ হাজার টনেরও বেশি বোমা নিক্ষেপ করে, যার ফলে হ্যানয়ে ১৩ শত মানুষ মানুষ মারা যায়।
সেই হ্যানয় বোমা হামলার ৪৭ বছর পর আয়োজন করেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার চেয়ারম্যান কিম জং উনের মধ্যেকার দ্বিতীয় শীর্ষ সম্মেলন, যেদিকে নজর রাখছে পুরো পৃথিবী। এক সময়ের মার্কিন আগ্রাসনের শিকার হ্যানয়ের মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্য একটি সম্মেলন আয়োজন বিস্ময়ের সৃষ্টি করে বৈকি।
'শত্রুতা কোনো চিরস্থায়ী বিষয় নয়' ওয়াশিংটনের জন্য এই ভিয়েতনামে আয়োজিত এই সম্মেলনই সবথেকে বড় প্রমান। অন্যদিকে পিয়ংইয়ংয়ের জন্য হ্যানয় সবচেয়ে বড় প্রমান যেখানে এক দলীয় শাসনব্যবস্থা যা ভিন্নমত মেনে নিতে না পারলেও একটি গতিশীল অর্থনীতির নেতৃত্ব দিতে পারে।
ভিয়েতনাম যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর দেশটির অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সংস্কারের মাধ্যমে শক্তিশালী অর্থনীতিতে পরিণত হওয়া এবং একই সাথে পুঁজিবাদী পশ্চিমা ও সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর সাথে রাজনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখার ফলেই এককালের চরম শত্রুকে হ্যানয় নিজ শহরে পরম বন্ধুর মতো আতিথিয়তা দিচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :