মাহফুজ নান্ট: ভোররাত থেকে কুমিল্লায় শুরু হয় মাঝারি বজ্রপাতের সাথে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। ফাগুনের এমন বৃষ্টিতে বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। চিন্তার ভাঁজ প্রসারিত হচ্ছে রবিশস্য চাষীদের কপালে। পরিপক্ক রবিশস্য ঘরে তোলার আগ মুহূর্তে ফাগুনের অকাল বৃষ্টি ভাবিয়ে তুলছে কৃষকদের।
ফাগুনের হঠাৎ বৃষ্টিতে নগরীর ধুলাবালি সরে গেলেও অলিগলিতে কাঁদাপানি জমে একাকার। সকালে শিশু সন্তানদের নিয়ে কাকভেজা হয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পৌছাতে হয়েছে অধিকাংশ অভিভাবকদের। ঝিরঝির বৃষ্টির সাথে ঠান্ডা হিমেল হাওয়ায় কর্মহীন দিন পার করেছে নগরীর খেটে খাওয়া দিন মজুর, ফেরীওয়ালাসহ নিম্ন আয়ের মানুষদের। বৃষ্টি থাকায় আজ কুমিল্লার অফিস পাড়া-প্রধান সড়কগুলোতে মানুষের পদচারণা কম ছিলো। সন্ধ্যার আগেই কর্মজীবিদের বাড়ি ফেরার তাড়াহুড়ো ছিলো লক্ষনীয়।
কুমিল্লা আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন জানান, গতকাল থেকে আজ ২৬ ফেব্রুয়ারি সকাল পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পরিমান রেকর্ড করা হয় ৩৩ মিঃমি। আজ সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পরিমান রেকর্ড করা হয় ৯.৭ মিঃমি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকতা জানান,আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। আশা করা যায়, আগামী ১ মার্চ থেকে এ বৈরী আবহাওয়ার উত্তোরণ ঘটবে।
এদিকে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বৃষ্টিপাত থাকার সম্ভাবনায় চিন্তার ভাঁজ প্রসারিত হচ্ছে রবিশস্য কৃষকদের কপালে। দীর্ঘদিন ধরে রোদে পুড়ে হাড়ভাঙ্গা খাটুনি আর অর্থ বিনিয়োগের বিনিময়ে মাঠে ফলানো ঘরে তোলার অপেক্ষায় থাকা আলু, সরিষা, গম, পেয়াজ, বাদাম, শাকসবজি নিয়ে বেশ ভালো ভাবনায় পড়েছে কৃষকরা।
কুমিল্লা আঞ্চলিক কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলায় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে আলু, ৮ হাজার ৩ শ হেক্টর সরিষা, গম ১২শ ৮৮ হেক্টর, মিষ্টি আলু ১৫৫০ হেক্টর, বাঙ্গি ৩৫০ হেক্টর, ধনিয়া ২ হাজার ৫ শ হেক্টর ও ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে অন্যান্য শাক সবজি আবাদ করা হয়েছে। আর মাঠে পরিপক্ক রবিশস্যগুলো ঘরে তোলার অপেক্ষায় থাকার ঠিক আগ মুহুর্তে হাল্কা ও মাঝারি বৃষ্টি জেলার বানিজ্যিক ভাবে রবিশস্য উৎপাদনকারী ১৫ হাজার কৃষকদের ভারি চিন্তায় নিমজ্জিত করেছে।
জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া গোমতী নদীর বিশাল চরে গোল আলু, মিষ্টি আলু,মিষ্টি কুমড়ো আর নানা জাতের শাকসবজি বৃষ্টির কারনে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বিশেষ করে জেলার মেঘনা, হোমনা, তিতাস, দাউদকান্দি উপজেলায় শীলা বৃষ্টিতে প্রচুর বাঙ্গি, তরমুজ নষ্ট হওয়ার আশংকা তৈরি হয়েছে।
গোমতী চরে বানিজ্যিক উদ্দেশ্য আলু চাষিদের মধ্য জেলার বুড়িচং উপজেলার আলেখাড়চর, বালিখাড়া এলাকার তাজুল ইসলাম, জানে আলম, মামুন, শাহানুর জানান, তারা সকলেই কমবেশি ২/৩ একর জমিতে গোল আলুর আবাদ করেছে। আলু পরিপক্ক হয়েছে। চলতি সপ্তাহে আলু উত্তোলনের সময় বিবেচনা করলেও এখন বৃষ্টির কারনে তা আর সম্ভব হচ্ছে না। আবার বৃষ্টি যদি স্থায়ী হয় তাহলে বড় অংকের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। চিন্তায় কপালের ভাঁজ প্রসারিত করে আলু চাষি তাজুল ইসলাম বলেন, ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে তিনি ৩ একর জমিতে আলু বুনেছেন। এখন ফসল তুলে বিক্রি করে মুনাফা হিসেব করবেন, কিন্তু ফাগুনের অকাল বৃষ্টি আলু চাষি তাজুলের জন্য কাল হয়ে দাড়িয়েছে।
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক দিলিপ কুমার অধিকারী জানান, আমরা প্রতিটি উপজেলার প্রান্তিক পর্যায়ে খোঁজ খবর রাখছি। কিভাবে কৃষকদের মনবল ঠিক রেখে বৈরী আবহাওয়ার মাঝে ফসল রক্ষা করতে হবে সে বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছি। কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর প্রস্তুত রয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :