শিরোনাম

প্রকাশিত : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০৪:৫৮ সকাল
আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০৪:৫৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ওয়াহেদ ম্যানশনের নিচ তলায় আগুন পৌঁছালে উড়ে যেত অনেক ভবন

ইসমাঈল ইমু : চকবাজারের চুড়িহাট্টার মোড়ে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হাজী ওয়াহেদ ম্যানশনের বেজমেন্টে কেমিক্যালের বিশাল মজুতের সন্ধান মিলেছে। ওই ভবনের নিচ তলা থেকে সাড়ে চার তলা পর্যন্ত পুরোটা পুড়ে গেলেও বেজমেন্টের গোডাউনে রাখা কেমিক্যালগুলো অক্ষত রয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন, এই গোডাউন পর্যন্ত আগুন পৌঁছালে আশপাশের আরও কয়েকটি ভবন উড়ে যেত। ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারতো আরো অনেক বেশি।

ওয়াহিদ ম্যানশনের গুদামে রাখা কেমিক্যালের ড্রাম শুক্রবার ফায়ার সার্ভিসের একটি দল এই গোডাউনের সন্ধান পায়। এরপর সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গোডাউনটি পরিদর্শন করেন এবং দাহ্য রাসায়নিক পদার্থগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখেন।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (প্রশিক্ষণ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) লে. কর্নেল এস এম জুলফিকার বলেন, ভবনে অবশ্যই কেমিক্যাল ছিল। ভবনের ভেতরে গ্যাস লাইটার রিফিলের পদার্থ ছিল, এটা নিজেই একটা দাহ্য পদার্থ। এছাড়া, অন্যান্য কেমিক্যালও ছিল। প্রত্যেকটা জিনিসই আগুনকে দ্রুত ছড়িয়ে দিতে সহায়তা করেছে। পারফিউমের বোতলে রিফিল করা হতো এখানে। সেই বোতলগুলো ব্লাস্ট হয়ে বোমার মতো কাজ করেছে। এগুলো আগুনকে টিগার করেছে, যে কারণে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। কেমিক্যালের কারণেই এভাবে ছড়িয়েছে। না হলে কখনও আগুন এভাবে ছড়ায় না।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের লালবাগ স্টেশনের কর্মকর্তা রতন কুমার দেবনাথ বলেন, ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকা কেমিক্যাল গোডাউন পরিদর্শন করে প্রাথমিকভাবে আমরা বেশ কিছু কেমিক্যাল ও দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ পেয়েছি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে— আয়রন অক্সাইড, আয়েনিক ইয়েলো, আয়েনিক ব্লু, আয়েনিক রেড, অয়েল রেড, এসিড গ্রিন, রেড কালার পিগমেন্ট, কালার পিগমেন্ট, ইয়েলো কালার পিগমেন্ট, কার্বন ইনজেনিরিয়াড। গুদামে আয়ন অক্সাইডের ছোট ছোট অনেকগুলো ড্রাম রয়েছে। এগুলোর বেশিরভাগই কাগজের মোড়কে মোড়ানো ছিল। এসব কেমিক্যাল বিভিন্ন রংয়ের কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই গোডাউনে কোনোভাবে যদি আগুন ঢুকতে পারতো, তাহলে অবস্থা আরও ভয়াবহ হতে পারতো। এতে পুরো ভবনটি ধ্বসে পড়ে যেত। এছাড়া, আশপাশের বেশ কয়েকটি ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হতো। তখন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে অনেক বেশি বেগ পেতে হতো।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, হাজী ওয়াহেদ ম্যানশনের আন্ডার গ্রাউন্ডে কোনও ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা নেই। বাতাস বের হওয়ার কোনও জায়গা নেই। এই অবস্থায় এখানে ভবন মালিক কেমিক্যাল গুদামজাত করেছেন। ভবনের বেজমেন্টে মালামাল গুদামজাত করা আইনত অপরাধ। সেখানে গাড়ি পার্কিং করা যাবে। কিন্তু এই ভবনের মালিক ও গোডাউন মালিক সব ধরনের আইন ভঙ্গ করেছেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রায় ২০ বছর আগে হাজী ওয়াহেদ ম্যানশন নামের ভবনটি তৈরি করা হয়। ভবনের ম‚ল মালিক হাজী ওয়াহেদের মৃত্যুর পর তার দুই ছেলে হাসান ও সোহেল মালিকানা পায়। তবে সোহেল প্রায় সময়ই চট্টগ্রামে থাকতেন এবং হাসান পরিবার নিয়ে ওই ভবনেই থাকতেন। এই দুই ভাই এবং তাদের পরিবার আগুনের হাত থেকে রেহাই পেলেও তারা বর্তমানে কোথায় আছেন তা জানা যায়নি। ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ডে কেমিক্যালের এই গোডাউনটি সোহেলের ছিল বলে স্থানীয়রা জানান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়