লিয়ন মীর : আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ড. ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেছেন, প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। কিন্তু মহামান্য আদালতের রায় বাংলা ভাষায় লেখা হয় না। এটা অদ্ভুত বিষয় একারণেই যে, বিচারের রায় লেখা হয় দেশের মানুষের জন্য। তারাই যদি আদালতের রায় সঠিকভাবে বুঝতে না পারে, তবে রায় লেখার অর্থ কী? ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কিনা এটা মানুষ বুঝবে কী করে ? তাই আমাদের মায়ের ভাষা, রাষ্ট্রভাষা বাংলায় আদালতের রায় লিখতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা যে দেশে বাস করি তার নাম বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩ অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা এবং অনুচ্ছেদ ৭ অনুযায়ী সংবিধান হলো প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন। আদালত যদি প্রজাতন্ত্রের একটি বিভাগ হয়ে থাকে, তবে আদালতের রায় কেন বাংলায় লেখা হবে না? রাষ্ট্রভাষায় আদালতের রায় লিখতে অসুবিধাটা কোথায়?
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের প্রায় ৯৫ শতাংশ রায় লেখা হয় দেশের মানুষের জন্য। এসব রায় ইংরেজিতে লেখার প্রয়োজন কী? তবে বাকি যে ৫ শতাংশ রায় আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হবে, শুধু সেসব রায় ইংরেজিতে অনুবাদ করে নেওয়া যেতে পারে। এর ফলে মায়ের ভাষায় আমরা আমাদের আদালতের রায়ও পাবো, আবার অন্যদিকে আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ রায়গুলো তাদের আন্তর্জাতিক আমেজও হারাবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিশ্বের অনেক দেশ রয়েছে যেখানে মাতৃভাষাতেই আদালতের রায় লেখা হয়। উদাহরণ হিসেবে, আমরা জার্মানি, জাপান অথবা চীনের কথা বলতে পারি। এসব দেশের আদালত নিজেদের মাতৃভাষাতেই রায় লিখে থাকেন। তবে যেসব রায় সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্র মনে করে যে আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলো তারা অন্য ভাষায় অনুবাদ করে থাকে। একই পদ্ধতি বাংলাদেশে অনুসরণ করা যেতে পারে।
এই আইনজীবী বলেন, আমাদের আদালতে বিচারপ্রার্থীরা বাঙালি, আইনজীবীরা বাঙালি, বিচারপতিরাও বাঙালি, কিন্তু আদালতের রায়ের ভাষা বাংলা নয়। অন্য ভাষায় আইনচর্চার ফলে আমরা আইনশাস্ত্রে স্বাভাবিক সহজতা লাভ করতে পারিনি, পারিনি তেমন কোনো মৌলিক অবদান রাখতেও।
আপনার মতামত লিখুন :