শিরোনাম
◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০৪:০২ সকাল
আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০৪:০২ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ব্যারিস্টার রাজ্জাকের বিকলাঙ্গ ভাবাদর্শ জাতির কি কাজে আসবে?

কাজী নুসরাত শরমীন : যারা এ দেশটা চায়নি, বাংলাদেশের জন্মযুদ্ধে যারা পাকিস্তানিদের পক্ষ নিয়েছে। যারা ত্রিশ লক্ষ মানুষকে হত্যায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলো, ইসলামের মুখোশধারী যে দলটি নিজ দেশের দু’লক্ষ মা ও বোনকে ধর্ষণে পাকিস্তানিদের মদদ দিয়েছে, ৭১’এর ১৪ই ডিসেম্বর জাতিকে মেধাশূন্য করতে বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করেছে নৃশংসভাবে, সেই দল আজও এ দেশে টিকে আছে, এদেশের আলো হাওয়ায় নিঃশ্বাস নিচ্ছে, রাজনীতি করছে। ১৯৭১ সালে বাংলার মানুষ বুকের রক্তে তাদের ষড়যন্ত্রের মূল্য দিয়েছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, সেই দলটি মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমানের তথাকথিত গণতন্ত্রের ছলে এদেশের রাজনীতিতে পুনপ্রতিষ্ঠিত হয়। বিএনপির হাত ধরে চলে আসে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে, মন্ত্রী হয় যুদ্ধাপরাধীরা, গাড়িতে জাতীয় পতাকা নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। স্বাধীনতার রক্তে ভেজা সিঁড়ি মাড়িয়ে পৌঁছে যায় মহান জাতীয় সংসদে।

কাঁটা দিয়ে যেমন কাঁটা তুলতে হয়, তেমনি রাজনীতি দিয়েই কুরাজনীতিকে প্রতিহত করতে হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার প্রথম মেয়াদে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে জনমত তৈরি করেছেন। পরের মেয়াদে স্বদেশ ও স্বজাতির সাথে প্রতারণাকারী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করিয়েছেন, শাস্তি হয়েছে, হচ্ছে। এ যাত্রায় যুদ্ধাপরাধী দলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার পালা। যদিও নিবন্ধন বাতিলের বিষয়টি এখন আদালতের এখতিয়ার। নিশ্চিহ্ন হওয়ার আলামত বুঝতে পেরে নতুন কূটকৌশলে জামায়াতে ইসলাম। মোড়ক বদলে সংস্কারের নাটক শুরু করেছে দলটি। সে নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক। তাকে দিয়েই পর্দা উঠলো মঞ্চের। সাক্ষাতকারে জানিয়েছেন, সামাজিক ন্যায় বিচারের রাজনীতি, ইসলামী ভাবাদর্শ ছড়িয়ে দিতেই তিনি যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধী এই দলে যোগ দিয়েছেন। আমার জানতে ইচ্ছে করে তখন কি দেশে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কোন দল ছিলো না? আর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষদলে যোগ দিয়ে তিনি কি তার ইসলামী ভাবাদর্শের সম্প্রসারণের কথা ভাবতে পারতেন না? হয়তো পারতেন, কিন্তু তিনি তো মুক্তিযুদ্ধের ভাবাদর্শে প্রচার ও দেশপ্রেমকে ধর্মের মতো জরুরি ভাবেননি, ধর্মের অঙ্গ ভাবেননি। তিনি পদত্যাগ বিষয়ে সাক্ষাতকারে বলেছেন, তার দল একাত্তরে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। তিনি আসলে কোন বিষয়ের গ্রহণযোগ্যতার কথা বলছেন ? বাংলাদেশের জন্মের বিরোধীতা করার গ্রহণযোগ্যতা ? নাকি ত্রিশ লক্ষ মানুষকে হত্যায় মদদ দেয়ার গ্রহণযোগ্যতা ? এটা খুব সাধারণ মনস্তত্ত, যখন কোন বিষয়কে আমি ঘৃণ্য অপরাধ বলে স্বীকার করবো, সেখানে ‘গ্রহণযোগ্যতা’ একটি ভুল টার্ম। তিনি আশা করেছিলেন, বাংলাদেশের মানুষ ত্রিশ লক্ষ শহিদের হত্যাকে হাসিমুখে গ্রহণ করে নেবে ? নির্যাতনের শিকার দু’লক্ষ নারী মুক্তিযোদ্ধারা তাদের নির্যাতনকারী ও মদদ দানকারীদের গ্রহণ করে নেবে ? তারপর যুদ্ধাপরাধী দলটিকে দেশ শাসন করার আহ্বান জানাবে ? নাকি তিনি এই দলে যোগ দেয়ার আগে স্বাধীনতায় তাদের ঘৃণ্য অপকর্মের কথা জানতেন না ? তাদের সকল অপরাধ জেনে ব্যারিস্টার রাজ্জাক যখন এই দলে যোগ দিয়েছেন, সে সময় মুক্তিযুদ্ধের আগে বা পরে, তিনিতো জামায়াতের সব অপকর্ম স্বীকার করেই তাদের মতাদর্শ গ্রহণ করেছেন। জামায়াতের কর্মকা- ভালোবেসেই তাদের একজন হয়েছেন। তিনি স্বাধীনতার পক্ষের একটি দলে যোগ দিয়েও তো ইসলামী ভাবাদর্শ প্রচারে ভুমিকা রাখতে পারতেন ! সে দলের একজন হয়ে দলকে চাপ প্রয়োগ করতে পারতেন ! তিনি সেটা করেননি, তিনি যুদ্ধাপরাধীদের দলভুক্ত হয়েছেন।

ব্যারিস্টার রাজ্জাকের স্বাধীনতার ৪৭বছর পর বোধদয় হয়েছে, দেশের স্বাধীনতা বিরোধীরা দেশের নেতৃত্বে আসতে পারে না। অথচ তার এটি মনে হয়নি, একটি দেশের স্বাধীনতা বিরোধীরা রাজনীতিতেও আসতে পারে না। তার কাছে স্বাধীনতা বিরোধীতা যদি পাপ মনে হয়, গ্লানিকর মনে হয়, তবে কোন গ্রাউন্ড থেকে স্বাধীনতাবিরোধীদের বাঁচাতে যুদ্ধাপরাধীদের হয়ে দিনের পর দিন মামলা লড়ে গেছেন ? অন্যায় করা আর অন্যায়ের পক্ষে সাফাই গাওয়ার মধ্যে কি খুব পার্থক্য আছে ? মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের পৈশাচিক অপকর্মের কথা জেনেবুঝে একটা অপরাধী দলে যোগ দিলেন এবং স্বাধীনতার এতো বছর পরে এসেও তাদের পক্ষ হয়ে মামলা লড়লেন কোন আদর্শ বাস্তবায়নে? ইসলাম তো দেশপ্রেমের কথা বলে। একে ঈমানের অঙ্গ বিবেচনা করে। ব্যারিস্টার রাজ্জাকের বিকলাঙ্গ ভাবাদর্শ জাতির কি কাজে আসবে ? এটা প্রতারণা নয় কি ?

তবে তার এই মূল্যবোধ কি তার দলের মতো পাকিস্তান প্রীতি ? মুখে বাংলাদেশ অন্তরে পাকিস্তান, এই তার মূল্যবোধ ? তিনি যদি মনে করে থাকেন ইসলামী মূল্যবোধ প্রচার ও প্রসারে জামায়াতই উপযুক্ত ফোরাম, আর এখন যদি সে ভুল ভেঙে থাকে, তবুও কি তিনি দায়মুক্তি পেতে পারেন ? ৭১ পরবর্তী জামায়াতের রাষ্ট্রবিরোধী সকল অপকর্মে তিনিও অংশীজন। যুদ্ধাপরাধী একটি দলকে যখন আপনি মনে প্রাণে ধারণ করেছেন, তাদের অপকর্মও আপনি ধারণ করেছেন। ‘ভেবেছিলেন’ ‘মনে হয়েছিলো’ এ জাতীয় শিশুসুলভ শব্দ ব্যবহার আপনার সাথে ঠিক যায় না। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের পক্ষে সুবিধা দেখেছে জামায়াত, তাই জন্মভূমির সাথে বেঈমানী ও স্বজাতি হত্যায় তাদের বাধেনি। ১৯৭৫এর ১৫ই আগস্ট জাতির পিতার নির্মম হত্যাকা-ের পর জিয়াউর রহমান তথাকথিত গণতন্ত্রের নামে যুদ্ধাপরাধী এই দলটিকে রাজনীতিতে পুনপ্রতিষ্ঠিত করে। এরশাদের স্বৈরাচারীতায় দেশে যখন ক্রান্তিকাল, সেই স্পর্শকাতর সময়ে জামায়াত যুগপৎ আন্দোলনের নামে অন্যদলগুলোর পাশাপাশি অবস্থানে এসে দাড়ায়, এবং ধরেই নেয় যে, দেশের মানুষ তাদের অতীত ইতিহাস ভুলে গেছে । তারা অন্য দলগুলোর সমপর্যায়ে পৌঁছে গেছে! ১৯৯০ সালে পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতির আলোচনার প্রেক্ষাপটে ব্যারিস্টার রাজ্জাকের মনে হয়েছে, ১৯৭১ সালের ঘৃণ্য অপকর্মের জন্য স্বদেশ ও স্বজাতির কাছে তার দলের ক্ষমা চাওয়া উচিত ! ১৯৭১ থেকে ২০১৯ একই জামায়াত, নিজেদের খোলস পাল্টেছে শুধু। এই যে জামায়াতের নেতাকর্মীদের একের পর এক থেকে দল থেকে পদত্যাগ, এটাও তাদের কূটকৌশলেরই অংশ মাত্র । নাম বদলে নতুন নামে এলেই কি সব অপরাধ মুছে যাবে ? জেনেবুঝে ত্রিশ লক্ষ মানুষ হত্যায় মদদ দেয়ার অপরাধ কি একবার ক্ষমা চাইলেই মাফ হয়ে যাবে ?

মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে ধর্মের নামে যুদ্ধাপরাধী রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন থাকা উচিত কিনা বিষয়টি এখন বিজ্ঞ আদালতের এখতিয়ার, তবে আদালতের রায়ে জন আকাক্সক্ষা ও জামায়াতের স্বাধীনতা বিরোধী অপকর্ম প্রাধান্য পাবে বলে আশা তো করতেই পারি ।

লেখক : কবি, সাংবাদিক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়