জুয়েল খান : সাপ্তাহিক এর সম্পাদক গোলাম মোর্তোজা বলেছেন, সরকার বা তার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক গোডাউন সরিয়ে নিতো তাহলে এ ধরনের ঘটনার পূনরাবৃত্তি হতো না। যেহেতু সরকার গোডাউন সরাতে ব্যর্থ হয়েছে তাই এর দায় সরকারের ওপরেই বর্তায়। এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, ঢাকা শহরের পুরান অংশের অলি-গলি খুবই চিকন এই বিষয়টা আমাদের দেশের সরকার এরং জনগণ সবাই জানে। বিশেষ করে এই এলাকার মানুষ যে বাসায় থাকে তার পাশের রুমে ছোট একটা কারখান আছে। সেই কারখানার প্রয়োজনীয় রাসায়নিক কাঁচামাল সেখানেই রাখা হয়। সামান্য আগুনে মুহুর্তের মধ্যে ভয়াবহ আকার ধারণ করে এবং অনেক প্রাণহানি হয়। ফায়ার সার্ভিস খুব দ্রুত এসে আগুন নির্বাপণ করবে সেই ব্যবস্থা নেই, কারণ এখানকার গলিগুলো খুবই চিকন। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে রান্নার ও গাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার। এসব গ্যাস সিলিন্ডারের তিন বা চার বছরের একটা নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে। এগুলো সরকারের কোনো সংস্থা তদারকি করে না। এক একটা গাড়ি রাস্তায় চলছে গ্যাস সিলিন্ডারের মতো একটি ‘বোমা’ নিয়ে। যানজটের মধ্যে একটি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হলে, বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। তিনি আরো বলেন, মানুষের নিরাপত্তার জন্য সরকারকে কিছু বাধ্যতামূলক আচরণ করতে হয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সক্রিয় করার জন্য। রাসায়নিক গোডাউনগুলোকে সরানোর বহুবিধ পরিকল্পনার কথা আমরা শুনেছি। প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের মন্ত্রীরা বহুবার এই আশ^াস দিয়েছেন যে, পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক গোডাউন সরানো হবে। বাস্তবতা হচ্ছে এখান থেকে রাসায়নিক গোডাউনগুলো এখনও সরানো হয়নি। এই গোডাউনগুলো সরানোই অনেক প্রতিবন্ধকতা আছে, তবুও এগুলো মেনে নিয়েই সরাতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের জানা ছিলো যে এখানে আগুন লাগলে এই ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটবে, কারণ এখানে রাসায়নিক গোডাউন আছে। এর উদাহরণ হচ্ছে নিমতলীর অগ্নিকা- এবং শতাধিক প্রাণহানি। অবিলম্বে যেকোনো কিছুর বিনিময়ে এখান থেকে রাসায়নিক গোডাউন সরাতে হবে। রাসায়নিক কেমিক্যালের ওপর নির্ভর করে ছোট ছোট যেসব কারখানা গড়ে ওঠেছে সেগুলো বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় নিয়মনীতির মধ্যে এনে বাইরে কোনো নির্দিষ্ট স্থানে ছোট ছোট কারখানা করে দিতে পারে সরকার।
গোলাম মোর্তোজা বলেন, জীবনের মূল্য কখনও আর্থিক সহায়তা দিয়ে শোধ করা যায় না। সরকারের এখন উচিত হবে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা। এই কমিটি প্রতিবেদন দেবে, এতোদিনেও এখান থেকে রাসায়নিক কারখানা সরানো গেলো না এর দায় কার। আরেকটা কমিটি করতে হবে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের লোক দিয়ে। তারা বিচার-বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন দিবে এই কারখানাগুলো কোথায় সরিয়ে নেয়া যায়, সরালে কী হবে, কতো টাকা খরচ হবে ইত্যাদি বিষয়। তবে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন, কিছু অনুদান প্রদানের মতো আচরণ আমরা দেখতে চাই না।
আপনার মতামত লিখুন :