আরএইচ রফিক: বগুড়া সাইবার পুলিশের এক অভিযানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সঙ্গবদ্ধ হ্যাকার গ্রুপের দুই সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে দু’টি কম্পিউটার ও মোবাইল ফোনসহ কয়েকটি সিমকার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেছে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে অভিযানের ভিত্তিতে তাদের গোপালগঞ্জ ও চাঁদপুর থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার বশির উল্লা সরদার ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার ভাঙ্গা টাউনের হাফেজ আব্দুল্লাহ্ বাদশার ছেলে এবং কাজী আজহার উদ্দিন চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলার নলুয়া গ্রামের কাজী নিজাম উদ্দিনের ছেলে। তারা দু’জনই কলেজ ছাত্র এবং সম্মান শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের কলেজের নাম জানানো হয়নি।
শনিবার বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞা তার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিং আয়োজনে এ তথ্য জানান।
পুলিশ সুপার জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা ছদ্মবেশ ধারণ করে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে দীর্ঘ দিন ধরে বাংলাদেশের সরকারি বিভিন্ন স্কুল এন্ড কলেজের ওয়েবসাইট হ্যাক করে আসছিল হ্যাকাররা। শুধু তাই নয় সরকারি গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইটগুলিও হ্যাক করে তথ্য চুরির পাশাপাশি ডিফেস দিয়ে নিজেদের ক্ষমতা জাহির করে গোপনে ওই সমস্ত ওয়েবসাইটের ক্ষতি সাধণ করে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি করেছে ওই হ্যাকাররা।
পুলিশ সুপার আরো জানান, ওই দুই হ্যাকার ও তাদের সহযোগীরা মিলে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ৩ মাসে ‘ব্ল্যাক ওয়েব’ এবং ‘ফাবিহেক্সার’ নামের দু’টি গ্রুপের নামে বিভিন্ন সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অন্তত ২১টি ওয়েব সাইট হ্যাক করে। হ্যাক করা ওয়েব সাইটের মধ্যে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ ও বগুড়া সরকারি শাহ্ সুলতান কলেজও রয়েছে। তবে তাদের কবল থেকে হ্যাক করা ৪টি ওয়েবসাইট উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেফতার দুই হ্যাকার পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটগুলো ক্ষতিসাধণ ও ডাটাবেজ থেকে তথ্য চুরি করার পাশাপাশি নিজেদেরকে জাহির করতেই তারা হ্যাকিংয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়। তাদের সঙ্গে আরও ৮/১০ জন জড়িত রয়েছে।
যেভাবে হ্যাকারদের গ্রেফতার করা হয়: মনিটরিং সেলের মাধ্যমে প্রথমে বশির উল্লাসরদারকে (কোড নাম ফাবিহেক্সার) সনাক্ত করা হয়। সাইবার পুলিশের ইন্সপেক্টর এমরান মাহমুদ তুহিনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ গত ২১ ফেব্রুয়ারি রাত ৭টার দিকে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার চন্দ্রদিঘলিয়া গ্রামের একটি ছাত্রাবাস থেকে তাকে গ্রেফতার করে। পরে তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২২ ফেব্রুয়ারি ভোর ৬টার দিকে চাঁদপুরের মমিনপাড়া তানিশা হাউজ থেকে কাজী আজাহার উদ্দিন আবির ওরফে আল-আজহারকে গ্রেফতার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বশির উল্লাহ্ সরদার ‘ফাবিহেক্সার’ নামে কোড ব্যবহার করের দেশের সরকারি স্কুল ও কলেজের ওয়েবসাইটগুলো হ্যাক করে আসছিল। একইভাবে ‘ব্ল্যাক ওয়েব’ কোড ব্যবহার করে ৩ হাজার ৬৮৯টি ওয়েব সাইট হ্যাকের ডিফেস পাওয়া গেছে। হ্যাকিংয়ের ফলে ওয়েবসাইট মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা।
এক প্রশ্নের জবাবে বগুড়ার পুলিশ সুপার বলেন, ‘হ্যাকার গ্রুপের অন্য সদস্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’ গ্রেফতারকৃতদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি পাওয়া বগুড়ার অতিরিক্ত দুই পুলিশ সুপার মোকবুল হোসেন, আরিফুর রহমান মন্ডল এবং পুলিশের গণমাধ্যম শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী (মিডিয়া )উপস্থিত ছিলেন।
আপনার মতামত লিখুন :