ডেস্ক রিপোর্ট: চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে কমান্ডো অভিযানে নিহত বিমান ‘ছিনতাইয়ের চেষ্টাকারী’ মাহাদীর (২৩) ফেসবুক অ্যাকাউন্ট দেখে তাকে ‘সামাজিক বিচ্ছিন্ন’, ‘প্রতিশোধপরায়ণ’ ও ‘ম্যানিয়া রোগী’ হিসেবে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বিশ্লেষণ করে ব্যক্তি সম্পর্কে আন্দাজ করা যায়, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে তার স্বজন ও বন্ধুদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে মিলিয়ে দেখার দরকার আছে।
মাহাদীর ফেসবুক অ্যাকাউন্টের নাম মাহিবি জাহান। ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মাহাদীর ফেসবুকে তার বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন কারও ছবি নেই, নিয়মিত যোগাযোগে ঘাটতি ছিল। তার ফেসবুকে পরিচয় অংশে লেখা ব্রিটিশ এয়ারওয়েজে কর্মরত এবং যুক্তরাজ্যের গ্লাসগোতে বসবাসরত। ফেসবুকে তার সঙ্গে স্ত্রী নায়িকা শিমলার অন্তরঙ্গ কিছু ছবি এবং তাকে কষ্ট দেওয়ায় ক্ষমা চেয়ে বার্তা দেওয়া আছে।
এছাড়া মাহাদী বিভিন্ন দেশে ঘুরতে গেছে এবং সেখানে তার সিঙ্গেল অথবা শিমলার সঙ্গে ছবি দেওয়া আছে। অ্যাকাউন্টটিতে সে যুক্ত হয়েছে ২০১০ সালের জুন মাসে। ২০১৬ সালের পোস্টে দেখা যায়, তাকে উদ্দেশ করে বন্ধুরা ট্যাগ দিয়েছে পলাশ আহমেদ নামে। এই ট্যাগ করা পলাশ আহমেদে ক্লিক করলে মাহিবি জাহান অ্যাকাউন্টটিই খোলে, যার অর্থ এই অ্যাকাউন্টটি আগে এই নামে ছিল।
সোমবার মাহাদীর (২৩) বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার পিরিজপুর ইউনিয়নের দুধঘাটা গ্রামে গিয়ে তার বাবার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাহাদী সোনারগাঁ ডিগ্রি কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হয়ে পড়া শেষ করেনি, যদিও তার ফেসবুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে পরিচয় উল্লেখ আছে। গ্রামের সবাই তাকে পলাশ নামেই চিনতো। গ্রামের বাইরে পলাশ নিজেকে মাহাদী নামে পরিচয় দিতো।
এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে মনোরোগ বিশ্লেষক ও মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক তাজুল ইসলাম বলেন, ‘তার (মাহাদী) মধ্যে দেখানোর ও পারিবারিক পরিচয়কে অস্বীকারের প্রবণতা আছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে হয়।’ তিনি মনে করেন, এ ধরনের উপস্থাপন যাদের থাকে তারা ম্যানিয়া রোগী হয়ে থাকতে পারে। তাজুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনা পরম্পরায় মনে হচ্ছে সাধারণত যারা ছিনতাই করে এখানে সেই ধরন লক্ষণীয় নয়। তার দাবি আদায়ের পদ্ধতি খাপছাড়া। সেদিক থেকে অনুমেয়, তার মানসিক ভারসাম্যহীনতা দেখা দিয়েছিল।
তিনি মনে করেন, দেখানোর প্রবণতা থেকে অনুমেয়, সে ম্যানিয়া রোগী হয়ে থাকতে পারে। ম্যানিয়া রোগীরা নিজেকে ক্ষমতাবান ভাবে এবং কাউকে মানতে চায় না। তারা ভয়াবহ কিছু করে ফেলতে পারে। এই রোগ থাকলে বিশেষ কিছু দাবি আদায় করতে গেলে অস্বাভাবিক কাজ করতে পারে। আরেকটা হতে পারে সন্দেহমূলকভাবে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া। কোনো কারণে তার ভ্রান্ত বিশ্বাস তৈরি হতে পারে যেটা সে লালন করছে কিন্তু সমাধান করতে পারছে না।
মাহাদীর ফেসবুকে দেওয়া শেষ স্ট্যাটাস ছিল রবিবার বেলা একটার কিছু পরে। স্ট্যাটাসটা হলো, ‘ক্ষোভ ঘৃণা নিশ্বাসে প্রশ্বাসে।’ এই স্ট্যাটাস বিশ্লেষণ করে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘ক্ষোভ, ঘৃণা সামাজিক বা ব্যক্তিজীবনে কারও জন্য কিনা সেটা তদন্ত দরকার। কোথাও সে নিজেকে বঞ্চিত, প্রতারিত মনে করেছে হয়তো। ক্ষোভ, ঘৃণা তীব্রমাত্রায় হলে ব্যক্তি প্রতিশোধ নিতে চায়।সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন
আপনার মতামত লিখুন :