রাজু আলাউদ্দিন : লেখক হওয়ার জন্য এতোকিছু করতে হয়-জানা ছিলো না। গোটা শহর পোস্টারে ছেয়ে গেছে। দেখে মনে হয়, লেখক নয়, যেন গ্রামের নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী কোনো মেম্বার বা চেয়ারম্যানের প্রচারাভিযান। প্রথমা প্রকাশনীর তো আরও অনেক লেখক আছে, কই তাদের কোনো বই নিয়ে তো এরকম প্রচার চালাচ্ছে না। তাহলে প্রথমার অন্য লেখকরা তাদের কাছে গৌণ? প্রথমার অন্য লেখকরা কীভাবে নিচ্ছেন প্রথমার এই বৈষম্যমূলক আচরণ? ঠিক এই লেখকের জন্য তাদের এতো টাকা খরচ করে প্রচার চালানোর প্রয়োজন হলো কেন? লেখক ব্যাংকের এমডি বলে? ইতিমধ্যে প্রচুর টাকার ছড়াছড়ি হয়ে গেছে? প্রথমার নিজের টাকায় এসব করছে-এটা কোনো বোকার হদ্দও বিশ্বাস করবে না। লেখার মতো এতো গুরুত্বপূর্ণ কর্মকে এমনভাবে হাস্যকর ও কলকিংত করতে পারে দেখে সত্যি বেদনা হচ্ছে। আরও একটা বিষয়ও বেশ নজরে পড়লো: এই উপন্যাসের শিল্পগুণের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন শেখ আবদুল হাকিম। কে তিনি মহান ঔপন্যাসিক ও নাকি বিদগ্ধ সাহিত্যসমালোচক? ওনার মতামত দেখে আমাদের বুঝতে হবে এই উপন্যাসের গরিমা? পোস্টারে যে-ভাষায় কথা বলা হয়েছে তাও চূড়ান্ত রকমের অরুচিকর। লেখা রয়েছে ‘এই উপন্যাসের মাধ্যমে পাপমোচন হলো বাংলা সাহিত্যের।’ তাই নাকি! বাংলা সাহিত্য পাপ করে বসে আছে? আমরা লেখকরা এই পাপের দুনিয়ায় ছিলাম এতোদিন? কে এই যীশু খৃস্ট যিনি আমাদেরকে উদ্ধারের আশায় পাপমোচনের ক্রশ-কাঠ বহন করে নিয়ে যাচ্ছেন? কতোটা হাস্যকর ও অরুচিকর হলে এসব বাঁদরামি চলতে পারে। ঔদ্ধত্যের একটা সীমা থাকা উচিত। বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে যার কোনোই ধারণা নেই সে-ই কেবল এসব কথা বলতে পারে। ‘পাপমোচন’ শব্দটি ধর্মীয় প্যারাডাইম-এর সঙ্গে যেতে পারে, সাহিত্যকে ওটা দিয়ে কলুষিত করা উচিৎ নয়, তাছাড়া এই শব্দটি ব্যাবহারের মাধ্যমে মানুষের চেতনাকেও পশ্চাদবর্তী করা এক চেষ্টা। জ্ঞান ও সাধনার জগতকে এমনভাবে অশ্রদ্ধেয় করার এই জঘন্য নমুনা বাংলাসাহিত্যের ইতিহাসে আগে ছিলো না। আমি নিশ্চিত এই বইটিকে শিগগিরই পুরস্কৃত করা হবে, মায় অনুবাদও হয়ে যেতে পারে ইংরেজি ভাষায়। কারণ পেছনে টাকার জোর আছে। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো ইতিমধ্যে এই উপন্যাসের বিরুদ্ধে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগও এসেছে।
আপনার মতামত লিখুন :