মহসীন কবির : বিমান ছিনতাই চেষ্টা নিয়ে দেশের বিভিন্ন মিডিয়া খবর প্রকাশ করেছে। সেসব খবর অনুযায়ী দেখা গেছে, একেক জন এঘটনাকে এককভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। এঘটনায় সাধারণ মানুষের মনে বেশকিছু প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। বিমান ছিনতাই চেষ্টাকারীর নাম নিয়ে ছিল ধোয়াশা, কেউ বলেছেন সাগর, কেউ মাহাদি। সোমবার দুপুরে র্যাব জানালো তার নাম পলাশ। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শুরুও হয়েছে।
র্যাব সোমবার দুপুরে বলছে, গতকাল রোববারের কমান্ডো অভিযানে নিহত ওই যুবকের আঙুলের ছাপ র্যাব ক্রিমিনাল ডেটাবেইসের একজন অপরাধীর সঙ্গে মিলে যায়। সেখানে রক্ষিত তথ্য অনুযায়ী, তাঁর নাম মো. পলাশ আহমেদ। অন্যদিকে দেশ রুপান্তর পত্রিকার তথ্য অনুযায়ী তার নাম মাহমুদ পলাশ (২৪)। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের দুধঘাটা গ্রামের পি আর জাহানের ছেলে পলাশ।
জিম্মি সঙ্কটের অবসানের দুঘন্টা পর গতরাতেই চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার মাহবুবার রহমান বলেছেন, ছিনতাইকারীর কাছে যে অস্ত্রটি পাওয়া গেছে এটা ফেইক, খেলনা পিস্তল। একই কথা বলেছেন, বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীও। গতরাতে এক টেলিভিশনে প্রতিমন্ত্রী বলেন, পিস্তলটি ছিল খেলনা। অন্যদিকে বিমান থেকে নেমে আসা যাত্রীরা গুলির কথা বললেও কমান্ডো অভিযান নিয়ে কথা বলার সময় চট্টগ্রামের জিওসি মেজর জেনারেল এস এম মতিউর রহমান তা নাকচ করেছেন। তিনি বলেছেন, হয়তো ট্রমার কারণে যাত্রীদের এমন মনে হতে পারে।
বিমানে থাকা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) নেতা সংসদ সদস্য মঈন উদ্দীন খান বাদল বলেছেন, ‘আমি দেখেছি বিমানটির ভেতরে হাইজাকার আছে একজন বাঙালি। সে গুলি করেছে। বদলের বক্তব্যে এ প্রশ্নের উত্তর মিলছে কি? ট্রমার কারণে তিনি গুলির শব্দ শুনছেন?।
অভিযানের পরপরই এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের জিওসি মেজর জেনারেল এস এম মতিউর রহমান বলেছিলেন, ওই যুবকের কাছ থেকে একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। তিনি বলেন, শুরুতে আমরা ছিনতাইকারীকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করি। পরে সে আক্রমণাত্মক থাকায় স্বাভাবিক নিয়মে অভিযান চালানো হয়। এতে সে শুরুতে আহত হয়। পরে নিহত হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। বিমানের মধ্যে তার সাথে আমাদের অ্যাকশন হয়েছে, পরে সে বাইরে নিহত হয়েছে।
বেবিচক চেয়ারম্যান এম নাঈম হাসান বলেছিলেন, “সো ফার আমি জানি, তার কাছে একটা অস্ত্র ছিল। বলেছে গায়ে বোম্ব জড়ানো আছে বা তার জড়ানো আছে। ওটা কী ছিল, সেটা তদন্তে বেরিয়ে আসবে। ওই যুবকের আচরণ অসংলগ্ন ছিল বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। যদি খেলনা অস্ত্রই তার হাতে থাকে তাহলে মেজর জেনারেল মতিউর রহমান পিস্তল উদ্ধারের তত্য কেন দিলেন?।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক এয়ার কমোডর (অব.) ইশফাক ইলাহী চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঘটনাটি তদন্ত সাপেক্ষে বিস্তারিত বোঝা যাবে। হুট করেই কোনও সিদ্ধান্তে আসা কঠিন। সে আসল কোনও অস্ত্র নাকি খেলনা পিস্তল দিয়ে ভয় দেখিয়েছে? অনেক সময় খেলনা জাতীয় অস্ত্র নিয়ে ভয় দেখানোর ঘটনা ঘটে। যদি আসল অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করে থাকে তবে সেটি বিমানবন্দরের নিরাপত্তার ব্যবস্থার ঘাটতি।’
বিমানবন্দরের সিভিল এভিয়েশনের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার সারোয়ার- ই-জাহান বলেন, খবর পেয়ে শাহ আমানত বিমানবন্দরে সেনা ও বিমান বাহিনী, র্যাব, সোয়াতসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার লোকজন জড়ো হন। যারা বিমানে কমান্ডো অভিযানের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তোড়জোড়ের মুখে অবশেষে অস্ত্রধারী ছিনতাইকারীকে পাকড়াও করা গেছে।
মোহাম্মদ ওসমান নামের এক যাত্রী ঘটনার বর্ণনা দিয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এক যাত্রী কাঁধে ব্যাগ নিয়ে দৌড়ে ককপিটের দিকে যায়। এ সময় তিনটি গুলি ছোড়ার শব্দ শোনা যায়। আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি।’ প্রশ্ন হলো ঐ যাত্রীর কাঁধে ব্যাগ কোথায় গেল? কি ছিল সেই ব্যাগে।
মোহাম্মদ রাসেল নামের আরেক যাত্রী বলেন, ‘আমি ফ্লাইটের পেছনের দিকে সিটে ছিলাম। হঠাৎ এক যাত্রীর উচ্চ স্বর শুনে সামনের দিকে লক্ষ করি, সে চিৎকার করে ফ্লাইটের কেবিন ক্রুদের সামনের দিকে আসার নির্দেশ দিচ্ছিল। এ সময় তার হাতে অস্ত্র ছিল। পরিস্থিতি দেখে বিমানের যাত্রীরা উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়ে। তবে অস্ত্রধারী ওই যাত্রী বিমানের অন্য যাত্রীদের আক্রমণ করেনি।’
বিমান ছিনতাই চেষ্টাকারীর হাতে আসল না নকল যে অস্ত্রই থাক। তিনি নিহত হয়েছেন। কাজেই তিনি কেন বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেছেন। তা এখন আর জানার উপায় থাকলো না। কিন্ত এ নিয়ে অসংখ্য প্রশ্ন মানুষের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।
উল্লেখ্য, গতকাল রোববার ১৩৪ জন যাত্রী ও ১৪ জন ক্রু নিয়ে বিজি ১৪৭ ফ্লাইটটি গতকাল ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাই যাচ্ছিল। ঢাকা থেকে উড্ডয়নের পরই বিমানটি ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে। পরে কমান্ডো অভিযানের মধ্য দিয়ে ছিনতাই নাটকের অবসান হয়।
আপনার মতামত লিখুন :