শেখ সেকেন্দার আলী, মালয়েশিয়া থেকে : মালয়েশিয়ায় অবৈধভাবে অবস্থান করা বিভিন্ন দেশের অভিবাসীদের গ্রেফতারের নয়া কৌশলে এগোচ্ছে অভিবাসন বিভাগ। বিগত বছরগুলোতে শহর ভিত্তিতে অভিযান পরিচালিত হতো বেশি। শহরে ইমিগ্রেশন, পুলিশ, রেলা, সিটি কর্পোরেশনের যৌথ অভিযানের কারণে অবৈধ অভিবাসীরা মালয়েশিয়ার বিভিন্ন ছোট ছোট শহর ও গ্রাম অঞ্চলের লোকালয়ে কাজ শুরু করে।
কিন্তু সেই সংবাদ আগেই চলে যায় অভিবাসন বিভাগের কাছে। আর সেই সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে জঙ্গল পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করছে অভিবাসন বিভাগ।
আর সেই কৌশলের কারণে জানুয়ারী থেকে ফেব্রুয়ারীর ১৫ তারিখ পর্যন্ত, মালয়েশিয়ার বিভিন্ন জায়গায় ১,৯৯৯ টি অভিযানে আটক করা হয় ৩০,৭৭৮ জনকে। আটককৃতদের মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে গ্ৰেফতার করা হয় বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের ৬,৯৮৫ জন অবৈধ অভিবাসিকে। আর অবৈধ অভিবাসী রাখার অপরাধে গ্ৰেফতার করা হয়েছে ১৪২ জন মালিককে।
তবে অভিযানে কত জন বাংলাদেশীসহ অন্যান্য দেশের কতজন করে গ্ৰেফতার করা হয়েছে তা অভিবাসন বিভাগ প্রকাশ করেনি। তবে আনুমানিক হাজারের কাছে বাংলাদেশি গ্ৰেফতার হয়েছে বলে প্রবাসী বাংলাদেশীরা ধারণা করছে। মালয়েশিয়া ইমিগ্ৰেশন বিভাগের প্রধান দাতো ইন্ডেরা কায়রুল দাজামী এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
মালয়েশিয়ায় সাঁড়াশি অভিযানে গ্রেপ্তার হচ্ছেন বৈধ বাংলাদেশিরাও। নাম বিহীন দালালের মাধ্যমে বৈধ হয়ে অন্যত্র কাজের মধ্যেই গ্রেপ্তার হয়ে জেলে যেতে হচ্ছে বাংলাদেশিদের। মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগের নিয়ম অনুযায়ী যে মালিকের নামে ভিসা করা হয়েছে, সেই মালিকের কাজ করতে হবে, অন্যথায় তাদেরকে অবৈধ হিসেবে গণ্য করা হবে। আর অন্য জায়গায় কাজ করা অবস্থায় ধরা পড়লে যেতে হবে জেলে।
অভিবাসী বিভাগের মহাপরিচালক বলেন, বিদেশি শ্রমিকরা আজ বৈধ, কাল অবৈধ। তিনি আরো বলেন, বিগত দিনে আউটসোর্সিং কোম্পানির মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক বিদেশি শ্রমিকরা ভিসা করে মালয়েশিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলের কলকারখানায় কাজ করতো। যা মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারকে কালো অধ্যায় হিসাবে বিবেচিত করা হয়। বিদেশি শ্রমিকদের বাসস্থান ও কিঞ্চিৎ মজুরিতে জিম্মি করে বছরের পর বছর কাজ করানো হয়েছে।
বর্তমানে মালয়েশিয়াতে আউটসোর্সিং কোম্পানির অ্যাপ্রভাল বন্ধ রয়েছে। কিন্তু এখনো হাজার হাজার বিদেশীরা বিভিন্ন কোম্পানির নামে ভিসা করে অন্য কোম্পানিতে কাজ করছে।আর অন্যত্র কাজ করলেই তারা অবৈধ বলে বিবেচিত হবে। অন্যদিকে বৈধ হয়েও অবৈধ তালিকায় বাংলাদেশিদের সংখ্যা দিন দিন বেশি হচ্ছে। মালয়েশিয়ার বাংলাদেশী ও মালায় এজেন্টদের প্রলোভনে অন্যত্র কাজ করার নিশ্চয়তায় বাংলাদেশি শ্রমিকরা তাদের কোম্পানিতে ভিসা করেছেন। প্রতিবছর এজেন্টকে এক থেকে দুই হাজার মালাই রিংগিত দিতে হবে।
কিন্ত বর্তমানে মালয়েশিয়ায় চলমান সাঁড়াশি অভিযানে বৈধ অবস্থায় গ্রেপ্তার হলে ওই সব এজেন্ট এর আর খোঁজ মেলেনি। বৈধ হয়েও জেলের ভাত খেতে হচ্ছে বাংলাদেশিদের।
আপনার মতামত লিখুন :