স্পোর্টস ডেস্ক : ভারতীয় জওয়ানদের ওপর কাপুরুষোচিত, আত্মঘাতী জঙ্গি হানায় গোটা দেশ স্তম্ভিত, শোকার্ত। আবেগের অদ্ভুত এক নাগরদোলায় দুলছেন সবাই! যা আগে কখনও হয়নি। এই জঘন্য কাজের পেছনে রয়েছে বলে দাবি করেছে যে সংগঠন, তাদের নেতাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান যথাযোগ্য ব্যবস্থা নিক, গোটা দেশ সেটাই চাইছে।
পাকিস্তানের সঙ্গে খেলা বন্ধ হোক, ক্রীড়া মহল থেকে দাবিও উঠছে। পাকিস্তানের যে দুই শুটারের বিশ্বকাপে অংশ নেওয়ার কথা ছিল, তাদের ভিসা দেয়নি ভারত। যার জেরে আন্তর্জাতিক শুটিং ফেডারেশন জানিয়েছে, ভবিষ্যতে ভারতকে বড় কোনও প্রতিযোগিতার আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া হবে না, যদি এরকম ঘটনা ঘটবে না বলে জানিয়ে ভারত সরকার লিখিত বয়ান দেয় ভারতীয় অলিম্পিক সংস্থাকে।
এটা ঘটনা, ভারতে ক্রিকেটের গুরুত্বই আলাদা। ফলে গোটা দেশ থেকে দাবি উঠছে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে না খেলার। সেমিফাইনাল বা ফাইনালে যদি পাকিস্তানের সঙ্গে দেখা হয়, তা হলে ভারত কী করবে, সেটা কিন্তু লোকে বলছে না। তা হলে কী? ফাইনালে যদি পাকিস্তানের সঙ্গে দেখা হয় তা হলে কি ভারত না খেলে কাপটা ওদের দিয়ে দেবে? স্বেচ্ছায় ম্যাচ ছেড়ে দিলে সরাসরি যারা প্রভাবিত হবে, সেই বিরাট কোহলি আর ওর দলের কথা কেউ ভাবছেই না। পাকিস্তানকে ম্যাচ ছেড়ে দেওয়া নিয়ে ওরা কী ভাবছে, কেউ কি জানতে চেয়েছে?
দু’বছর আগে ইংল্যান্ডে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ভারত-পাকিস্তান মুখোমুখি হয়েছিল। তখনও সীমান্তে ভারতীয় জওয়ানদের জীবন যাচ্ছিল। তবে সংখ্যায় কম। পরিস্থিতি অনেকটাই একই আছে। সত্যি বলতে কী, গত ৭০ বছরে ছবিটা খুব কমই বদলেছে। কিন্তু পাকিস্তানের সঙ্গে খেলোধুলো, সব সম্পর্ক ছিন্ন হোক এই দাবিটা কি শুধু তখনই উঠবে, যখন সংখ্যায় অনেক জওয়ান নিহত হবেন? তার মানে কি সংখ্যায় কম জওয়ান মারা গেলে, তাঁদের আত্মত্যাগ আমরা উপেক্ষা করব? শুধু তখনই সম্পর্ক ছিন্নের কথা বলব, যখন নিহত জওয়ানের সংখ্যা বাড়বে।
বলুন তো, পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্যিক, কূটনৈতিক সম্পর্ক এখন কী হবে? টিভি চ্যানেলগুলো এবং মিডিয়ার অন্য মাধ্যমগুলো চাইছে, সম্পর্ক ছিন্ন হোক। কিন্তু তারা কি পাকিস্তানের নেতা, সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের নিজের চ্যানেলে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় ডাকা বন্ধ করবে?
তাই বলছি, শুধু ক্রিকেটকে আলাদা করে বেছে নেবেন না। যদি দেশ চায়, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কে ইতি টানতে, তা হলে সেটা সব ক্ষেত্রে দরকার। বাস, ট্রেন, বিমানপথে কোনও যোগাযোগ থাকবে না পাকিস্তানের সঙ্গে। কোনও কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকবে না। কোনও বাণিজ্যিক সম্পর্ক থাকবে না। সেটা হলে, পাকিস্তানের সঙ্গে খেলাধুলোরও কোনও সম্পর্ক থাকবে না।
যাবতীয় সমস্যা, বিতর্কের সমাধান সম্ভব পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে। তবে সেই সঙ্গে দু’দেশের গোপন আলোচনাও জরুরি। তা না হলে পশ্চিমি দুনিয়ার অস্ত্র ব্যবসায়ী এবং তাদের এজেন্টরা, যারা ছড়িয়ে রয়েছে ভারত, পাকিস্তানে, তারা দু’দেশের লড়াইয়ে লাভবান হবে।
আইপিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বাতিল করে টাকাটা পুলওয়ামায় শহীদ জওয়ানদের সন্তানদের দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন আইপিএলের সিইও হেমাঙ্গ আমিন। ভাল লাগছে, সেই প্রস্তাব মেনে নিয়েছে সিওএ। চাইব, ভবিষ্যতে সব উদ্বোধনী অনুষ্ঠানই বাতিল করে সেই টাকাটা প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হোক। অতীতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মাত্র ১৫ মিনিট মুখ দেখিয়ে বলিউডের কোনও বড় তারকা কোটি টাকা নিয়ে গেছে!। আর তাদের সঙ্গী হিসেবে কিছু অনামী তারকাও এত টাকা রোজগার করেছে, যা একজন রনজি ক্রিকেটার গোটা মরশুম খেলেও পায় না। অথচ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরের দিন কারও কিছু মনেই থাকে নাভ তা হলে কী দরকার?
এই বিষণœ পরিবেশে ভারতীয় ক্রিকেট দল সীমিত ওভারের সিরিজ খেলছে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। বিশ্বকাপের আগে এটাই শেষ সীমিত ওভারের সিরিজ। তাই কিছু ক্রিকেটারের পারফরমেন্সের দিকে বাড়তি নজর থাকবে। দু’একটা জায়গাই এখন দলে খালি। এই সিরিজে ক্রিকেটারদের পারফরমেন্স দেখেই নির্বাচকরা বুঝতে পারবেন, কাকে ওই জায়গায় নেওয়া যায়।- আজকাল থেকে
আপনার মতামত লিখুন :